০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:৩৩

‘দক্ষ আইটি এক্সপার্ট তৈরিতে সময়োপযোগী কাজগুলো করবে ইউআইইউ’র সিডিআইপি’

ড. সুমন আহমেদ  © ফাইল ফটো

ড. সুমন আহমেদ। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অব আইটি প্রফেশনালসের (সিডিআইপি) পরিচালক হিসেবে। এছাড়াও তিনি উচ্চশিক্ষালয়টির কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপকও তিনি। সম্প্রতি সেন্টারটির নানা বিষয় নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। গল্প-আলাপেত তার চৌম্বক অংশ তুলে ধরেছেন সংবাদ মাধ্যমটির নিজস্ব প্রতিবেদক খাঁন মুহাম্মদ মামুন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইউআইইউ’র সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অব আইটি প্রফেশানলস (সিডিআইপি) কী নিয়ে কাজ করে? কেন এটি প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলেন?

আমাদের ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীই দেশের এবং দেশের বাইরের বিভিন্ন তথ্য-প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। ইউআইইউ থেকে স্নাতকের পর সিডিআইপি থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন শিক্ষার্থীও বেকার বা কাজ পাননি—এমন নেই: ড. সুমন আহম্মেদ

ড. সুমন আহম্মেদ: আমার শিক্ষকতার শুরু থেকে আমাদের শিক্ষার্থীদের বাজার উপযোগী করে গড়ে তোলার বিষয়টি নজর দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের শিক্ষার্থীদের বাজার উপযোগী গ্র‌্যাজুয়েট হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অব আইটি প্রফেশানলস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখানে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে তরুণ শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছি। যেখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা ‘ইন্ড্রাস্ট্রি প্র‌্যাক্টিস’গুলো এখানে শেখার সুযোগ পাচ্ছেন। আইটি ইন্ড্রাস্ট্রির জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করতেই আমাদের সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অব আইটি প্রফেশানলস বা সিডিআইপি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান প্রাপ্তিতে ইউআইইউ’র সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অব আইটি প্রফেশানলস (সিডিআইপি) মূলত কোন কোন বিষয়ে জোর দেয়?

ড. সুমন আহমেদ: আমরা এখানে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং সফটওয়্যার কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স অ্যান্ড টেস্টিং অর্থাৎ এসকিইউ নিয়ে কাজ করছি। বাংলাদেশের কোনো শিক্ষার্থী এ বিষয়গুলো কাজ করতে চাইলে তারা এখান থেকে শিখতে পারেন। এখানে সাধারণত শিক্ষার্থীরা তাদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো চার থেকে ছয় মাসের মধ্যেই শেষ করতে পারেন। এখানে আমরা সময়সীমার মধ্যে আবদ্ধ না থেকে তরুণ শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে জোর দেওয়ার চেষ্টা করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সিডিআইপি কোন বিষয়গুলো শেখায়?

ড. সুমন আহম্মেদ: এখানে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার আমরা প্রথেমেই শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত কাজের ক্ষেত্র নিয়ে জানতে চেষ্টা করি। এরপর তার জীবনবৃত্তান্ত একদম বাজার উপযোগী করি। এরপর শিক্ষার্থীরা বাজার উপযোগী বিভিন্ন কোর্স শিখতে শুরু করে। এখানে আমরা প্রজেক্ট বেইজড কাজ করে থাকি। শিক্ষার্থীরা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং টেস্টিং নিয়ে তারা কাজ করার সুযোগ পান এবং নিজেদের দক্ষতা উন্নয়ন করতে পারেন। তরুণদের আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করতে এখানে ‘ইন্ড্রাস্ট্রি প্র্যাক্টিস’ তাদের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা হিসেবে কাজ করে।

আরও পড়ুন: টেকসই উন্নয়নে নেতৃত্ব দিতে তৈরি হচ্ছে ইউআইইউ’র এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখানকার প্রশিক্ষণার্থীরা কতটুকু হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পান?

ড. সুমন আহম্মেদ: সিডিআইপিতে যত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন—তাদের ৮০ শতাংশই সফলভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পেয়েছেন। ইউআইইউ যেমন মানের ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি রাখে না, তেমনি সিডিআইপিও তার শিক্ষার্থীদের জন্য বাস্তবধর্মী অভিজ্ঞতাগুলো শেখানোর চেষ্টা করে। ফলে তারা ‘ইন্ড্রাস্ট্রি কালচার’ সম্পর্কে বিস্তারিত শেখার সুযোগ পান।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের সাফল্যের হার কেমন?

ড. সুমন আহম্মেদ: আমাদের ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীই দেশের এবং দেশের বাইরের বিভিন্ন তথ্য-প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। ইউআইইউ থেকে স্নাতকের পর সিডিআইপি থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন শিক্ষার্থীও বেকার বা কাজ পাননি—এমন নেই। এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের কাছ থেকে জনবল চাচ্ছে, কিন্তু আমরা দেওয়ার মতো সিভি পাচ্ছি না। বাজারে চাহিদা আছে, আমরা দক্ষ জনবল সরবরাহ করতে পারছি না।

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস  © টিডিসি ফটো

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইউআইইউতে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য ল্যাব সুবিধাসহ আর কী কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে?

