১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:০৪

৮ ঘণ্টা ঘুম-দৈনন্দিন কাজ আর নামাজ ছাড়া বাকি সময় পড়াশোনাই করতাম

শিক্ষার্থী ফাইজুস সালেহীন  © টিডিসি ফটো

আগামী ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ২০২৪-২৫ সেশনের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা। চিকিৎসার মতো একটি মহান পেশায় যাঁরা নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাঁদের প্রথমেই পার হতে হয় মেডিকেল নামক ভর্তি পরীক্ষা। প্রতিবছর প্রায় পাঁচ হাজার আসনের বিপরীতে দেড় লাখ পরীক্ষার্থী এতে অংশ নিয়ে থাকেন। কেন্দ্রে এক ঘণ্টার মেধার যুদ্ধে সাফল্যের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে মেডিকেল ভর্তিচ্ছুদের স্বপ্ন ছোঁয়ার গল্প। তুমুল প্রতিযোগিতার এ সংক্ষিপ্ত সময়টির যথাযথ ব্যবহার ও শেষ সময়ে পরীক্ষার প্রস্তুতির নানা কৌশল নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন নোয়াখালী মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাইজুস সালেহীন। ভর্তিচ্ছুদের করণীয় ও বর্জনীয় নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি দিয়েছেন বিভিন্ন মূল্যবান পরামর্শ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. আবদুর রহমান-


দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শেষ পর্যায়ে মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কোন কোন বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে?

ফাইজুস সালেহীন: প্রস্তুতির  প্রথম পর্যায়ে বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের এ টু জেড পড়ার সুযোগ থাকলেও শেষ পর্যায়ে এসে শুধু গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো ছাড়া অন্য কোন এক্সট্রা টপিক পড়ার সুযোগ থাকে না এবং উচিত নয়। আর এই সময়টা হচ্ছে আগের ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার সময়। ডেইলি-উইকলি পেপার ফাইনাল সাবজেক্ট ফাইনাল এবং মডেল টেস্টগুলোর থেকে যে ভুলগুলো হবে তা শুধরে নেয়া এই পর্বের এর কাজ। তাছাড়া এ সময়ে সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে আপডেট থাকা ও ইংরেজির ভোকাবুলারিগুলো বারবার আত্মস্থ করতে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এই সময়ে আপনার প্রস্তুতি এবং রুটিন কেমন ছিল, জানতে চাই?

ফাইজুস সালেহীন: আসলে পড়াশোনার মেথড, প্রসেস ও রুটিন একেকজনের একেক রকম। যদি একান্ত আমার নিজের প্রসঙ্গ আলোচনায় আসে সেক্ষেত্রে এডমিশন প্রস্তুতি শুরু থেকে শেষ পর্যন্তই ৬ ঘণ্টা ঘুম, দুই ঘণ্টা দৈনন্দিন কাজ ও নামাজ এবং বাকি সময়টুকু পুরোটাই পড়াশোনায় বরাদ্দ রাখতাম।

এই সময়ে পুরো বইয়ের সব কিছু না পড়ে শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো বারবার পড়ার চেষ্টা করতাম এবং পূর্বের দেয়া পরীক্ষাগুলোর ভুল ত্রুটিগুলো বইয়ে দাগিয়ে রাখতাম। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পরীক্ষার আগের রাত এবং সকালে কেন্দ্রে পৌঁছা পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীর করণীয় সম্পর্কে বলুন।

ফাইজুস সালেহীন: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা শুধুমাত্র পড়া আত্মস্থ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এখানে মনস্তত্ত্ব একটা বড় জায়গা জুড়ে বিচরণ করে। মাথা ঠান্ডা রেখে পুরো পরীক্ষা সম্পূর্ণ করার মাধ্যমেই চান্স পাওয়ার হার অনেকাংশেই নিশ্চিত করা যায়। তাই এডমিশন পেজ এর শুরু থেকে ভর্তি পরীক্ষাকে বড় একটি পরীক্ষা হিসেবে মাথায় রাখলেও পরীক্ষার আগের দিন পরীক্ষাটিকে একদমই সাধারণ একটি পরীক্ষা হিসেবে চিন্তা করতে হবে। অর্থাৎ একটুও চাপ নেওয়া যাবে না। তাছাড়া আগের দিন তেমন একটা চাপ নিয়ে পড়া উচিত নয় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে। আগের দিন রাতেই পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু গুছিয়ে টেবিলের সেট করে রাখতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে নিজের পারা প্রশ্নগুলো বা টপিকগুলো একটু রিভিশন দিয়ে কনফিডেন্স এর জায়গাটা পাকাপোক্ত করে নিতে হবে। প্রতিটি পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই নাস্তা করে যেতে হবে, কারণ আমরা জানি মস্তিষ্ক কার্যকর রাখার  প্রধান চালিকাশক্তি  গ্লুকোজ। তাই খালি পেটে পরীক্ষার হলে গেলে অনেক সময় চিন্তাশক্তি লোপ  পেয়ে  অনেক সহজ প্রশ্নের উত্তরও ভুলে যেতে পারে। পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশের নির্দিষ্ট সময়ের অন্তত ৩০ মিনিট আগে যথাস্থানে পৌঁছানো যায় এমনভাবে রওনা করতে হবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পরীক্ষার কেন্দ্রে সময় ব্যবস্থাপনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং তা কীভাবে দক্ষতার সাথে করা উচিত?
ফাইজুস সালেহীন: শুধু পরীক্ষা নয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সময়ের সুব্যবস্থাপনাই এনে দিতে পারে কাঙ্খিত সাফল্য। মাত্র ৬০ মিনিটে ১০০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন রোল রেজিস্ট্রেশন পূরণ সহকারে শেষ করতে সময়ের অত্যন্ত দক্ষ প্রয়োগ প্রয়োজন। প্রশ্নপত্র পাওয়ার পরে খুব ঠান্ডা মাথায় রেজিস্ট্রেশন রোল এসব ফর্মালিটিগুলো  পূরণ করতে হবে যাতে কোন ভুল না হয়। 

