ভারতবিরোধী না, বাংলাদেশপন্থী মানুষ তৈরির কারখানা হবে ইনকিলাব মঞ্চ

শরিফ ওসমান হাদি
শরিফ ওসমান হাদি  © টিডিসি ফটো

গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী হাসিনার পতনের পর সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ হিসেবে আবির্ভূত হয় ইনকিলাব মঞ্চের। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব এই সংগঠনটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শরিফ ওসমান হাদি এই প্লাটফর্মের মুখপাত্র। তবে হাদি স্বপ্ন দেখেন, ইনকিলাব মঞ্চ ভারতবিরোধী নয়, বরং বাংলাদেশপন্থী রাজনৈতিক সচেতন মানুষ তৈরির কারখানা হবে। সম্প্রতি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি তার স্বপ্নের কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক তাওসিফুল ইসলাম-

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইনকিলাব মঞ্চ একটা বিশেষ সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের পরেই এই সংগঠন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছেন নাকি তার আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল এরকম একটা সংগঠন করার?

ওসমান হাদি: ইনকিলাব মঞ্চ- এরকম একটা প্ল্যাটফর্ম হওয়া উচিত এই চিন্তা ৫ আগস্ট রাত থেকে। এর আগে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম করার চেষ্টা করেছিলাম। যেমন গত ঈদের রাতে আমরা 'ঈদের মিছিল' নামে একটা কালচারাল একটিভিটি করেছিলাম। এমনিতেই আমরা ভাবছিলাম কিভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে রিলেট করে কালচারাল একটিভিটি করা যায়। কিন্তু ইনকিলাব মঞ্চ নাম নিয়ে করবো সেটা ৫ আগস্ট মিছিল করে রাতে বাসায় ফিরবার পরে মনে হয়েছে। কারণ মনে হয়েছিল, সবাইকে কালচারাল কাজের মধ্য দিয়ে এক রাখতে হবে। যেটা বড় রাজনৈতিক দলগুলো করতে পারতো। বিএনপি পারতো। জামায়াত পারতো। শাহবাগ ১৫ দিন দখল করে রাখা। গান-বাজনা করা। মানুষকে একত্রে রাখা। বিপ্লবের পরে যেটা খুব জরুরি। কিন্তু তারা কেউ করেনি। তাই আমরা ইনকিলাব মঞ্চ করলাম। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নামকরণটা কীভাবে হলো? 

ওসমান হাদি: এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। আমরা যখন বিশেষ করে ৩-৪ আগস্ট রাস্তায় তখন আমরা 'ইনকিলাব-জিন্দাবাদ' স্লোগানটা বারবার দিচ্ছিলাম। যখন হাসিনা পালিয়ে গেছে, তখন রাস্তায় যে স্লোগানটা সবচেয়ে বেশি দিয়েছি সেটা হলো 'ইনকিলাব-জিন্দাবাদ'। মানুষও খুব আপন করে নিয়েছিল এই স্লোগানকে। এই শব্দটা আমাদের খুব পরিচিত। তখন মনে হল এটাকে কেন্দ্র করে আগানো যায়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইনকিলাব মঞ্চের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি? 

ওসমান হাদি: বাংলাদেশের প্রতি যে কোন দেশের সমস্ত রকমের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য যে কালচারাল লড়াইটা দরকার সেটা ইনকিলাব মঞ্চ করবে। ইনকিলাব মঞ্চ জুলাই  অনুপ্রাণিত একটা সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম। যার কাজ হল স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে কালচারাল লড়াই জারি রাখা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি বলছেন যেকোনো দেশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলবেন। কিন্তু আপনাকে প্রায় সময়ই দেখা যায় ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলতে। অন্য কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলতে খুব একটা দেখা যায়নি। 

