ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি

অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ
অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ  © টিডিসি ফটো

অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) হিসেবে। দেশে ও দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা-গবেষণায় সমৃদ্ধ গুণী এই অধ্যাপক শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি জোর দিচ্ছেন গবেষণা নির্ভর শিখন-কাঠামোয়। গত ৫ আগস্ট পরবর্তী অবস্থা, সংস্কার, শিক্ষা-গবেষণা, ছাত্র রাজনীতি, শিক্ষক রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। গল্প-আলাপে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক আলামিন-

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: উপ-উপাচার্য হিসেবে যোগদানের ৩ মাস পার হল। নতুন এই দায়িত্ব কতটুকু এনজয় করছেন?

অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়। তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে দেশের মানুষের অনেক প্রত্যাশা ও স্বপ্ন। তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী অনেক কাজ করার সুযোগ আছে। কিন্তু আমরা নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই প্রত্যাশা যথাযথভাবে পূরণ করা মতো অবস্থায় এখনো আসতে পারিনি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশ এখন সংস্কার যুগ পার করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও নতুন প্রশাসন। মোটা দাগে বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারের পরিকল্পনা জানতে চাই?

অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ: উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) হিসেবে আমি যে সংস্কারগুলোর কথা বলব বা চিন্তা করছি সেগুলোর অধিকাংশই টিচিং ও রিসার্চকে কেন্দ্র করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি জাতির যে প্রত্যাশা, সেটি পূরণ করতে হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেও যুগোপযোগী হতে হবে এবং সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে এর উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব সুযোগ সুবিধাগুলো আমাদের আছে, এক্ষেত্রে দুটি জিনিস করতে হবে- বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা ন্যায্যতার ভিত্তিতে ছাত্র-শিক্ষকের মাঝে বণ্টনের ব্যবস্থা করতে হবে। এখানে কোন প্রকার অন্যায্যতা অথবা বৈষম্য তৈরি করলে আমাদের বিদ্যমান সুযোগ সুবিধার মধ্যেও যেটুকু প্রোডাক্টিভ হওয়ার সুযোগ আমাদের আছে সে সুযোগটা আমরা গ্রহণ করতে পারব না। এটা হচ্ছে একটা দিক। 

আরেকটা হচ্ছে- শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন এবং কনফারমেশন এসব ক্ষেত্রে আমরা যদি শুধুমাত্র মেধার ভিত্তিতে এবং কোন প্রকার বৈষম্য না করে যদি আমরা এই কাজগুলো করতে পারি তাহলে শিক্ষকদের মধ্যেও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশের প্রতি ধরনের সম্মান তৈরি হবে। তাহলে ছাত্রদের মধ্য যদি আমরা বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে পারি এবং সেখানে যদি কেউ বৈষম্যের শিকার না হয়। 

ক্যাম্পাসে যা কিছু সুযোগ-সুবিধা আছে, সেটা হলের সিট থেকে শুরু করে কো-কারিকুলার, এক্সট্রাকারিকুলার ফ্যাসিলিটিস ইত্যাদি সব শিক্ষার্থী যাতে মনে করে এটার উপর তার কতটুকু অধিকার আছে, যতটুকু অধিকার অন্য যে কারো আছে। এইটুকু আমরা নিশ্চিত করতে চাই। তার মানে হচ্ছে আমরা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ একদিকে যেমন নিশ্চিত করতে চাই, সে পরিবেশে সবাই যেন সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে অংশগ্রহণ করতে চায় সেটাও আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এক্ষেত্রে যা কিছু পরিবর্তন করা প্রয়োজন, সংস্কার করা প্রয়োজন আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের তাই করতে হবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যদিও তিন মাস খুব কম সময়। তারপরও নতুন প্রশাসনের হাত ধরে এই দিনগুলোতে কী পরিবর্তন আসলো? অবকাঠামোর সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টাও জানতে চাই?

অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ: আমরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিকভাবে একটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। ৫ আগস্টের পূর্বে যেসব কারণে ছাত্র-শিক্ষক বৈষম্যের শিকার হতেন, এখন তারা সেই বৈষম্যের শিকার আর হবেন না। অন্যায্যভাবে কোনো কিছু থেকেই তারা বঞ্চিত হবেন না। এ ধরনের একটা মানসিক অবস্থায় ইতিবাচকভাবে আসার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি। কারণ এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে সমস্ত কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তাতে এটুকু আমরা বলতে পারি যে, কারো প্রতি অন্যায় হবে, এ বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কখনো মেনে নেবে না।  

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একটি অংশের সঙ্গে ছাত্রদের দূরত্ব তৈরি হয়েছিলো। এমনকি নিজেদের মধ্যেও একটি অংশের সঙ্গে দূরত্ব ছিল। এটি এখন কী পর্যায়ে আছে, উত্তরণের উপায় কী? 

অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ: ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কটা হচ্ছে একটা পরিবারের মতো। এই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কোন কারণে দ্বন্দ্ব তৈরি হলে সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে। এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই গত বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে যে ধরনের সম্পর্ক থাকার কথা ছিল কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা ব্যত্যয় হয়েছে। সে সময়কার সামাজিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি সেটা আমাদের ক্যাম্পাস পরিস্থিতির উপর প্রভাব পড়েছে। এ বিষয়ে আমরা সবাই নিশ্চিত। ফলে ছাত্রদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সে ক্ষোভের ন্যায্যতা আছে। তবে আমরা এটা থেকে উত্তরণ ঘটাতে চাই। আমরা চাই ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে যে স্বাভাবিক সম্পর্ক সে স্বাভাবিক সম্পর্কটা ফিরে আসুক। আমরা সেটার উপর কাজ করছি ও ছাত্র-শিক্ষক সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আগস্ট পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক ক্লাসে ফিরেছেন? যাচাই করা গেছে কিনা?

অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ: সব শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরেছেন কিনা, এ বিষয়টা নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত খোঁজ-খবর নিচ্ছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যত্যয় আছে সেটা আমরা বুঝতে পারি। তবে পূর্ণাঙ্গ চিত্রটা পেতে হয়ত আমাদেরকে অফিসিয়ালি আরেকটু সময় লাগবে। পূর্ণাঙ্গ চিত্রটা পেলেই তখন আমরা বলতে পারব। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষার্থীদের জন্য ইন-ক্যাম্পাস এবং আউটার ক্যাম্পাস জব প্লেসমেন্ট নিয়ে বর্তমান প্রশাসনের ভাবনা কী? 

অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ: জব প্লেসমেন্টের প্রয়োজন হয় দুটো কারণ। প্রথমত ছাত্র-ছাত্রীরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়। দ্বিতীয় আরেকটি বিষয় হয়, তারা কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার সুযোগ পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা প্রথা অনেকদিন থেকে প্রচলিত আছে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সীমিত আকারে হলেও কিছু অন ক্যাম্পাস অথবা অফ ক্যাম্পাস চাকরির ব্যবস্থা করা। এধরনের একটা প্রচলন অনেকদিন থেকে আছে, সীমিত সংখ্যায় এখনো সেটা আছে। তবে আমরা যতটুকু বুঝতে পারি, সেটা যে খুব সমতা, ন্যায্যতা অথবা মেধার ভিত্তিতে করা হয়েছে সবসময় তা কিন্তু নয়। কিন্তু সেটাও কিন্তু সীমিত।

ছাত্রদের যতটুকু প্রত্যাশা সেটি পুরোপুরি আমরা পৌঁছাতে পারিনি। আমরা এখন চিন্তা করছি, এ দুটো বয়স। ছাত্রদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টা আমরা জব ফ্যাসিলিটিস বাড়িয়ে যদি করতে পারি সেটা একটা অপশন আমাদের, তার বাইরেও বৃত্তির সংখ্যার পরিমাণ বাড়িয়ে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে যেন একাডেমিয়াতে বেশি পরিমাণে সংযুক্ত রাখা যায়, সে প্রচেষ্টাটা আমরা করছি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সম্পর্ক স্থাপনে ঢাবি কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে নেই বলে মনে করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বড় অংশ। এক্ষেত্রে উন্নতিতে করণীয় কী, বিশ্ববিদ্যালয় কী করবে? 

অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ: জব মার্কেটে যাওয়ার আগে যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সাথে যদি এক ধরনের অ্যাঙ্গেজমেন্ট থাকে তাহলে ছাত্র-ছাত্রীরা পরবর্তীতে চাকরিতে গিয়ে তারা অনেক বেশি লাভবান হয়। যদিও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় সেটি করতে পারে নাই।

যে প্রশ্নটা আপনি করলেন, আমি সেটার সাথে আমি একমত। এ বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। একটা কাজ করা যেতে পারে সেটা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো ওপেন হয়ে ইন্ডাস্ট্রির দিকে যেতে পারে, ইন্ডাস্ট্রিগুলোকেও আমরা আহ্বান জানাতে পারি যাতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কোর্স কারিকুলাম, এক্সাট্রাকারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ থেকে শুরু করে বাকি যে সব ফ্যাসিলিটিস আছে সে ফ্যাসিলিটিগুলোর সাথে ইন্ডাস্ট্রি এবং অ্যাকাডেমিয়া একযোগে যাতে এ প্রোগ্রামগুলো করতে পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এতে করে যেমন আমার ছাত্র-ছাত্রীরা লাভবান হবে একইসাথে ইন্ডাস্ট্রিও লাভবান হবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষক নিয়োগে গত দেড় দশক অনেক অনিয়মের অভিযোগ আছে, অনেক নিউজ আছে, নিউজের বাহিরে অনিয়ম আরও বেশি। সার্বিকভাবে এক্ষেত্রে অনিয়ম খতিয়ে দেখবে কিনা বর্তমান প্রশাসন? এমন অনিয়মে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষার্থীরা?

অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ: দেশের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন হওয়া উচিত মেধার ভিত্তিতে। অতীতে এর  কখনো কখনো ব্যত্যয় হয়েছে। তার মধ্যেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা শিক্ষক হিসেবে জয়েন করেছেন তাদের অধিকাংশই সত্যিকার অর্থেই মেধাবী। তাদের অধিকাংশই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচিং এবং রিসার্চে কন্ট্রিবিউট করতে আগ্রহী, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ব্যতিক্রম আছে, ব্যতিক্রমের সংখ্যা কখনো কখনো বেশি হয়েছে। সেটাও আমরা অস্বীকার করছি না। কিন্তু আমাদের অতীত নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না, সামনের দিকে তাকাতে হবে।

আমি নিশ্চিত করছি, আমি যতক্ষণ দায়িত্বে আছি ততক্ষণ শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন ও কনফার্মেশনের ক্ষেত্রে আমি সম্পূর্ণ মেধা, নিরপেক্ষতা এবং ন্যায্যতা, এই ভিত্তির বাইরে আমি কোন কিছু নিয়ে কখনো চিন্তা করব না। এটা হচ্ছে আমার দিক থেকে কমিটমেন্ট। আপনি যেটা বললেন অতীতে যা কিছু হয়েছে এটা খতিয়ে দেখার জন্য কোন কমিটি বা কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চিন্তা করছে কি না? হ্যাঁ আমরা মনে করি যে, যদি মেধাবী কাউকে বঞ্চিত করে স্বল্প মেধাবী কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়, তাহলে সার্বিকভাবে এটার একটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া শিক্ষাক্ষেত্রে পড়ে। সেটা নিশ্চয় আমার মনে হয় খতিয়ে দেখে সেটা প্রতিকার করা প্রয়োজন। তবে সেটা হতে অত্যন্ত সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্তের ভিত্তিতে।