মনে রাখবে তুমি খুব ভালো পরীক্ষা দিলে কিন্তু তোমার রেজিস্ট্রেশন বা রোল নম্বরে ভুল হয়ে গেল তাহলে তোমার জীবনের এই বড় সুযোগ তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। এগুলো পূরণের সময় কোথাও ভুল হলে কাটা ছেঁড়া না করে অবশ্যই দায়িত্বরত শিক্ষককে জানাবে। ফরমালিটিজ গুলো পূরণ হয়ে গেলে এবার ঠান্ডা মাথায় প্রশ্ন পড়া শুরু করবে এবং সে অনুযায়ী OMR ফরমে দাগানো আরম্ভ করবে। খেয়াল রাখবে প্রশ্নের নাম্বার এবং OMR এর নাম্বার যাতে সঠিক হয়। প্রথমে এক নজরে ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত পড়ে ফেলবে এবং যেগুলো সহজ সেগুলো দাগিয়ে ফেলবে।

দ্বিতীয় ধাপে তুলনামূলক কঠিন প্রশ্নগুলো চিন্তাভাবনা করে দাগাবে। আন্দাজে দাগানোটা একদমই ঠিক হবে না কারণ প্রতিটি প্রশ্নের ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ করে নাম্বার কাটা হবে। তাই যেচে নিজের বিপদ আনতে যাবে না। কোন প্রশ্ন যদি প্রথম দেখায় না পারো তাহলে সেটা নিয়ে নার্ভাস হওয়া যাবে না দ্রুতই পরের  প্রশ্ন চলে যাবে। ম্যাথগুলো প্রথমেই উত্তর করতে পারো। কাঙ্খিত সময়ের ৫ মিনিট আগে পরীক্ষা শেষ করবে এবং তারপর চেক করবে কোন ভুল হয়েছে কিনা। আশা করি, এভাবেই তোমার পরীক্ষাটি খুব ভালোভাবে সম্পন্ন হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় একটু স্নায়ু চাপ থাকে, পরীক্ষার আগে মানসিক চাপ কমাতে কি পরামর্শ দিবেন?

ফাইজুস সালেহীন: যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় মানসিক চাপ থাকাটাই স্বাভাবিক। এ চাপ কমানোর জন্য প্রথমত আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে পরীক্ষা দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, পরীক্ষার আগের দিনরাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে। তৃতীয়ত পরীক্ষাটিকে একদমই সাধারণ একটি পরীক্ষা হিসেবে মাথায় নিতে হবে। মনে রাখবে পরীক্ষার আগের দিন এবং পরীক্ষার দিন পরীক্ষার বিষয়ে ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ে আলোচনা করবে না। তা না হলে তোমার ফোকাস নষ্ট হবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রস্তুতির বাইরে প্রশ্ন চলে আসলে করণীয় কি হবে?

ফাইজুস সালেহীন: প্রস্তুতির বাহিরে প্রশ্ন চলে আসলে ঘাবড়ে যাওয়া যাবে না একদম। তা না হলে তোমার পরবর্তী প্রশ্নগুলো তুমি ভুলে যেতে পারো। তুমি মনে করবে যে, যে প্রশ্নটি তুমি পারছ না বা কঠিন সেটি শুধু তোমার জন্য নয় বরং সবার জন্যই কঠিন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা বা সহায়ক কারা ছিলেন?

ফাইজুস সালেহীন: আমার সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় ইচ্ছা আমার মহান আল্লাহ তাআলার। তারপর আমার বাবা-মা এবং ভাইয়ের অনুপ্রেরণা। তবে এ পথের অন্যতম সহায়ক ছিল এডমিশন সময়ের কোচিং এর ইন্সট্রাক্টর ও মেন্টর ভাইয়া আপুরা। তাদের সঠিক দিক নির্দেশনা আমাকে নির্ভুল পথে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। তাদের সকলের জন্য আমার অন্তর থেকে দোয়া থাকবে। সবশেষে থাকবে আমার ছোট ভাইবোনদের জন্য আন্তরিক দোয়া ও শুভকামনা। সাদা অ্যাপ্রোন জয়ের অদম্য লড়াইয়ের তোমরাই হও বিজয়ী এই কামনাই থাকলো।