২৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:৪৯

ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে কিসের এত টালবাহানা?

আবু আল মুরসালিন মুন্না

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার পর সারাদেশের ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলো জেগে উঠেছে। থেমে নেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও। বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র সংসদ সচলে কথা বলছে বিভিন্ন ছাত্রসংঠন। জানাচ্ছে তাদের দাবীসমূহ। নেতৃত্ব গড়ে উঠতে ছাত্রসংসদ যে একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে তা তাদের বক্তব্যের মূলে উঠে আসছে। ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে কথা বলেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল মুরসালিন মুন্না। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রতিনিধি- সৌম্য সরকার 

দ্যা ডেইলী ক্যাম্পাস: ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল কি ভাবছে?
মুন্না: ছাত্রসংসদ নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ভাবনা সুদূরপ্রসারী। কেননা আমাদের সকলের জানা আছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদকে বলা হয় নেতৃত্ব তৈরির কারখানা। এসব ছাত্র সংসদে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, পরবর্তী সময়ে দেশ ও জাতির নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের অনেকেই এবং বর্তমানেও অনেকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। রাজনীতির উজ্জ্বল তারকা হিসেবে গড়ে ওঠার প্রথম সোপান ছিল এসব ছাত্র সংসদ।

দ্যা ডেইলী ক্যাম্পাস: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মুহুর্তে ছাত্রসংসদ নির্বাচন কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
মুন্না: সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদ নির্বাচন প্রয়োজন, তবে আমি বলবো বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচন অতি দ্রুত ও জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজন। আমার মনে হয় রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নামকরণের পর থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে অবহেলিত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বাংলাদেশের বুকে পরিচিত হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার পর উপাচার্য মহোদয়দের স্বৈরাচারী ও খামখেয়ালি আচরণ, শিক্ষকদের উপাচার্য মহোদয়কে কেন্দ্র করে পক্ষে-বিপক্ষের রাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়কে খাদের কিনারায় নিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় বহু সমস্যায় জর্জরিত, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এত বছর পরেও নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় বহনকারী মুলফটক। নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী। নেই পর্যাপ্ত একাডেমিক ভবন, আবাসিক হল(যে তিনটি হল চালু তাতেও সরকারি ভর্তুকি নেই,হলের ডাইনিং আজ চালু ত কাল বন্ধ), নেই কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যাংক বুথ, নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে বই সেন্ট্রাল ও বিভাগীয় সেমিনার লাইব্রেরীতে, নেই পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে লেগে আছে সেশনজট। আরো অনেক সমস্যায় জর্জরিত এই বিশ্ববিদ্যালয়। এই সকল সমস্যা সমাধান করে বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশের বুকে একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে হলে বেরোবি ছাত্রসংসদ সবার আগে দরকার।

দ্যা ডেইলী ক্যাম্পাস: এই মুহুর্তে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আপনাদের অবস্থান কেমন?
মুন্না: এই মূহুর্তে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের অবস্থান সাংগঠনিকভাবে কিছুটা দুর্বল। ছাত্রত্ব শেষ হওয়া ছাত্রদের হাতে ছাত্রদলের নেতৃত্ব। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এক যুগেরও বেশি ক্ষমতার বাইরে, এসব কারণের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক সহবস্থান না থাকা এই সাংগঠনিক দূর্বলতার কারণ।এই সাংগঠনিক দূর্বলতা সাময়িক যদিও।

দ্যা ডেইলী ক্যাম্পাস: ছাত্রদলের দলীয় কর্মসূচিগুলো পালন করতে আপনাদের কোন বাধা পেতে হচ্ছে কিনা?
মুন্না: বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন-নীতির নামই রাজনীতি। রাজনীতিতে আদর্শিক দর্শনের ভিন্নতার সাথে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সকলেই চায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। এই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নেতৃত্ব ছাত্র রাজনীতি থেকেই শিখতে হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো এখন শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় সরকার দলীয় ছাত্র রাজনীতি চর্চার সুযোগ পাচ্ছে। ছাত্র রাজনীতির ভিত্তি মজবুত হয় প্রতিপক্ষের সমালোচনায়। কিন্তু সেইরকম পরিবেশ এখন পাওয়া যায়না বললেই চলে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় সহাবস্থান আর দেখা যায় না বলেই হয়ত ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের রাজনৈতিক চর্চা করতে পারছে না। তাই ছাত্রদলও তাদের কর্মসূচিগুলো পালন করতে পারে না সঠিকভাবে। 

দ্যা ডেইলী ক্যাম্পাস: ছাত্রসংসদ নির্বাচন হলে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে কোন প্যানেল দেওয়া হবে কিনা?
মুন্না: ছাত্রসংসদ নির্বাচন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হলে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত হলেই আমরা ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ছাত্রদলের পক্ষে অবশ্যই ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ আলোচনা করে পূর্ণাঙ্গভাবে প্যানেল দিবো।

দ্যা ডেইলী ক্যাম্পাস: ছাত্রসংসদ নির্বাচনে কি ধরণের প্রতিনিধি চান আপনারা?
মুন্না: ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ছাত্রদের অধিকার আদায়ে কাজ করতে পারবে এমন ছাত্রনেতৃত্ব চাইবো,।অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রত্বের পরিচয় বহনকারী হতে হবে সেই সাথে নিয়মিত মাস্টার্স কোর্স শেষ সেমিস্টারের রেজাল্ট পাওয়া কেও ছাত্রসংসদ নির্বাচনে প্রতিনিধিত্ব করতে না পারে এটাই চাইব।

দ্যা ডেইলী ক্যাম্পাস: ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আপনাদের চাওয়া কি?
মুন্না: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি আসলে শিক্ষার্থীদের জন্যে? এটা সকল শিক্ষার্থীদের মতো আমারো প্রশ্ন। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজের স্বার্থ হাসিল করার প্রশাসন, এই প্রশাসনের কাছে চাইতে হবে কেনো? এই প্রশাসন শিক্ষক সমিতির, কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতির নির্বাচন করতে পারে সময় মতোই। তাহলে ছাত্রসংসদ ফি এর টাকা শিক্ষার্থীদের থেকে আদায় করা সত্ত্বেও ছাত্রসংসদ নির্বাচন না করার কারণ কি? কিসের এত টালবাহানা ছাত্রসংসদ নিয়ে? সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদ চালু ছিলো যদিও মাঝখানে দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিলো। এখন আগামী ১১ মার্চ ডাকসুর নির্বাচন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ আবারো চালু হতে যাচ্ছে যখন, তখন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ কেন নয়।