ড. সুমন আহম্মেদ: এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য ২৫টিরও বেশি কম্পিউটারসহ বিভিন্ন ল্যাব রয়েছে। এসব ল্যাবে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতার উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ পান। শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে শুক্র এবং শনিবার ক্লাস রাখা হয়েছে। এছাড়াও ইউআইইউ’র শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে ক্লাস করার জন্য শনিবার কোনো ক্লাস রাখা হয়নি; ফলে এখানকার ক্লাস শেষ করেই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ ব্যবহারের সুযোগ পান। পাশাপাশি ইউআইইউ’র বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাগুলোও শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একাডেমিক শিক্ষার বাইরে সিডিআইপি কেন?

ড. সুমন আহম্মেদ: শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু প্রাক্টিক্যাল করানো হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ‘ইন্ডাস্ট্রি’র বাস্তব অভিজ্ঞতা গ্রহণের সুযোগ পান না। সিডিআইপি এর বাইরে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার্থীদের ইন্ডাস্ট্রির বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পান। ফলে তারা অন্যান্য প্রতিযোগী বা প্রার্থীদের তুলনার এগিয়ে থাকেন। আমরা মূলত—প্রশিক্ষণার্থীদের ‘রিয়েল টাইম ইন্ডাস্ট্রি এক্সপেরিয়েন্স’ দিতে চাই সিডিআইপিতে।

আরও পড়ুন: কিউএস এশিয়া র‍্যাঙ্কিংয়ে আরেক ধাপ এগোল ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনিভার্সিটি

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এই সেন্টারে ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা কেমন?

ড. সুমন আহম্মেদ: আমরা দেশের বিভিন্ন টেক-প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজের পাশাপাশি দেশের বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথেও কাজ করছি। আমাদের একজন শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানিতে রয়েছেন—তাদের সাথে আমাদের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে। এটি করতে পারলে, আমরা দেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কাজ করছি এবং আগামীদিনে এটি আরও বাড়বে। ফলে আমাদের শিক্ষার্থীরা আরও বেশি চাকরির সুযোগ পাবেন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইউআইইউ’র বাইরের শিক্ষার্থীরা এতে সুযোগ পান?

আমাদের একজন শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানিতে রয়েছেন—তাদের সাথে আমাদের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে। এটি করতে পারলে, আমরা দেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কাজ করছি এবং আগামীদিনে এটি আরও বাড়বে। ফলে আমাদের শিক্ষার্থীরা আরও বেশি চাকরির সুযোগ পাবেন।

ড. সুমন আহম্মেদ: এখানে ইউআইইউ’র নিজস্ব শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এখানে শেখার সুযোগ পান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়—ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই বাইরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছেন। আমরা বিশ্বাস করি—সব শিক্ষার্থীরই শেখার যোগ্যতা আছে, সেজন্য আমরা এখানে সকল শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার সুযোগ দিচ্ছি। তারা ইউআইইউ থেকে সার্টিফিকেট পান।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: তরুণদের মধ্য কোন ঘাটতিগুলো বেশি দেখেন যেগুলো অ্যাড্রেস করা দরকার?

ড. সুমন আহম্মেদ: আমি শেষ বর্ষের দিকে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করি। তখন শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাই—তারা কী হতে চায়। তখন দেখা যায় যে, অধিকাংশ শিক্ষার্থী তার কোনো জবাব দিতে পারেন না। আমাদের এটি নিয়ে কাজ করা দরকার। শিক্ষার্থীদের তার গন্তব্য জানতে হবে, নিজের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার পাশাপাশি তাদের নিজেদের প্রতিও আরও বেশি যত্নবান হতে হবে। আমাদের ইউআইইউ’র শিক্ষার্থীরা যে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে পড়াশোনা শেষ করে, তার পাশাপাশি এখানে কোর্স করতে পারলে শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন: ইউআইইউ’র স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনোমিক্সকে সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে যেতে চাই

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সিডিআইপি নিয়ে আগামীর পরিকল্পনাগুলো কী?

ড. সুমন আহম্মেদ: আমরা দেশের এবং দেশের বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করছি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এক্সপার্টরা আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে অচিরেই একটি চুক্তি করতে যাচ্ছি—এটি আরও বাড়ানো হবে।

এছাড়াও আমরা সিডিআইপিতে কোর্স-কারিকুলামগুলো প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করতে চাই—যেন আমাদের শিক্ষার্থীরা আরও বেশি এগিয়ে থাকতে পারেন। আর নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে আমরা আরও বেশি সচেতনভাবে কাজ করতে চাই। এর বাইরে—দেশের এবং দেশের বাইরের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আরও বেশি যোগাযোগ বাড়তে চাই, যেন আমাদের শিক্ষার্থীরা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি এগিয়ে থাকতে পারেন। সেজন্য আমরা সবার সহযোগিতা চাই।