ওসমান হাদি: অন্য কোন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দেখা যায়নি তার কারণ গত ১৭ বছরে বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে ব্যর্থ করেছে ভারত। বাংলাদেশ তার ৯০ ভাগের বেশি সীমান্ত শেয়ার করে ভারতের সাথে। অনেকেই আমাদের বলার চেষ্টা করে আমরা ভারতবিরোধী। কিন্তু আমরা বলতে চাই, আমরা ভারতবিরোধী না। বরং আমরা বাংলাদেশপন্থী। সুতরাং বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলতে গেলেই এটা ভারতের বিপক্ষে যায়। এটা রাজনৈতিক বাস্তবতা। অনেকেই প্রশ্ন করেন আমরা পাকিস্তানের ব্যাপারে বলি না কেন। বলি না কারণ, পাকিস্তানের তো সুযোগ নেই বাংলাদেশে বর্ডার কিলিং করার। প্রথমত, পাকিস্তান নিজেই ব্যর্থ রাষ্ট্র। যদি পাকিস্তানও ভারতের মতো বাংলাদেশের প্রতি আগ্রাসন করে তবে ইনকিলাব মঞ্চ পাকিস্তানের বিপক্ষেও দাঁড়াবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের ভূমিকা কীভাবে দেখেন?

ওসমান হাদি: ৭১ বললেই আমাদের ৪৭ থেকে শুরু করতে হবে। আমরা ইনকিলাব মঞ্চের ভাইবোনেরা মনে করি, আমাদের আজাদীর ঐতিহাসিক তিনটি পর্ব রয়েছে। আমাদের আজাদীর প্রথম পর্ব ১৯৪৭ সালে। ৪৭ না হলে আমাদের কোনোদিন ৭১ হতো না। ৭১-এ পাকিস্তানিদের হয়েছে দেশভাগ। কিন্তু বাংলাদেশীরা পেয়েছে স্বাধীনতা। সুতরাং ১৯৪৭ সালে আমাদের হয়েছে স্বাধীনতা। ভারতেরও দেশভাগ। অথচ অদ্ভুতভাবে ৭১কে আমাদের বলা হয় স্বাধীনতা। আর ৪৭ এর ব্যাপারে শেখানো হয়েছে দেশভাগ। দেশভাগ তো ভারতের। বাংলাদেশের কেন? তাই ৪৭ আমাদের প্রথম স্বাধীনতা। ৪৭ না হলে আজকে আমরা কাশ্মীর হতাম। আজকে আমরা সিকিম হতাম। আজকে আমরা হায়দ্রাবাদ হতাম। একাত্তরে পাকিস্তানের ভূমিকা ন্যাক্কারজনক। তাদের গ্লোরিফাই করার কোনো সুযোগ নেই। পাকিস্তানের ভুলে, পাকিস্তানের জুলুমে আমরা যে পাকিস্তান করেছিলাম সেটি ভেঙে বাংলাদেশ করতে হয়েছে। কিন্তু একাত্তরেও আমরা ইনসাফের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি নাই ভারত এবং আওয়ামী লীগের ছিনতাইয়ের কারণে। আমরা চূড়ান্ত স্বাধীনতা লাভের চেষ্টা করছি ২০২৪ সালে। এটাকে আমরা ব্যর্থ হতে দিব না। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: গত বিজয় দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অনেকে ঘটা করে বাংলাদেশের বিজয়কে তাদের নিজেদের বিজয় দাবি করেছেন। এটাকে কীভাবে দেখেন?

ওসমান হাদি: এই যে ভারত যে কাজটা করেছে, বাংলাদেশের যে তথাকথিত প্রচলিত সাংস্কৃতিক সুশীল ব্যক্তিবর্গ আছে তাদের কাউকে দেখবেন না যে ভারতীয় দূতাবাসের সামনে গিয়ে প্রতিবাদের কথা তো দূরে থাক, ফেসবুকেও লিখেছে। আমরা যে বলি, ভারত এবং আওয়ামী লীগ যৌথভাবে আমাদের স্বাধীনতা ছিনতাই করেছে তার প্রমাণ বিজয় দিবসে নরেন্দ্র মোদীর টুইট। ৪৭-এ পশ্চিম পাকিস্তানের ভুলে আমাদের স্বাধীনতা নষ্ট হয়েছে। স্পষ্ট করে বললে, ভারতের দরকার ছিল পাকিস্তান ভাঙার। আর আমাদের দরকার ছিল স্বাধীনতা অর্জনের। ভারত আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করে দেয় নাই। বরং ভারতের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত আমরা রক্ত দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন না করলে তার দুই পাশে দুই পাকিস্তান আর একপাশে চীন রেখে নিশ্বাস ফেলার জায়গা পেত না। আমরা তার সেভেন সিস্টার্স রক্ষিত রেখেছি। কিন্তু তার সীমানা রক্ষিত রাখতে গিয়ে সীমান্তে আমার হাজার হাজার মানুষ খুন হচ্ছে। এটা আমাদের আফসোস। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে পাকিস্তানের একাডেমিক সম্পর্ক বেশ কয়েক বছর বিচ্ছিন্ন ছিল। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সেটা পুনঃস্থাপন হলো। সেটাকে কীভাবে দেখছেন?

