বিশেষ সাক্ষাৎকারে নুর
তরুণদের চাওয়া বুঝতে হবে রাজনীতিকদের
- নুর হোসেন ইমন, ঢাবি
- প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০১৮, ০৭:১১ PM , আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৮, ১২:২৬ PM
ক্রমশ বেগবান হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া। নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের ইশতেহারে থাকবে নানা চমক। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তরুণ সমাজ কী চায়; তা জানিয়ে তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা তুলে ধরবে কোটা আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। কিন্তু তরুণ সমাজের এই ইশতেহারে কী থাকছে দাবি-দাওয়া? রাজনীতিকদের কাছে তাদের চাওয়াটাই বা কী? এসব নিয়েই বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর-এর মুখোমুখি হয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি- নুর হোসেন ইমন
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রণীত ‘তারুণ্যের ইশতেহার’ সম্পর্কে কিছু বলুন।
নুরুল হক নুর: রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনকে সামনে রেখে ইশতেহার ঘোষণা করে থাকে। সেখানে তরুণ প্রজন্মের ভাবনাগুলো কী হতে পারে তা নিয়ে আমরা “তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা” নামে তরুণ প্রজন্মের দাবি-দাওয়া তুলে ধরব।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইশতেহারে কোন দাবিগুলো প্রাধান্য পাবে?
নুরুল হক নুর: দেশকে এগিয়ে নিতে হলে তরুণ প্রজন্মকে সুষ্ঠু ধারা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে বেড়ে উঠার সুযোগ দিতে হবে। তাদেরকে কীভাবে সুষ্ঠ ধারার রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তাদের মাধ্যমে কীভাবে দেশের কল্যাণের জন্য সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা যায় সেটা থাকবে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন শেষ করে তাদের জন্য কর্মসংস্থানের বিষয়টি থাকবে। সরকারি নিয়োগে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কীভাবে মেধাবীদের সুযোগ দেয়া হয়; সেটা নিয়েও আমাদের প্রস্তাব থাকবে।
আপনারা লক্ষ্য করলে দেখবেন, দেশে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আজ রাজনৈতিককরণ করা হচ্ছে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হতে হলে রাজনৈতিক লেজুড়ভিত্তি করতে হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়াকে প্রাধান্য না দিয়ে দলীয় এজেন্ডা বাস্তাবায়নের চেষ্টা করা হয়। তাই আমাদের ভাবনায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের দাবিও থাকবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কোটা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও হামলাকারীদের বিচারের দাবি অন্তর্ভুক্ত থাকছে কিনা?
নুরুল হক নুর: সংবাদ মাধ্যমের প্রকাশিত খবরে হামলা কারা করেছে তাদের পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে। তাদের বিচারের এবং শিক্ষার্থীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আমরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি। সরকার যদি মামলাগুলো প্রত্যাহার করে না নেয় তাহলে আমরা পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা করব। তবে তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনায় বিষয়টি অন্তর্ভুত করা হবে না।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইশতেহার প্রণেতা কারা?
নুরুল হক নুর: তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা শুধু বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক বা যুগ্ম আহ্বায়কদের মতামতের ভিত্তিতে হবে না। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে সারা দেশের তরুণ সমাজের সাথে আমাদের একটি কানেক্টিভিটি তৈরি হয়েছে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ফলে কলেজ লেভেলের শিক্ষার্থীদের সাথে আমাদের একটি সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আমরা চাইব যত বেশি শিক্ষার্থীকে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। প্রয়োজনে আমরা একটি কমিটি করে তরুণ শিক্ষার্থীদের ভাবনাগুলোকে একত্রিত করার চেষ্টা করবো।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নির্বাচন নিয়ে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা জানতে চাই।
নুরুল হক নুর: ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারের পতনের মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু আমরা দেখেছি এদেশে যারাই ক্ষমতায় যায় তারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য আরেক ধরণের স্বৈরাচারী ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। স্বৈরাচারের আমলেও এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিলো। কিন্তু তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকারগুলো একবারও ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়নি। কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল এদেশের ছাত্রসমাজ স্বচ্ছ বা সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারায় বিশ্বাসী হবে। তাদেরকে দিয়ে হীন দলীয় স্বার্থ উদ্বার করা যাবে না। এ কারণেই এসব সরকারগুলো ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছিল। ছাত্র সংসদ নির্বাচন নাই; এটা আরেক ধরণের স্বৈারাচার। ছাত্রসমাজ এটা গ্রহণ করে না। আমরা চাই এদেশের শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশে বেড়ে উঠুক।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনারা কেমন নির্বাচন চান?
নুরুল হক নুর: ৫ বছর পর নির্বাচন এলেই এক ধরণের সংকট তৈরি হয়। সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা এখানে গড়ে উঠেনি। একদল ক্ষমতায় গেলে আরেকদল লগি-বৈঠা নিয়ে আন্দোলন করে আবার তারা ক্ষমতায় গেলে অন্য দল জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করে। আসলে এদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। যারা বিরোধী দলে থাকে তারা সবসময় মানবাধিকার, হত্যা, গুম, খুন নিয়ে কথা বলে; আবার ক্ষমতায় গেলে তারাও সেটাই করে। সত্যিকার অর্থে এদেশের তরুণ সমাজ একটি নৈতিক ও গুণগত পরিবর্তন চায়।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: তরুণ ভোটারদের ভোট নির্বাচনে কেমন প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন?
নুরুল হক নুর: সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে তরুণ ভোটারদের ভোট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০০৮ সালে “দিন বদলের সনদ” নামে আওয়ামী লীগ তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করেছিলো তা বিজয়ে প্রভাব ফেলেছে। এবার মোট ভোটারের একটা বৃহৎ অংশ, প্রায় ৪ কোটি ২০ লাখ ভোটার তরুণ। আমি মনে করি তাদের ভোট জয়-পরাজয়ে অন্যতম ভূমিকা পালন করবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কবে নাগাদ প্রকাশ হবে ইশতেহার?
নুরুল হক নুর: শনিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করার সম্ভাবনা রয়েছে। সেভাবেই কাজ চলছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কোথায় সংবাদ সম্মেলন করবেন?
নুরুল হক নুর: স্থান নির্ধারণ হয়নি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা জাতীয় প্রেসক্লাবে করার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থ্যাৎ যেখানেই অডিটোরিয়াম বা রুম পাব; সেখানেই করব।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সাক্ষাৎকারের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
নুরুল হক নুর: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ।