‘ফরগেটিং কার্ভ’ থিওরিতে পড়াশোনা, প্রথমবারেই জজ হলেন ঢাবির নিশাত

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের ১৭তম (বিজেএসসি) নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী জজ পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন নিশাত মনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এবারের সুপারিশপ্রাপ্ত সহকারী জজ পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ২৯তম স্থান অধিকার করেছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি তার সাফল্য ও শিক্ষাজীবন নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন। তার কথাগুলো শুনেছেন—আমান উল্যাহ আলভী।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ১৭তম বিজেএস পরীক্ষায় আপনিও সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। আপনাকে অভিনন্দন। আপনার জন্ম, শৈশবকাল সম্পর্কে জানতে চাই।
নিশাত মনি: আমার জন্ম নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার নাউতারা ইউনিয়নে। আমি ডিমলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং রংপুর সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করি। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে আইন বিভাগে ভর্তি হই।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখন তো আপনি সহকারী জজের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। আপনার এ অনুভূতিটা সম্পর্কে বলুন।
নিশাত মনি: এই সাফল্যে নিজেকে অনেক ভারমুক্ত লাগছে যেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। দীর্ঘ পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের পর এই অর্জন আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অনুভূতিগুলোর একটি। বাবা-মায়ের হাসিমুখের কারণ হতে পেরেছি এর বেশি জীবনে কিছু চাইনি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিচারক হওয়ার স্বপ্নদ্রষ্টা কে, কীভাবে এ স্বপ্নের শুরু হয়েছিল?
নিশাত মনি: বিচারক হওয়ার স্বপ্ন শুরু থেকে ছিল না আমার। আমি ঢাবির আইন বিভাগে পড়তে চেয়েছিলাম এবং আইন নিয়ে কাজ করতে চেয়েছি। এক্ষেত্রে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার বিকল্প কিছু দেখতাম না। কিন্তু একজন নারী হিসেবে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে আইনজীবী পেশায় অনেক বাধা এবং চ্যালেঞ্জিং মনে হওয়ায় আমি বিচারক হতে চেয়েছি।
আমার বিচারক হওয়ার একক কোন স্বপ্নদ্রষ্টা নেই। মূলত উচ্চ আদালতের বিজ্ঞ আইনজীবীদের সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান এবং বিচারপতিদের অনবদ্য রায় পড়ে আইনের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিচারক হওয়ার পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি?
নিশাত মনি: আমার বাবা মা ছোটবেলা থেকে আমাকে সর্বতোভাবে সাহায্য করেছেন। তাই বিচারক হওয়ার পেছনে তাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। এছাড়া আমার শিক্ষকদের, বন্ধুদের অবদানও অনস্বীকার্য।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার সাফল্যের পেছনে কোন বিষয়গুলো কাজ করেছে?
নিশাত মনি: নিয়মিত অধ্যবসায়, সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা, আত্মবিশ্বাস,মানসিক দৃঢ়তা। অনেক চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি হয়েও হাল না ছাড়ার মানসিকতা। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর এক ভিডিওতে তাকে বলতে শুনেছিলাম ‘ট্যালেন্ট উইদাউট হার্ডওয়ার্ক ইজ নাথিং’। এই কথাটা আমার মনে গভীরভাবে দাগ কেটেছিলো। কারণ আমি বিশ্বাস করতাম বিখ্যাত ইনস্টিটিউশনে পড়াশোনা করি বলে সাফল্য এমনি এমনি আমাকে ধরা দেবে না।
আরও পড়ুন: আম্মা সবসময় বলতেন— ‘তুই যেন আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারিস জজ হয়েছিস’
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন, দিনে কত ঘণ্টা করে পড়ালেখা করেছেন?
নিশাত মনি: গতানুগতিক পদ্ধতির বাইরে গিয়ে প্রস্তুতি নেয়ার চেষ্টা করেছি। হারমান এবিংহাউসের ফরগেটিং কার্ভ থিওরি বিশ্লেষণ করে পড়ার চেষ্টা করেছি যেহেতু আইনে অনেক বেশি খুঁটিনাটি পড়াশোনা করতে হয় এবং খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঘণ্টা ধরে পড়াশোনা করিনি, প্রতিদিন বিজেএস’র সিলেবাসের ১০টা সাবজেক্ট পড়ার চেষ্টা করেছি এর পাশাপাশি মাস্টার্সের পড়ার জন্যও সময় বরাদ্দ ছিল।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কতবার ভাইবা দিয়েছেন এবং কততম ভাইভাতে সফল হয়েছেন?
নিশাত মনি: ১৭তম বিজেএস পরীক্ষা আমার প্রথম কোনো চাকরির পরীক্ষা এবং প্রথমবার ভাইভা দিয়েই মাস্টার্স পরীক্ষার রেজাল্টের আগেই আমি জজ হতে পেরেছি এবং ২৯তম হয়েছি।
আরো পড়ুন: আগ্রহ থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনা, প্রথমবারেই সহকারী জজ ইবির জয়
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিচারক হিসেবে দেশের জন্য আপনি কি অবদান রাখতে চান?
নিশাত মনি: বিচারিক হিসেবে অবশ্যই ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করতে চাই এবং দেশের বিচার ব্যবস্থায় ইতিবাচক অবদান রাখতে চাই। সকল নাগরিকের জন্য সমান ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করতে চাই, যাতে মানুষ ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা রাখতে পারে। পাশাপাশি, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকব, যেন বিচার বিভাগ রাজনৈতিক কিংবা আমলাতান্ত্রিক প্রভাবের বলয়ে না থাকে এবং বিচারপ্রার্থীরা কোন ভোগান্তির স্বীকার না হয়। দ্রুত ও কার্যকর বিচার নিশ্চিত করে বিচার ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং ন্যায়ের আলোকে একটি সুবিচারভিত্তিক সমাজ গঠনে অবদান রাখতে পারা আমার জীবনের মূল লক্ষ্য।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভাইবার সময় কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে, আপনি কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
নিশাত মনি: প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক দৃঢ়তা ভাইভায় ভালো করার মূলমন্ত্র। আমি মাস্টার্সের থিসিস করার পাশাপাশি ভাইভার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এক্ষেত্রে প্রিলিমিনারি এবং লিখিত পরীক্ষার পড়াশোনা একবার রিভাইজ করেছি এবং সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় সম্যক ধারণা নিয়ে ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি হয়েছিলাম।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
নিশাত মনি: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্য শুভকামনা রইলো।