ওসমান হাদি: পাকিস্তানের সাথে আমাদের যদি আরো ১০০ বছর ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকে বিভিন্ন কারণে, এরপরেও উচিত একাডেমিক সম্পর্ক বজায় রাখা। যেকোনো দেশের বিশ্ববিদ্যালয় যদি প্রকৃতপক্ষে জ্ঞান বিতরণ করতে চায়, তাহলে সে দেশের সাথে সম্পর্ক না থাকলেও সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কোলাবোরেশান দরকার। ইংল্যান্ড ভারতের উপর ২০০ বছর শাসন করেছে। জুলুম করেছে। তাহলে ভারত কেন ইংল্যান্ডের সাথে সুসম্পর্ক রাখে? এটা রাখা যাবেনা বিশ্বের রাজনীতিতে সেটা নাই। ভারতের সাথেও আমাদের সম্পর্ক রাখতে হবে। তবে সেটা হবে ভারসাম্যপূর্ণ। প্রভুত্বের না। প্রতিবেশীর মতো। চীন, মায়ানমারসহ সবার সাথেই সুসম্পর্ক থাকতে হবে বাংলাদেশের। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিপ্লবের যে আকাঙ্ক্ষা জনমনে ছিল অন্তবর্তীকালীন সরকার সেটা কতটুকু ধরে রাখতে পেরেছে? 

ওসমান হাদি: আমি যদি নাম্বারিং করি তাহলে এই সরকার ১০ নম্বরে ৩ পাবে। সর্বোচ্চ ৪। টেনেটুনে পাশ করবে৷ এ সরকার আওয়ামী লীগের সেকেন্ড ফেইস। যার নাম সুশীল লীগ। এই সরকার যদি ফেইল করে, তিন থেকে চারজন বাদে কেউ জেলে যাবেনা। ড. ইউনূস। উনি বিদেশ চলে যাবেন। হাসিনার আমলে উনি মাজলুম মানুষ। আদিলুর রহমান, আসিফ নজরুল আর তিন ছাত্র উপদেষ্টা। তাদের ছাড়া এ সরকারের এমন কোন উপদেষ্টা নেই যারা হাসিনার আমলে জেল খাটা তো দূরের কথা, তাদের জীবনের কোন ক্ষতি হয়েছে। এই আন্দোলনে তাদের অবদান কী? বিপ্লব পরবর্তী সরকারের বিপ্লবী কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হলে ওই চেতনার মানুষ দরকার। এই সরকারের মধ্যে তা তো নাই, বরং তারা এত বেশি সুশীল যে সুশীলতার কারণে যারা বিপ্লবে অংশ নিয়েছে তাদের জন্য ফাঁসির মঞ্চ তৈরি হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তাদের কিছুই হবে না। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইনকিলাব মঞ্চের অর্থায়ন কীভাবে হয়?

