সাক্ষাৎকারে উপাচার্য
জ্ঞানচর্চা ও গবেষণাই হবে বশেফমুবিপ্রবি’র মুখ্য বিষয়
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৫:০৩ PM , আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:৪৪ PM
জামালপুর জেলা শহর হতে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে মেলান্দহ উপজেলায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মিত হবে। এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, অবকাঠামো ও স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে জামালপুর সদরে বঙ্গবন্ধু আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে দুইটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। গেল বছরের শেষের দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেয় সরকার। সম্প্রতি রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ বিশ্ববিদ্যালয়টি লিয়াজোঁ অফিসে একান্ত সাক্ষাৎকারে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইরফান হক-
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রেক্ষাপট কী?
অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ: উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রসরমান বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষায় জাতীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জীবনদর্শন এ দেশের মানুষের স্মৃতিতে চির অম্লান রাখার লক্ষ্যে জামালপুরে বশেফমুবিপ্রবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জ্ঞানচর্চা, সৃজনশীল উদ্ভাবন ও গবেষণায় উন্নত বিশ্বের সমমানের শিক্ষা পদ্ধতি হবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সঙ্গতকারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে হতে হবে একটি ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলের সঙ্গে বৈশ্বিক জ্ঞান সাধনার যোগসূত্র। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে মহান জাতীয় সংসদে ২৮ নভেম্বর ২০১৭ সালে একটি আইন পাস হয়।
প্রশ্ন: উপাচার্য হিসেবে কখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন?
অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ: আমি মূলত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওলজি অ্যান্ড মাইনিং বিভাগের অধ্যাপক। গেল বছরের শেষের দিকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে আমাকে নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেন। ১৯ নভেম্বর আমি উপাচার্য পদে যোগদান করি। যোগদানের সময় আমার কোনো জনবল কিংবা বসার জায়গাও ছিল না। পরের দিন আমি ইউজিসিতে গেলে তারা আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এরপর আমি ধানমন্ডিতে একটি লিয়াজোঁ অফিস নিয়ে সেখান থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করি। এর মধ্যে আমার ওপর অর্পিত ক্ষমতাবলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম জরুরি ভিত্তিতে শুরু করার জন্য পরিচালক-রেজিস্ট্রারসহ কয়েকটি পদে অস্থায়ীভাবে জনবল নিয়োগ দিয়েছি।
প্রশ্ন: চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেটির কী অবস্থা?
অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ: বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, অবকাঠামো ও স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জামালপুর সদরেই বঙ্গবন্ধু আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে দুইটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিন বছরের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে চুক্তিপত্র সম্পাদন করা হয়েছে। এখানে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে চারটি বিভাগে (গণিত, সিএসই, বিজনেস স্টাডিজ ও সমাজকর্ম) মোট ১৩৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
প্রশ্ন: আগামীতে শিক্ষা কার্যক্রম বাড়ানো হবে কিনা?
অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ: বর্তমানে চারটি অনুষদে চারটি বিভাগ রয়েছে। প্রতিটি বিভাগে ৩০ জন করে ভর্তি করা হয়েছে। আগামীতে আরও ৫টি বিভাগ খোলার জন্য ইউজিসিতে আবেদন করেছি। সেখান থেকে দুইটি বিভাগ খোলার জন্য ইউজিসি অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো ত্রিপলি এবং আরেকটি এনভায়েরমেন্টাল সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। আগামীতে এ দুটি বিভাগে ভর্তি করা হবে। আগামীতে সব বিভাগে ৩০ জন করে ভর্তি করানো হবে। এছাড়া কোটায় চারজন করে অতিরিক্ত ভর্তি করা হবে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে গেলে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, তবে আপাতত না।
প্রশ্ন: একাডেমিক কার্যক্রমের কী অবস্থা?
অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ: চলতি বছরের ৩১ মার্চ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করি। পরবর্তীতে ১৪ জুলাই সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু করে ওই মাসেই শেষ করেছি। ঈদসহ বিভিন্ন ছুটি সংক্ষিপ্ত করে এটা সম্ভব হয়েছে। আবার পহেলা আগস্ট থেকে আমরা দ্বিতীয় সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করি। আমাদের প্ল্যান হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দ্বিতীয় সেমিস্টার শেষ করা। যাতে পহেলা জানুয়ারি থেকে আবার নতুন সেমিস্টার শুরু করতে পারি। এরই মধ্যে আমরা চার বছরের একাডেমি ক্যালেন্ডার তৈরি করেছি। আমরা প্রতি বছরের পহেলা জানুয়ারি এবং পহেলা জুলাই থেকে নতুন সেমিস্টার শুরু করব। এ ছয় মাসের মধ্যে পরীক্ষাসহ সব কিছু শেষ করব। আমরা কোনো সেশনজটে থাকব না। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে সারাজীবনের জন্য একটি সেশনজটমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রশ্ন: স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে অগ্রগতি কতদূর?
অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ: শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ৫০০.৮৬ একর ভূমি অধিগ্রহণের অনুমতি পাওয়া যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে জামালপুর জেলা প্রশাসক ৫০০.৮৬ একর ভূমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। পরে আমরা প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার ডিপিপি তৈরি করে ইউজিসিতে সাবমিট করেছিলাম। তারা কিছু কারেকশান করে সেটি আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। পরে বিষয়টি নিয়ে সেখানে একটি সভা হয়েছে। আশা করছি, নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের ডিপিডি পাস হয়ে যাবে। ডিপিডি পাস হলে আমরা পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করব।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ: আমি মূলত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। আমার জন্য এটা একটা বড় প্রাপ্তি যে, বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী ও প্রধানমন্ত্রীর মায়ের নামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছি। আমি খুবই গর্বিত। এজন্য আমি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যে দিকগুলো আছে, সেটাকে কতটা উন্নয়ন করে একটা আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিণত করা যায় এবং বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা যায়। কারণ আমাদের দেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, কিন্তু মানের দিক থেকে সব এক নয়। মূলত আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিচিং ব্যাসড হয়ে গেছে। এখানে ছাত্র ভর্তি হবে, অনেক বিভাগ হবে সেখানে শিক্ষকরা শুধু ক্লাস নিবেন আর পড়াবেন। কিন্তু গবেষণাটা খুবই কম ডেভলপ হচ্ছে। এটার অন্যতম করার গবেষণার অনুদানটা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। সাইন্সে গবেষণা করতে গেলে বিভিন্ন কেমিক্যাল-যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হয়। সেগুলো আমাদের দেশে পর্যাপ্ত না। এসব অনেক বেশি ব্যয়বহুল যা আমাদের মতো দরিদ্র দেশে কেনা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে আমি চেষ্টা করব, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি করা। বিদেশের অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের চুক্তি করতে আগ্রহী। তারা যন্ত্রপাতি কিংবা স্কলারশীপ দিতে আগ্রহী। এসব চেষ্টা আমার অব্যাহত থাকবে। এটাকে আমি বেশি প্রাধান্য দিব। আমার শিক্ষক এবং ছাত্ররা বিদেশে ট্রেনিং কিংবা ডিগ্রি নেওয়ার ব্যাপারে আমি সবসময় লক্ষ্য রাখব। তাহলে এটা বিশ্বমানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে।
প্রশ্ন: দেশে বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা কেমন হবে?
অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ: বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি বিদ্যাপীঠ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। আলোচ্য প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষার সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে রূপকল্প- ২০২১ ও ২০৪১ ঘোষণা করেছে। এ ঘোষণায় ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিপুল জনসংখ্যাকে দরিদ্রসীমার উপরে নিয়ে আসা সরকারের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। এ বিপুল জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে না পারলে সরকারের ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের সন্তানদের বাইরে গিয়ে লেখাপড়া করা ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। অবহেলিত ও স্বল্প শিক্ষিত বৃহৎ জনগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষা এবং নারী শিক্ষার প্রসার ও জনস্বার্থের দিক বিবেচনা করে প্রকল্পটি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে অতীব গুরুত্ব প্রদান করেছে। বাংলাদেশের এ বিপুল জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে এ বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, গোত্র ও শ্রেণি নির্বিশেষে এ বিশ্ববিদ্যালয় হবে সবার জন্য উন্মুক্ত।
প্রশ্ন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কিছু বলবেন?
অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ: আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ছিলাম। ১৯৮৩ সালে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। তখন আমি সক্রিয় রাজনীতিতেও জড়িত ছিলাম। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করেছি। পরে বিদেশে গিয়ে ডিগ্রি নিলাম। বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলাম, একটা হলের প্রভোষ্ট ছিলাম, শিক্ষক সমিতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। প্র্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের কো-কনভেইনার ছিলাম। চাকরি জীবনের শুরুতেই আমি নির্বাচিত লেকচারার সিন্ডিকেট মেম্বার ছিলাম। দুইবার সিনেট মেম্বার ছিলাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসের প্রশাসকের দায়িত্বেও ছিলাম আমি। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল, সেটা হলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদ গঠন করা। সেটা ছিল ২০০০ সালের জাতীয় নির্বাচনের পরের ঘটনা। ক্রাইসিস মুহূর্তে আমরা ১৫ জন মিলে এটা গঠন করি। পরবর্তীতে আমি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি নির্বাচিত হয়। এখনও আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে আছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির মেয়াদ আমার বছর পাঁচেক আছে। গেল বছর হঠাৎ করেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অফারটা পেলাম। বঙ্গমাতার নামে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি হিসেবে আমাকে প্রধানমন্ত্রী চয়েজ করেছে-এজন্য আমি কৃতজ্ঞ।
প্রশ্ন: দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ: দেশে এখনও পর্যন্ত ভালো শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এর কারণ হচ্ছে তারা সঠিক সুযোগটা পাচ্ছে না। ধরেন একটা ছেলে জিওলজি অ্যান্ড মাইনিং বিভাগ থেকে ভালো ফল নিয়ে পাশ করেছে। তাকে তো জিওলজি ওয়ারিয়েন্টেড চাকরি পেতে হবে, তাহলে তো সে স্কিলড হবে। কিন্তু সে সুযোগটা তো আমাদের দেশে নেই। ফলে সে ওষুধ কোস্পানিতে চাকরি করছে কিংবা ব্যাংকে ডুকছে। ফলে তার মেধাটা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তার প্রফেশনাল জায়গায় মেধাটা যখন কাজে লাগাতে পারবে, তখন উন্নয়নটা হবে। ৮০-৯০ দশকে দেশে প্রচুর কলেজ হয়েছে। সেসব কলেজে যারা পড়াশুনা করেছে, তাদের শিক্ষাব্যবস্থাটা এত খারাপ ছিল যে, ছিল না শিক্ষক ও টিচিং সামগ্রী কিন্তু ডিগ্রি পেয়েছে। বর্তমানে ব্যাঙের ছাতার মতো অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, তার অধিকাংশের কোনো মান নেই। এর ফলে সেখান থেকে যারা বের হচ্ছে আল্টিমেটলি তারা লবিংয়ের মাধ্যমে চাকরিও পাচ্ছে, তাতে তারা তাদের সেই জায়গাগুলোতে গিয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলে তারা ভালো কিছু করতে পারছে না। আল্টিমেটলি তারা যখন প্রমোশন পেয়ে উপরে উঠছে, তখন তাদের স্কিলটা ডেভলপ করতে পারছে না। এজন্য দেখছি আমরা, দেশে উপরের লেভেলে স্কিল লোকজনের প্রচণ্ড অভাব রয়েছে। তাই বলতে চাই, আমাদের দেশে টেকনোলজিক্যাল সাইটটা ডেভলপ করতে হবে। গতানুগতিক লেখা-পড়া যেটা, সাধারণ সাবজেক্টগুলো কমিয়ে শিক্ষার্থীদের টেকনোলজিক্যাল সাইটে নিয়ে আসতে হবে। সেটা ডিপ্লোমা কিংবা ভোকেশনাল টেনিংও হতে পারে। বিদেশে এসবের চাহিদা বেশি।
প্রতিবেদক: আপনাকে ধন্যবাদ।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।