দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির নেতৃত্ব দেবে চামড়া শিল্প
দেশের অর্থনীতিতে চামড়া শিল্পের অবদানের কথা চিন্তা করে এবং এই খাতে দক্ষ জনবল গড়ে উঠে তোলার লক্ষে ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইস্ট বেঙ্গল ট্যানিং সেন্টার। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উন্নত সিলেবাসের মাধ্যমে ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্টিটিউট কলেজ হিসেবে উন্নীত করা হয়। ২০১১ সালের ২০ই জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্বতন্ত্র ইনস্টিটিউট হিসেবে যাত্রা শুরু করে। চলতি বছরের ২২ নভেম্বর ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ শামসুদ্দিনকে। বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের ভবিষ্যৎ ও এ খাতে তরুণ শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস এর সাথে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি- নুর হোসেন ইমন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজির পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। কেমন লাগছে?
অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ শামছুদ্দিন: অনুভূতি নিঃসন্দেহে ভালো। আমি আমার অর্জিত জ্ঞানকে এ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কাজে লাগানোর সুযোগ তৈরী হয়েছে। বিষয়টি আমার জন্য ইতিবাচক।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার শিক্ষা ও কর্মজীবন নিয়ে বলুন।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ শামছুদ্দিন: আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি বিভাগ থেকে পড়ালেখা শেষ করে ওই বিভাগেই প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করি। এর চারমাস পর সরকারি বৃত্তি নিয়ে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য জাপান যাই। সেখান থেকে ফিরে আসার পর ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে আবার চাকরি জীবন শুরু করি। এখানে নিয়োগ পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ওই বিভাগেই অধ্যাপক হিসেবে ছিলাম। সেখানে ৩ বছর চেয়ারম্যান ও ১ বছর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইনিস্টিটিউটে কোন ধরণের শিক্ষার্থীদের আপনারা পাচ্ছেন। তরুণ শিক্ষার্থীরা এ সেক্টরে শিক্ষাগ্রহণে উৎসাহিত হচ্ছে কিনা?
অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ শামছুদ্দিন: দেশের সর্বোচ্চ মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকেই আমরা পাচ্ছি। এ ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ক’ ইউনিটের মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়ে আসতে হয়। আমরা ৩টি বিভাগে মোট ১৫০ জন শিক্ষার্থী প্রতি বছর ভর্তি করিয়ে থাকি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইনিস্টিটিউটের সফলতার দিকগুলো কি কি?
অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ শামছুদ্দিন: চামড়া এবং চামড়াজাত দ্রব্য শিল্প হিসেবে গড়ে উঠার পিছনে এখানকার শিক্ষার্থীদের অবদান সবচেয়ে বেশী। এ শিল্পের বাজার তৈরিতে আমাদের শিক্ষার্থীরা অবদান রেখে যাচ্ছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইনস্টিটিউট দেশের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনবল তৈরী করতে পারছে কিনা?
অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ শামছুদ্দিন: আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে দক্ষ লোকবল লেদার ইন্ডাস্ট্রিতে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। আমাদের এখনও গবেষণা সংক্রান্ত কিছু সংকট রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকেও জ্ঞান বিনিময়ের কার্যক্রমের পরিকল্পনা আছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: চামড়া শিল্পের আগামী দিনের সম্ভাবনাগুলো কি কি?
অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ শামছুদ্দিন: চামড়া শিল্পে আগামী দিনে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এ শিল্পের প্রচুর পরিমাণ কাঁচামাল সুলভমূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। কাপড় এবং উল দিয়ে যা যা বানানো যায় চামড়া দিয়েও এসব কিছু বানানো সম্ভব। আমরা যদি চামড়ার সঠিক ব্যাবহার নিশ্চিত করতে পারি তাহলে আমাদের আর উল আমদানি করতে হবে না। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করা গেলে আগামী দিনে চামড়া শিল্প দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছি। চামড়া শিল্পের জন্য দেশে আরও দু’টি শিল্প নগরীর সরকার ঘোষণা দিয়েছে। আগামী দিনে দেশের অর্থনীতিতে নের্তৃত্ব দিবে চামড়া শিল্প।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দেশের চামড়া শিল্পের বাধাগুলো কি কি?
অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ শামছুদ্দিন: এ শিল্পের অনেক কেমিকেল দেশে পাওয়া যায়না। এক্ষেত্রে এগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমাদের চামড়া শিল্প যদি আরও বিকশিত হয় সে ধরণের ক্যামিকেলগুলো দেশে উৎপাদন করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এ শিল্পের বিকাশে আগামী দিনে কোন কোন পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?
অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ শামছুদ্দিন: আমরা আমাদের চামড়ার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারছি না। এজন্য দেশের চামড়া অনেক সময় পাচার হয়ে যায়। এদেশে যদি চামড়ার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় এবং চামড়ার সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব হয় তাহলে এ শিল্পের বিকাশ আরও টেকসই হবে। শিল্প, শিক্ষা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সমন্বিত কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: চামড়া শিল্পে দক্ষ জনবল তৈরীতে ইনস্টিটিউটে আর কী কী কাজ করা যেতে পারে?
অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ শামছুদ্দিন: আমাদের উন্নত প্রযুক্তি ও গবেষনার জন্য আরও কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জ্ঞান ও দক্ষতা বিনিময়ে বিশ্বের উন্নত প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে একসাথে কাজ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখান থেকে পড়ালেখা করে শিক্ষার্থীরা আর কোন কোন ক্ষেত্রে অবদান রাখছে?
অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ শামছুদ্দিন: আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশের উন্নত সব সেক্টরেই কাজ করছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়েও এখানকার শিক্ষার্থীরা নের্তৃত্ব দিচ্ছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষার্থীরা কেন এখানে ভর্তি হবে ?
অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ শামছুদ্দিন: সব শিল্প খাতেই এখানকার শিক্ষার্থীরা সহজেই প্রবেশ করতে পারছে। এখানকার ক্যারিয়ার অনেক সম্ভাবনাময় এবং এ খাতে উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা যদি ধৈর্য ধরে পড়ালেখা করে এখান থেকে তারা সফল জীবনের স্বপ্ন দেখতে পারবে বলে আশা করছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে ধন্যবাদ।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ শামছুদ্দিন: আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।