আমি আশা করছি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খুব দ্রুতই এ বিষয়ে একটা কমিটি বা কমিশন যা কিছুই হোক করার চিন্তা করবে, প্রচেষ্টা করবে। যার ভিত্তিতে অতীতে যেসব নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে যার ফলে শিক্ষকদের মধ্য, আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে, সেক্ষেত্রে আশা করছি, এটা প্রতিকারের ব্যবস্থা হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ নিয়ে কোন দিকে এগোচ্ছেন? চ্যালেঞ্জ কী কী এক্ষেত্রে? 

অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ: সাত কলেজ যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত করা হয়, তখন খুব বেশি চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্তটি হয়েছে এটা আমার কাছে মনে হয় না। আমার কাছে মনে হয়, সে সময় আরো একটু ভেবে চিন্তে অধিভুক্ত করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেটি করা হয়নি। যার ফলে, সাত কলেজ অধিভুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি ছাড়াই। সে প্রস্তুতিটা হচ্ছে আমাদের অ্যাকাডেমিক প্রস্তুতি, আমাদের প্রশাসনিক প্রস্তুতি ও আর্থিক প্রস্তুতি।

আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, তখনকার সরকার বিশ্ববিদ্যালয়কে কথা দিয়েছি তারা প্রশাসনিক, আর্থিক ও অ্যাকাডেমিক সাপোর্ট দেয়ার জন্য যা কিছু প্রয়োজন সরকার সেটা সরবরাহ করবেন। কিন্তু পরবর্তীতে তখনকার সরকার সেটি করেনি। যার ফলে, সাত কলেজ অধিভুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত কলেজকে সার্ভ করার জন্য যে যে ফ্যাসিলিটিগুলো থাকার কথা, সে ফ্যাসিলিগুলো তৈরি করতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে আমাদের উপর একটা বাড়তি চাপ হিসেবে এ প্রশাসনিক দায়িত্বটা পালন করতে হচ্ছে।

আর্থিক দায়িত্ব, প্রশাসনিক দায়িত্ব, অ্যাকাডেমিক দায়িত্ব একটা বাড়তি দায়িত্ব। যখন আপনি একটা বাড়তি দায়িত্ব যান, তাহল আপনার নিয়মিত যে দায়িত্ব, সে দায়িত্বপালনে কিছুটা ব্যত্যয় হয়, এটি স্বাভাবিক একটা বিষয়। যার ফলে, সাত কলেজ নিয়ে বর্তমান যে সংকটটি তৈরি হয়েছে, সেটি হচ্ছে সাত কলেজকে যে উদ্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত করা হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য যেমন সাধন হচ্ছে না। একইসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও সাত কলেজকে নিয়ে সন্তুষ্টির সাথে তাদের প্রতি দায়িত্বটা পালন করতে পারছেন না, এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিটা উত্তরণ করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি, সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, সাত কলেজ ও কর্তৃপক্ষ যারা আছেন এর একটা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে একটা সুষ্ঠু সমাধান বের করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: মেডিকেল কলেজগুলোর প্রশাসনিক দিক দেখভাল করে ঢাবি, সিংহভাগ রোগী ও স্বজনদের অভিজ্ঞতা হলো- আমাদের চিকিৎসকরা (কনসালটেন্ট, সার্জনসহ) সে অর্থে দক্ষ হয়ে গড়ে উঠছে না। ঢাবি পরিস্থিতি উন্নয়নে এগিয়ে আসবে কিনা? কী কী করতে পারে? 

অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ: খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আপনি করেছেন। মেডিকেল কলেজগুলো হচ্ছে আমাদের কনস্টিটুয়েন্ট কলেজ। এরমধ্যে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার মান বাংলাদেশের কন্টেক্সটে মোটামুটি সন্তোষজনক বলা যায়। কিন্তু বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর শিক্ষার মান নিয়ে  আমি ব্যক্তিগতভাবে সন্তুষ্ট নই। আমি মনে করি সেটিও উন্নত করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এবং সেটা করা প্রয়োজন।

এখানে একটা সীমাবদ্ধতা আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অ্যাকাডেমিক বিষয়টা অ্যাডমিনিস্ট্রার (পরিচালনা) করবেন। কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে, সেটা হচ্ছে মেডিকেল এ্যাডুকেশন ইটসেলফ ইজ অ্যা টেকনিক্যাল এ্যাডুকেশন, এখানে শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এককভাবে জড়িত নয়, সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখানে জড়িত আছে এছাড়াও অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান এর সাথে সম্পৃক্ত থাকে। বিশেষভাবে এটা আমাদের মনে রাখতে হয়, যখন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিকে অ্যাডমিনিস্ট্রার (পরিচালনা) করতে হয়। প্রাইভেট মেডিকেল কলেজগুলোতে ‍যখন প্রশাসনিক ব্যবস্থা আমাদের সামনে আসে। এই যে একটা জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তাদের অ্যাকাডেমিক এনভায়রনমেন্ট আরেকটু কীভাবে ইম্প্রুভ করা যায়। কিন্তু আমি মনে করি, একইভাবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যারা আছে তাদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে সম্মিলিতভাবে এসব সমস্যার সমাধান করার জন্য। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু সংখ্যক শিক্ষককে শিক্ষকতার বাইরে শুধু গবেষণামুখী করা যায় কিনা- যেমনটি আমরা অনেক বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখি।

অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১০০ বছরের বেশি পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়। শতবর্ষের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এদেশের মানুষের প্রত্যাশাটা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় যেমন টিচিংয়ে কন্ট্রিবিউট করবে একইসাথে রিসার্চেও কন্ট্রিবিউট করবে। এই প্রত্যাশা থাকাটাই খুব স্বাভাবিক। বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ ক্ষেত্রে যতটুকু এক্সেল করা উচিত ছিল, প্রয়োজন ছিল, ততটুকু এক্সেল করতে পারে নাই বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে। এখন এটাকে কীভাবে আমরা ইম্প্রুভাইস করতে পারি।

আপনি যেটা বললেন, সবাইকে টিচিংয়ে জড়িত না রেখে কাউকে টিচিংয়ে জড়িত রাখা এবং কিছুসংখ্যক শিক্ষককে তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে শুধুমাত্র গবেষণায় এ্যাঙ্গেজ রাখা। এটা নিয়ম করে করার মতো পরিস্থিতিতে আমরা এখনো পৌঁছায়নি। কিন্তু আমি মনে করি, ভবিষ্যতে এ ধরনের একটা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হবে। পৃথিবীর অনেক পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা সেদেশের মধ্যে প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও তো দেশের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও গবেষণায় অধিক মনোনিবেশ করে টিচিংয়ের রেস্পনসিবিলিটিটা অন্যদের মধ্যে ডিস্ট্রিবিউট করে দেওয়ার মতো একটা পরিস্থিতি তৈরি করা যায়। নিশ্চয় সেটা নিয়ে চিন্তা করতে পারে। আমরা ভবিষ্যতে সেটা নিয়ে চিন্তা করতে পারব ইনশা-আল্লাহ। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিগুলোতে সময়োপযোগী মৌলিক বইয়ের সরবরাহে ঘাটতি আছে। মৌলিক বইয়ে অল্প কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকলেও বাকিদের নেই। পরিস্থিতি উন্নয়নে আইডিয়ালি কী করা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় কী করবে?

অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ: আমার চেষ্টা করছি, ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মৌলিক টেক্সটবুকের বাইরেও বিষয়ভিত্তিক মৌলিক যেসব শিক্ষা উপকরণ আছে বই একটা গুরুত্বপূর্ণ। সেসব কিছু নিয়েই আমাদের লাইব্রেরিটাকে সমৃদ্ধ করা। একই সাথে সমসাময়িক জার্নাল থেকে শুরু করে শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত যে-সব উপকরণ আছে তার সব কিছুর এক্সেস যেন আমাদের লাইব্রেরিতে থাকে সেই ব্যবস্থা টা করা। সেই নিরিখে ইলেক্ট্রনিক্স এবং ফরমাল-ইনফরমাল সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে লাইব্রেরিটাকে সাজানোর জন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আপনি যে কথাটি বললেন, অতীতের তুলনায় আমি মনে করি আমাদের লাইব্রেরি অনেক বেশি সমৃদ্ধ। হ্যাঁ, এটা সত্য। আজকের বাস্তবতায় আমরা এখন অনলাইনের যুগে বসবাস করছি। বিশ্বের যেকোনো জায়গার সাথে যে-সব উন্নত দেশের লাইব্রেরিগুলোতে শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট সব ধরনের উপকরণ অনলাইনেই পাওয়া যায়। সেটার এভেইলেবেলিটি থাকে।

আমাদের এখানে যেন সেগুলো অ্যাভেইলেবল থাকে সে ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে আমাদের আরেকটু দূর যেতে হবে এটা নিশ্চিত। তবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছি সেটা যাতে করা যায়। এটা হচ্ছে আমাদের প্রস্তুতির বিষয়টা বললাম। আমরা উৎসাহিত করব আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে তারা টেক্সটবুক এবং টেক্সটবুকের বাইরে বিষয়ভিত্তিক মৌলিক যে-সব বইগুলো আছে যেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাভেইলেবল, অনলাইনে বা অফলাইনে যেগুলো অ্যাভেইলেবল সেগুলোতে যেন ছাত্রছাত্রীরা আগ্রহ নিয়ে পড়তে পারে। তার মানে হচ্ছে আমরা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আসলে পড়াশোনামুখী করতে চাই। আমরা চাই তারা যাতে পড়াশোনার মধ্যেই এ্যাঙ্গেজ থাকে, সে প্রচেষ্টার মধ্যে আমরা আছি। কিন্তু আসলে আমাদের সামাজিক বাস্তবতা এবং রাজনৈতিক বাস্তবতাটা হচ্ছে এরকম যে, মৌলিক বিষয়ে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ রিলেটিভলি কম এবং সেটা অনেকদিন থেকে কমছে। এটাকে কীভাবে বাড়ানো যায়, সেটি আমরা বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চয় নির্ধারণ করার চেষ্টা করব। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে অনেক জলঘোলা হলো, এখনো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে সহায়তা চাওয়া হয়েছিল। ইস্যুটি নিয়ে প্রশাসন কী ভাবছে?

অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ: ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কি ভাবছে, সে বিষয়ে নিশ্চয় আপনারা পত্র-পত্রিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য দেখেছেন। তবে এ বিষয়ে মতামত দেয়ার ক্ষেত্রে আমি সঠিক ব্যক্তি নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যকে (প্রশাসন) ইস্যুটি নিয়ে কথা বলতে স্পোকসম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তবে আমার ব্যক্তিগত মত, ছাত্র-ছাত্রীরা রাজনীতি করবে কি করবে না, কোন উপায়ে করবে সেটা একান্তই তাদের নিজস্ব বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একজন ছাত্রের পরিচয় শুধুই ছাত্র। আমার কাছে একজন ছাত্রের পরিচয় শুধুই ছাত্র, সে কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য সেটা তার নিজস্ব বিষয়। আমার দেখার বিষয় হচ্ছে যে, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীা ছাত্ররাজনীতি সংক্রান্ত কোন কার্যক্রম চালাতে গিয়ে যদি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের ব্যত্যয় গঠানো হয় তখন বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারি। কোনো ছাত্রের অথবা কোনো ছাত্রসংগঠনের আচরণ নির্ধারণ করে দেয়ার দায়িত্ব আমরা পালন করতে পারি না। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষক সমিতির নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে প্রশাসন?

অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। আমি নিজেই সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে ম্যানডেট দেয়া আছে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যদি কখনো কোন ব্যত্যয় হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন অথবা স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার যদি কখনো ব্যত্যয় হয় সেক্ষেত্রে যথাযথ প্রতিবাদ করার ম্যানডেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আছে। তার মানে হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে দেশে যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কখনো ভেঙ্গে পড়ে, দেশে যদি স্বৈরতান্ত্রিক উত্থান ঘটে সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করবে, আন্দোলন গড়ে তুলবে, তার প্রতিবাদ করবে এটাই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির অনেকগুলো ম্যান্ডেটের একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যান্ডেট।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সত্য গত ১৫ বছরে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার পরেও দেশের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে পড়ার পরেও এবং তার প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার উপরে সে অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের প্রভাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার উপর পড়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেসময়ের শিক্ষক সমিতি যথাযথ ভূমিকা পালন করেনি। তাদের প্রতি যে ম্যান্ডেট দেয়া হয়েছিল, সে ম্যান্ডেট অনুযায়ী ভূমিকা পালন করেনি। যার ফলে এদেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রী, গণতন্ত্রকামী মানুষ প্রত্যেকেরেই এই কয়ে বছরের, বিগত অনেক বছরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির এই যে অগণতান্ত্রিক যে তাদের আচরণের কারণে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়ে আছে।

কিন্তু এর অর্থ এই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ‘ইটসেলফ’ আমি আবার বলছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সেসময়ের যারা ছিলেন তারা এটার জন্য দায়ী হতে পারেন কিন্তু সামগ্রিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা এটার জন্য নিশ্চয় দায়ী নয়। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে তার অতীত ঐতিহ্যে অনুযায়ী গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের প্রত্যাশা পূরণের জন্য যে সমস্ত কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন, সে কার্যক্রমের দিকে নজর দেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এটা একটা দিক। এবার আপনার প্রসঙ্গে আসি, শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের বিষয়ে, শিক্ষক সমিতি স্বাধীনভাবে কাজ করে। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শিক্ষক সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা, শিক্ষক সমিতির নির্বাচন কোন কিছুতেই প্রশাসনের কোন ভূমিকা থাকে না, নেই। সুতরাং নির্বাচন হবে কি হবে না, হলে কোন প্রক্রিয়ায় হবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে একান্তভাবে শিক্ষকরা নিজেরা বসে ঠিক করবেন, সেখানে প্রশাসনের কোন ভূমিকা আছে বলে আমি মনে করি না। তবে আমি এর আগের যে অংশটুকু বলেছি, সেটা বলেছি, আমি এখনো একজন শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সেটার আমার বক্তব্য। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার চার বছর মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়কে কোন অবস্থানে দেখতে চান? আপনার স্বপ্ন কী?

অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ: আল্লাহ আমাকে যে কয়দিন দায়িত্ব পালন করার সুযোগ দেন, আমি যেদিন দায়িত্ব থেকে যাব এখান থেকে আমি এটুকু নিয়ে যেতে চাই যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং গবেষণার ক্ষেত্রে ইতিবাচক এবং তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আমি করতে পেরেছি এরকম একটা আত্মতৃপ্তি নিয়ে আমি এই জায়গাটা ত্যাগ করতে চাই। এর অর্থ হচ্ছে এই যে, আমি এখান থেকে ফিরে যাওয়ার সময় দেখতে চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রে আমি যখন জয়েন করেছি তখন যে পর্যায়ে ছিল তারচেয়ে অনেকদূর এগিয়েছে এরকম একটা পর্যায়ে আমি দেখতে চাই। ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিং আছে, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান যে পর্যায়ে থাকার প্রয়োজন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে মানুষের যা প্রত্যাশা, সে অনুযায়ী ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সে জায়গায় নেই।

র‌্যাংকিং নিয়ে অনেক ধরনের প্রশ্ন আছে, অনেক ধরনের বক্তব্য আছে, আমি সেটার মধ্যে না গিয়ে শুধু এতটুকু বলতে পারি র‌্যাংকিং একটা বাস্তবতা এখন। আমি চাই ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে অবস্থায় আমি যখন জয়েন করেছি ছিল, আমি যেদিন এ দায়িত্ব থেকে আবার শিক্ষকতা পেশায় ফিরে যাব, শিক্ষকতার দায়িত্বে ফিরে যাব, এর চাইতে একটা উন্নততর অবস্থানে রেখে আমি যেন যেতে পারি সে অবস্থানটা আমি দেখতে চাই। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদানের বিষয়ে প্রশাসনের ভাবনা আছে?
অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ: আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়। এসব ছাত্র-ছাত্রীর যদি একটু ডেমোগ্রাফিক ডেটা দেখি তাহলে দেখা যাবে অধিকাংশই আসে মফস্বল থেকে। এদের অনেকেই প্রথমবারের মতোই ঢাকায় আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য। দেখা যায় এদের দুটো জিনিস নিয়ে তারা আসে- একটা মেধাবী অপরটা স্বপ্ন। স্বপ্ন ও মেধার উপর ভিত্তি করে শুধু মাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এদের মধ্যে একটা অংশ থাকে যাদের অধিকাংশের মধ্যেই আর্থিক সংগতি যতটুকু থাকার প্রয়োজন একটা নতুন শহরে এসে বসবাস করার জন্য, শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আর্থিক সংগতি যা থাকার প্রয়োজন তা অনেকের মধ্যে থাকে না। এই অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন তাকে হলে, হোস্টেলে থাকার জায়গা করে দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা করতে পারি না। যার ফলে একদিকে শহরটা তার জন্য নতুন, ১৭ কিংবা ১৮ বছর বয়সে সে আসে, একটা নতুন শহরে আসছে, স্বপ্ন নিয়ে সে পড়তে আসছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হলের একটা সিট অথবা আর্থিক সহযোগিতা, মানসিক সহযোগিতা, সার্বিক সহযোগিতা ছাত্র-ছাত্রীরা যতটুকু প্রত্যাশা করে সে ততটুকু পায় না। যার ফলে সে একটা ভালনারেবল পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যায়। এই অবস্থার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যত সংকট তৈরি হয়, ছাত্রদের মাঝে যত সমস্যা তৈরি হয় তার মূল কারণ হলো এটি।

আমরা এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চিন্তা করছি যে, একটা প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা ভাবছি, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের শতভাগ বৃত্তির আওতায় আনবো। আমরা এটা এ কারণে করতে চাই যাতে করে সবচাইতে সংবেদনশীল সময় প্রথম বর্ষ। এ সময়টাতে তাদের শুধু আর্থিক দুশ্চিন্তার মাঝে না রেখে শুধু পড়াশোনা এবং অ্যাকাডেমিক, কো-কারিকুলার এবং এক্সট্রাকারিকুলার এক্টিভিটিসের মধ্যে দিয়ে যে ছাত্র-ছাত্রীদের আমরা জড়িয়ে রাখতে পারি, সংযুক্ত করে ফেলতে পারি। সেজন্য আমরা প্রথম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শতভাগ বৃত্তির একটা প্রকল্প হাতে নিচ্ছি। সিন্ডিকেটে ইতোমধ্যে আমাদের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে প্রাথমিক সিদ্ধান্তের আলোকে বাকি কাজগুলো আমরা এগিয়ে নিচ্ছি। আমরা চেষ্টা করছি যতদ্রুত সম্ভব এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে।


সর্বশেষ সংবাদ