ওসমান হাদি: ইনকিলাব মঞ্চের অর্থায়নের ব্যাপারে তিনটি জনপ্রিয় বিষয় আছে। এক, পিনাকী ভট্টাচার্য এখানে ফাইন্যান্স করেন। কারণ তিনি ইনকিলাব জিন্দাবাদ বলেন। দুই, মাহমুদুর রহমান ফাইন্যান্স করেন। কারণ আমরা তাকে সংবর্ধনা দিয়েছি। তিন, শিবির আমাদেরকে ফাইনান্স করে। কিন্তু আমাদের কথা তো বিশ্বাস করবেন না। আমরা আমাদের সব তথ্য গোয়েন্দা সংস্থার হাতে দিয়েছি। তাদের কাছ থেকে খোঁজ নিতে পারেন। আমরা কারো হাত থেকে সরাসরি টাকা নিইনা। যারা আমাদের চেতনাকে ধারণ করেন তাদেরকে কর্মসূচি কেন্দ্রীক বিভিন্ন খরচ বহন করতে বলি। সাউন্ড সিস্টেমের টাকা সরাসরি তার হাতে দিতে বলি। স্টেজ বানানোর খরচ যে বানাচ্ছে তাকে দিতে বলি। ইনকিলাব মঞ্চের সক্রিয় যে ৪০ থেকে ৫০ জন সদস্য আছে তারা দুপুরে কোন প্রোগ্রাম থাকলে দুপুরের খাবার হিসেবে কলা রুটি খায়। আর রাতে কোনো প্রোগ্রাম থাকলে রাতের খাবার হিসেবে কলা রুটি খায়। আর খায় চা। অনেক মানুষ আমাদেরকে ফাইনান্স করতে চায়। কিন্তু আমরা নিই না। কারণ আজকে ৫০ হাজার টাকা নিলে ১৫ দিন পর তাকে ৫ লাখ টাকার বেনিফিট দেওয়া লাগবে। ফোন দিয়ে বলবে ওখানে একটা মানববন্ধন কর। সুতরাং আমরা কারো পকেটে ঢুকতে চাই না। আর ইনকিলাব মঞ্চের যারা সদস্য তারা প্রতিমাসে ন্যূনতম ১০০ টাকা চাঁদা দেয়। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য কারা? 

ওসমান হাদি: বর্তমানে অফিসিয়ালি আমাদের তিনটা কমিটি আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা কলেজে। এর বাইরে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যারা আমাদের গুগল ফর্ম পূরণ করে সদস্য হয়েছে সারাদেশে। এই সংখ্যা ১০০০ এর উপরে। এখানে ছাত্রলীগ ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে যারা বিশ্বাস করেন তারা সবাই আছেন। ইসলাম সম্পর্কে যাদের নাক উঁচু করার মানসিকতা নাই তারা আছেন। কারণ ইসলামকে আমরা এখানে গুরুত্বপূর্ণ কালচারাল এলিমেন্ট মনে করি। থিওলজি না। শিক্ষার্থী ছাড়াও সকল শ্রেণি পেশার মানুষ আমাদের সাথে যুক্ত আছেন। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইনকিলাব মঞ্চ রাজনৈতিক দল করবে কিনা?

ওসমান হাদি: আপাতত ইনকিলাব মঞ্চের পলিটিক্যাল পার্টি হওয়ার কোন পরিকল্পনা নাই। ইনকিলাব মঞ্চের মতো অন্তত আরো ১০টা প্রেশার গ্রুপ দরকার যারা বাংলাদেশের পলিটিক্যাল পার্টিগুলোকে প্রেশার দিয়ে বাংলাদেশমুখী রাখবে। সুতরাং ইনকিলাব মঞ্চ একটা জুলাই অনুপ্রাণিত পলিটিক্যালি কনচাস কালচারাল গ্রুপ। এটা প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে। এরমধ্যে আমাদের অনেকেরই নিজস্ব রাজনীতি থাকতে পারে। তবে সে রাজনীতিতে যদি আমরা বেশি ভোকাল হয়ে যাই, ইনকিলাব মঞ্চ থেকে একটু পেছনে সরে আসবো। ইনকিলাব মঞ্চে অন্য সকল রাজনৈতিক দলের কর্মীরা থাকতে পারেন। যেমন আওয়ামী লীগের কর্মীরা ছায়ানট করে, উদীচী করে। তারা ছায়ানট-উদীচী করতে পারলে বিএনপি, জামায়াত, ছাত্র মজলিস, এমনকি সে সমস্ত বাম সংগঠন যারা শাহবাগে বিশ্বাস করে না অথবা শাহবাগে গিয়ে ফেরত এসে তওবা করেছে, আমরা তাদেরকেও স্বাগতম জানাই। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শাহবাগ নিয়ে আপনারা সরব কেন?

