দক্ষ জনশক্তি তৈরি করবে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যাল, বাংলাদেশ। দেশের প্রথম বিশেষায়িত সরকারি ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৬ সালে কার্যক্রম শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির। গেল বছর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূরকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য নিয়োগ দেয় সরকার। গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক সংলগ্ন এলাকায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মিত হবে। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি অনুষদের অধীনে দুটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউট ফর অনলাইন অ্যান্ড ডিসটেন্স লার্নিং নামে একটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসের পাশে একটি ভাড়া বাড়ি নিয়ে বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীতে বিশ্ববিদ্যালয়টি লিয়াজোঁ অফিসে এক সাক্ষাৎকারে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইরফান হক-
প্রশ্ন: ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্দেশ্য কী?
অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর: ২০১২ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনকিম ফোরামে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে ফোরামের চেয়ারম্যান ক্লাউস সোয়েব যখন একটি বই বের করেন, তখন থেকে প্রথম বারের মতো চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এরও আগে আমরা যদি ২০০৮ সালে ফিরে যাই, তখন দেশের জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। তবে তারা ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব’ শব্দটি ব্যবহার করেনি। বলা হয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ব। তাই আমরা আরেকটি শিল্প বিপ্লব হওয়ার আগেই এটার একটা ধারণা পৃথিবীতে দিলাম, যা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশনারি চিন্তার ফল। এরপর ডিজিটাল ইন্ডিয়া হচ্ছে, ডিজিটাল ইংল্যান্ড হচ্ছে। আমরাই ধারণাটি দিলাম। হয়তো এ ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিষয়টি ওঠে আসছে। বিশ্ব এখনও তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের মধ্যেই আছে। তবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে যাওয়ার জন্য যে চারটি বিষয়ের ব্যাপক পরিবর্তন দরকার (ইন্ডাস্ট্রির ধরন, যাতায়াত ব্যবস্থা, সামাজিক ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক অবস্থা) সেগুলো পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। শিগগিরই বিশ্ব চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে ধাবিত হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে পড়াশোনার ধরন পরিবর্তন হবে। আমাদের গতানুগতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও তা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে গতানুগতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন্তর্ভুক্ত করতে অনেক সময় লাগবে। সেই কারণে ২০১০ সালের দিকে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার গতিকে ত্বরান্বিত করতে একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দিকে ধাবিত হয়েছে। কারণ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পৌঁছাতে গেলে দক্ষ জনশক্তি দরকার হবে। এজন্য সরকার ২০১৬ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পাস করে এবং ২০১৮ সালের ৬ জুন আমাকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যে দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন হবে, তা তৈরিতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। একই সঙ্গে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।
প্রশ্ন: শিল্প বিপ্লবের ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে কিছু বলবেন?
অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর: যখন কোনো সমাজে ইন্ডাস্ট্রির ধরণ, যাতায়াতব্যবস্থা, সামাজিকব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে, তখন আমরা তাকে শিল্প বিপ্লব বলি। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত তিনটি শিল্প বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে। এখন আমাদের সামনে হাতছানি দিচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। তবে সামাজিক বিপ্লব অনেকগুলো হয়েছে। সামাজিক বিপ্লব বাদ দিয়ে যদি শিল্প বিপ্লবের দিকে আসি, তাহলে প্রথম শিল্প বিপ্লব হচ্ছে শিল্পের যান্ত্রিকীকরণ এবং বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আবিষ্কার। এর ফলে আধুনিক শিল্পায়নের দিকে গতি শুরু হয় অর্থনৈতিক কর্মকা-ে বিস্ময়কর পরিবর্তন ঘটে এবং মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির নতুন দিগন্ত সূচিত হয়। এটার সঙ্গে শুধু বাংলাদেশ নয়, এ উপমহাদেশের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব হচ্ছে বিদ্যুৎ আবিষ্কার এবং শিল্পকে স্বয়ংক্রিয়করণ। এর আগে ছিল ম্যাকানাইজেশন। দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের পর মেশিন আটোমেট করতে পারত, যা ম্যাস প্রোডাকশনে ভূমিকা রেখেছে। এ বিপ্লবের ফলেও পৃথিবীতে একটি ব্যাপক পরিবর্তন আসে। সেখানেও বাংলাদেশ কিংবা এ উপমহাদেশের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। তৃতীয় শিল্প বিপ্লব থেকে আমরা পেয়েছি সেমি কন্ডাক্টর ট্রানজিস্টার, যার ফল হচ্ছে ইন্টারনেট এবং কম্পিউটার আবিষ্কার। এর ফলে কায়িক শ্রমের বিপরীতে মস্তিষ্ক নির্গত জ্ঞানের বিপ্লব ঘটেছে। শিল্পোৎপাদনের মাত্রা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। তৃতীয় শিল্প বিপ্লব এখনও চলছে, এটা যে শেষ হয়ে গেছে তা না। তবে এখন তৃতীয় শিল্প বিপ্লবে ইন্ডাস্ট্রির ধরন, যাতায়াতব্যবস্থা, সামাজিকব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক অবস্থরা পরিবর্তন হতে শুরু করেছে, যার ফলে ধারণা করা হচ্ছে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আসন্ন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অন্য তিনটি শিল্প বিপ্লবের মতো ব্যাপক পরিবর্তন হবে না। এখানে প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বুদ্ধিমত্তা। এর আগে সেটা ছিল শুধু তথ্য। এখন তথ্যের সঙ্গে বুদ্ধিমত্তা শব্দটি যুক্ত হওয়ায় আমরা তাকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বলছি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, বিগ ডাটা, রোবটিক্স, ন্যানো টেকনোলজি, বায়ো টেকনোলজি, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স, ইন্টারনেট অব থিংস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, ব্লক চেইন টেকনোলজি, মেকাট্রনিক্স, অটোনোমাস রোবট, থ্রিডি প্রিন্টিং, ক্লাউড কম্পিউটিং হচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চালিকাশক্তি। এর সঙ্গে আরও নতুন নতুন বিষয় যুক্ত হতে পারে। তৃতীয় শিল্প বিপ্লবে আমরা এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করছি। এখন আমরা বলছি, ইন্টারনেট অব থিংস, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে আমরা বলব, ইন্টারনেট অব এভরিথিংস। তখন সবকিছুতেই ইন্টারনেট থাকবে।
প্রশ্ন: এটা যে বিশেষায়িত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, তা কীভাবে বুঝা যাবে?
অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর: আমাদের এখানে সবকিছু ডিজিটালি হচ্ছে। আমাদের পরীক্ষা পদ্ধতি, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি, অ্যাসাইনমেন্টসহ সব কার্যক্রম আমরা অনলাইনে করছি। আমাদের এখানে প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ডোমেইনে একটি করে ই-মেইল আইডি প্রদান করা হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে একটি করে ভার্চুয়াল মেশিন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাউড সার্ভারে ২০০ জিবি হোস্টিং সুবিধা। আপনি লক্ষ্য করে থাকবেন, সম্প্রতি বুয়েটের শিক্ষার্থীরা তাদের পরীক্ষার খাতা অ্যানোনিমাস করার দাবি করেছে। শুধু বুয়েট নয়, দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতায় তাদের রোল নম্বর লেখা থাকে, যা সহজে আইডেন্টিফাই করা যায়। কিন্তু আমরা শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের খাতা অ্যানোনিমাস করেছি, যার পুরোটাই সফটওয়ারের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এ পদ্ধতি বাংলাদেশে আমরাই প্রথম চালু করেছি। আমরাই বাংলাদেশের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে শিক্ষার্থীদের আউটকাম বেইজড শিক্ষা দিচ্ছি। আমরাই প্রথম বাংলাদেশে ম্যাসিভ ওপেন অনলাইন কোর্স (মুক) চালু করেছি, এরই মধ্যে আমরা একটি কোর্স ডিজাইন করেছি, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে রেজিস্ট্রেশন করে কোর্স সম্পন্ন করে সনদ নিতে পারবে। এখানে বাংলা ভাষাভাষীদের কথা বিবেচনা করে এটা বাংলায় করেছি। আমরা অনলাইনে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম শিক্ষা পদ্ধতি চালু করেছি। এখানে আমাদের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীর একটি করে প্রোফাইল রয়েছে। তারা এ সিস্টেম ব্যবহার করে চ্যাট করছে, কোনো কিছু না বুঝলে নিজেদের মধ্যে আলাপ করছে, তাদের ক্লাসের উপস্থিতি এখানে থাকে। আমি আমার অফিসে বসে এসবের তদারকি করছি। সম্প্রতি বুয়েটের শিক্ষার্থীরা দাবি করছে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের একটি ইউনিক ই-মেইল আইডি দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের এখানে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি করে ইউনিক ই-মেইল আইডি রয়েছে। বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে সাধারণত বাংলা পড়ানো হয় না। আমরা আমাদের এখানে বিজ্ঞান বিভাগে বাংলা বিষয় বাধ্যতামূলক করেছি। কারণ, মায়ের ভাষা না জানলে শিক্ষার্থীরা বেশি দূর এগোতে পারবে না। আগে মায়ের ভাষা বাংলা জানতে হবে, তারপর অন্য ভাষা। প্রযুক্তি কেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও আমরা আমাদের এখানে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বাধ্যতামূলক করেছি। আমাদের পড়াশোনার সবকিছু অনলাইন পদ্ধতিতে। শিক্ষক তার লেকচার অনলাইনে দিয়ে দিচ্ছেন, ছাত্ররা সেটি অনলাইনে দেখছে। উপস্থিতিও অনলাইনে। অনলাইনে আমাদের কোর্সও চালু রয়েছে।
প্রশ্ন: স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে?
অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর: এখন দুইজন স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি। আরও ১০ জন স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এরই মধ্যে এ নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই নিয়োগ দেওয়া হবে। এছাড়া বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েকজন অস্থায়ী শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।
প্রশ্ন: শিক্ষক নিয়োগে কোনো বিষয়টি বেশি প্রাধান্য দেবেন?
অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর: আমাদের রিলেটেড সাবজেক্টের শিক্ষক বাংলাদেশে নেই। তাই আমরা কম্পিউটার সায়েন্স, ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এসবের সঙ্গে ব্লেন্ডেড করে যারা মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি করেছে-এ ধরনের শিক্ষকদের আমরা নেওয়ার চেষ্টা করব। আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, বিদেশি শিক্ষক নিয়ে আসা। দেশি শিক্ষক নিতে পারি, সেটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই হবে। বিদেশি শিক্ষক আনার বড় সমস্যা হচ্ছে, তাতে বেতন দিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কে। যদি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে কোনো নীতিমালা করা হয়, তাহলে আমাদের জন্য বিদেশি শিক্ষক নিয়োগ খুবই সহজ হবে।
প্রশ্ন: এবারের বাজেট পেশের সময় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার মান বাড়াতে জাপানের অনুকরণে বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার প্রস্তাব করেছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর: এ প্রস্তাবে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক খুশি হয়েছি। এটা করতেই হবে আমাদের। প্রতিক্রিয়া থাকবেই। তবে আমরা যদি বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, আমরা যদি চাই ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পৌঁছাব, তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যা বলছেন তাই করতে হবে।
প্রশ্ন: দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আপনার মতামত কী?
অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর: এটা ৪ হাজার ৫০০ বছরের পুরোনো। তাই এটাকে ভেঙে ফেলতে হবে। সম্পূর্ণ নতুনভাবে সাজাতে হবে। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়েছিল প্রথম শিল্প বিপ্লবের জন্য। দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের জন্য এটা কিছুটা প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু তৃতীয় শিল্প বিপ্লব থেকে এটা আর প্রযোজ্য হচ্ছে না। তৃতীয় শিল্প বিপ্লব চলে যাচ্ছে। তারপরও আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন করতে পারিনি। আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলছি কিন্তু তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের শিক্ষাব্যবস্থাও আমাদের দেশে সেভাবে আনতে পারিনি। তাহলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের শিক্ষাব্যবস্থা আমরা কীভাবে আনব? আমাদের যে শিক্ষাব্যবস্থা তা প্রথম ও দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের উপযোগী জনগোষ্ঠী তৈরি করার জন্য। তৃতীয় এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য এটা নয়। এখন সেটি কে করবে, তা আমাদের নীতি-নির্ধারকদের ঠিক করতে হবে।
প্রশ্ন: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে আপনার মত কী?
অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর: একজন শিক্ষার্থী ৮ থেকে ১০টার বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে না। এজন্য সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে, তাই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। এটার কনসেপ্ট হচ্ছে আমেরিকায় বা উন্নত বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে ভর্তি হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে একটি প্রতিষ্ঠান পরীক্ষাটি নিয়ে নেয়, সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয় না। আমেরিকাতে হাজার হাজার বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে কিন্তু তারা কেউ কোনো ভর্তি পরীক্ষা নেয় না। কেন্দ্রীয়ভাবে একটি পরীক্ষা হয় বিশ্বব্যাপী, যেটাকে আমরা বলি ‘স্যাট’, তা আন্ডার গ্র্যাজুয়েটে ভর্তি হওয়ার জন্য। আর মার্স্টাসের বা তার ওপরের জন্য ‘জিআরই’ কিংবা ‘জিম্যাট’ রয়েছে। ওই পরীক্ষার রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের স্ট্যান্ডার্ডে শিক্ষার্থী ভর্তি করে। ঠিক একই ধারণা আমাদের দেশে চালু করা প্রয়োজন। ভর্তি পরীক্ষাটা কোন প্রতিষ্ঠান নিয়ে নেবে। সেই পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় তার মান অনুসারে একটি বেইজ মার্ক ঠিক করে দেবে এবং বলবে-এ মানের শিক্ষার্থীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করবে। ফলে আগে যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের মতো করে ভর্তি প্রসেসটা করতো এখন সেভাবে করবে। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন যেমন খর্ব হবে না, তেমনি শিক্ষার্থীরাও নিজ এলাকা থেকে পরীক্ষাটা দিতে পারবে। এটাই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা। আমরা এখনে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার কথা বলছি না কিন্তু। দুটোর মধ্যে অনেক পার্থক্য। এবার থেকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্বতিতে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে। গুচ্ছ পদ্ধততে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে-ইঞ্জিনিয়ারিং একটি গুচ্ছ, মেডিকেল একটি গুচ্ছ, কৃষি গুচ্ছ আরেকটি, বিজ্ঞান আরেকটি প্রভৃতি-এটা ভুল ধারণা। যে ধারণাটি পৃথিবীতে নেই সেটি নিয়ে কেন চিন্তা করছি, সেটা জানি না। এটা সলিউশনের চেয়ে প্রবলেম বেশি ক্রিয়েট করবে।
প্রশ্ন: আপনি মূলত বুয়েটের একজন অধ্যাপক। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। এর আগেও দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন। কোনোটি সবচেয়ে বেশি এনজয় করেন- উপাচার্য না অধ্যাপনা?
অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর: আমি একজন শিক্ষক। শিক্ষকতাকে কেউ যদি পেশা হিসেবে নেয় তাহলে তিনি শিক্ষকতা করতে পারবেন না। শিক্ষকতা নেশা হতে হবে। তাই আমি সব সময় শিক্ষকতাকে পছন্দ করি। বুয়েটে পড়াতে পারলে ভালো লাগত। এখনও আমি সময় পেলে বুয়েটে ক্লাস নিতে যাই।
প্রতিবেদক: আপনাকে ধন্যবাদ।
অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর: আপনাকেও ধন্যবাদ।