ওসমান হাদি: শাহবাগ নিয়ে আমি সরব। ইনকিলাব মঞ্চ সরব। শাহবাগীদের কোনো ক্ষমা নেই। শাহবাগী হলো তারা যারা বলে, বিচার চাই না, তবে ফাঁসি চাই। আজকে যে ব্যাপারগুলো ঘটছে সেগুলোকে তারা মব মনে করে। কিন্তু তারা শাহবাগকে পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম মব মনে করে না। শাহবাগের চেয়ে বড় মব দুনিয়াতে আর আছে নাকি? কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন হল। একটা গ্রুপ এসে বলল, যাবজ্জীবন মানি না। ফাঁসি চাই। এটা আদালত অবমাননা। আবার জামাত-শিবির বলল বিচার মানি না। ফাঁসি দেওয়া যাবেনা। তারা যে বিচার করা যাবেনা বললো - সেটাও তো আদালত অবমাননা। দুই দলই আদালত অবমাননা করলো। কিন্তু আপনি একটা গ্রুপকে দিনের পর দিন বিরিয়ানি খাইয়ে পিজি-বারডেম বন্ধ রাখলেন। ব্যাংক লোট করলেন। হসপিটালে হামলা করলেন। সব করলেন। আরেকটা গ্রুপ আদালত অবমাননা করলো তাই তাদেরকে পাখির মতো মেরে স্তূপ করে রাখলেন। আমি এই কথা বললেই জামায়াত-শিবির হয়ে যাই। আদিলুর রহমান কখনো জামায়াত করেছেন? তাহলে হেফাজতের তথ্য প্রকাশ করতে গিয়ে দিনের পর দিন জেল খাটলেন কেন? এই ফ্রেইমিং আমরা মানিনা। এসব কথা যারা বলে তাদেরকে আমরা গালিগালাজ করি। শাহবাগীরা যে ভাষায় গালিগালাজ করে তার চেয়েও খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র। আবার একইসাথে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য। দুইটার ইডিওলজিক্যাল পার্থক্য কোথায়?

ওসমান হাদি: ইনকিলাব মঞ্চ থেকে আমরা কালচারাল লড়াইটা করি। এই লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ ব্যতীত যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে সব ঘরানার লোক এখানে আছে। আর জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আমি ইনকিলাব মঞ্চের বন্ধুদের পরামর্শ হয়েছি। এজন্য হয়েছি যে জুলাইকে কেন্দ্র করে একটা পলিটিক্যাল ফোর্স দরকার। কখন ক্ষমতায় যাবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। তাই যারা আন্দোলনে ছিল তাদের একতাবদ্ধ থাকা দরকার। পরবর্তীতে কি হবে না হবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ যদি আমরা এই ঐক্যের ডাকে সাড়া না দেই তাহলে তার একটা ঐতিহাসিক দায় আমাদের উপর থাকবে। সুতরাং সেই ঐক্যের ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা নাগরিক কমিটিতে থাকতে চাই। নাগরিক কমিটি অত্যন্ত ইনক্লুসিভ। এখানে শিবিরের সভাপতিও আছে, আবার ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতিও আছে। এটাকে যদি আসলেই ফাংশন করা যায়, তাহলে আমি মনে করি একটি সুন্দর কাজ হবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ডিসেম্বরের শেষদিকে একটা প্রোগ্রামে যাওয়ার আগে আপনাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। পরবর্তীতে সে ব্যাপারে কী করেছেন?

ওসমান হাদি: আমাকে অন্তত পাঁচ দিনে ১৫ টি নাম্বার থেকে কল করা হয়েছে। সবগুলোই  হত্যার হুমকি দিয়েছিল। যেন আমি বরিশালে নাগরিক কমিটির একটি অনানুষ্ঠানিক প্রোগ্রামে না যাই। সারাদিনে তিন থেকে চারবার করে হুমকি দিয়েছিল যে আমি গেলেই হত্যা করা হবে। তারা বলেছিল যেন বাবা-মার শেষ দোয়া নিয়ে আসি। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। আমি খুবই স্ট্রিক্ট ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ। আমরা যে কাজটি করছি এখানে আমাদের মৃত্যু হতেই পারে। অপমৃত্যুর চেয়ে লড়াই করে মরা আনন্দের। ইনসাফের পথে লড়াই করে মরা আমরা যারা আল্লাহ আর রাসূলে বিশ্বাস করি এবং যেটা নিয়ে আমাদের কোন গ্লানি নাই তাদের জন্য এই শাহীদি মৃত্যু সম্মানের। আল্লাহ তায়ালার পরে আমার পরিবারের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমার বাসায় বোন ছিল। সে বরিশাল প্রোগ্রাম শেষে লঞ্চে তুলে দেওয়া পর্যন্ত আমার সাথে গিয়েছিল। এবং সে ব্যাগের মধ্যে একটা বাংলা দা নিয়ে আসছিল। এর মধ্যে আমাদের বরিশালের অনেক  বন্ধুবান্ধব জড়ো হয়েছে। তারপর আমরা প্রোগ্রাম শেষ করে ফিরে এসেছি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী? কী চিন্তাভাবনা নিয়ে এগুচ্ছেন?

ওসমান হাদি: এখনের অনেক তরুণ রাজনীতিবিদরা চিন্তা করেন, আগামী সেশনে এমপি হতে হবে। হতেই হবে। কিন্তু আমার চিন্তা হলো, বাংলাদেশের প্রয়োজনে মানুষ মনে করলে এবং আমার যোগ্যতা থাকলে প্রধানমন্ত্রীও হওয়া লাগতে পারে। আবার সারা জীবন কিছু না হওয়াও লাগতে পারে। কখন কি হওয়া লাগতে পারে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, ফ্যাসিবাদের পর জুলাইকে কেন্দ্র করে নতুন রাজনৈতিক চর্চা গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতিটা শুরু করতে হবে। রাজনীতিতে থাকতে হবে। এতে আমি কখন এমপি হব কিংবা আজীবনেও হব কিনা সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। আমি আমার এলাকায় গিয়ে বলেছি যে আমি নির্বাচন করলে দুই হাজার ভোট পাব। এর চেয়ে বেশিও পেতে পারি। কিন্তু এই দুই হাজার ভোটেই আমি খুব আনন্দিত এই কারণে যে, এই ২০০০ মানুষের পেছনে আমার ২০০ টাকাও খরচ হবে না। কারণ আমি সেরকম একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার স্বপ্নের সাথে ইনকিলাব মঞ্চের কোনো যোগসূত্র আছে? নাকি ইনকিলাব মঞ্চের একেবারে আলাদা কোনো এজেন্ডা আছে? আগামী ১০ বছর পর ইনকিলাব মঞ্চকে কোথায় দেখতে চান?

ওসমান হাদি: ইনকিলাব মঞ্চকে আমরা এমন একটি জায়গায় নিয়ে যেতে চাই যেখানে মানুষের পলিটিক্যাল গ্রুমিং হবে। এখান থেকে বের হয়ে বাংলাদেশে মানুষ পাঁচটি পলিটিক্যাল পার্টি করবে। এমন একটা ট্রেনিং তারা পাবে যে ইনকিলাব মঞ্চ দুই বা তিন বছর করেছে সে যে দলই করুক না কেন, আজীবন বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য ভয়েস রেইজ করবে। ইনকিলাব মঞ্চ হবে একটা ট্রেনিং সেন্টার যেটা পলিটিশিয়ান প্রডিউস করবে। তারা বিভিন্ন দল বানাবে। বিভিন্ন দলে তারা যাবে। কিন্তু ভয়েস হবে বাংলাদেশের পক্ষে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে ধন্যবাদ। 

ওসমান হাদি: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও অনেক ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