ক্যাম্পাসকে র্যাগিং ও মাদকমুক্ত ঘোষণা করা হবে শিগগিরই
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান। অধ্যাপনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। গত মাসে দ্বিতীয় মেয়াদে তার প্রশাসনিক দায়িত্বের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি রোধ, ক্যাম্পাসে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা, যেকোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা রোধসহ ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে দৃঢ়তার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস এর সাথে। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এ আর রাশেদ।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সফল প্রক্টর হিসেবে আপনি তিন বছর পূর্ণ করেছেন, এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি কী?
ড. মাহবুবর রহমান: প্রক্টর হিসেবে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব শতভাগ নিষ্ঠা, সততা ও দক্ষতার সাথে পালনের চেষ্টা করছি। দায়িত্ব পালনে আমি সফল না ব্যর্থ তা শিক্ষক-শিক্ষার্থীনা বিচার করবেন। দায়িত্ব পালনকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সকল পর্যায়ের মানুষ আমাকে যেভাবে সহযোগিতা করছেন এজন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। সকলের সহযোগিতা ও ভালবাসায় নিজেকে ধন্য মনে করি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এই তিন বছরে আপনার সবচেয়ে বড় সফলতা কোনটি বলে মনে করেন?
ড. মাহবুবর রহমান: মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, ট্রেজারার, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, সাংবাদিক, ছাত্র-ছাত্রী এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকল পর্যায়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সার্বিক সহযোগিতায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। একইসাথে ক্যাম্পাসে প্রগতিশীল চর্চার উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তুলতেও সক্ষম হয়েছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ঠেকাতে আপনার ভূমিকা কি ছিল?
ড. মাহবুবর রহমান: ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ঠেকাতে আমিসহ প্রক্টরিয়াল বডির ভূমিকা ইতোমধ্যে পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে দেশবাসী জেনেছেন। পুরো ক্যাম্পাস সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। ক্যাম্পাসে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছিল। প্রধান ফটকসহ পরীক্ষার হলের প্রবেশ পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রক্টরিয়াল বডি এবং বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট গ্রুপের সদস্যদের সমন্বয়ে কয়েক ধাপে চেকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ভ্রাম্যমান আদালত এবং প্রক্টরিয়াল বডি সার্বক্ষণিক টহলে ছিল। পরীক্ষার হলে সকল প্রকার ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: গত দুই বছরে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনায় এক দিনও ক্যাম্পাস বন্ধ থাকেনি। এতে প্রক্টর হিসেবে আপনার ভূমিকা কি ছিল?
ড. মাহবুবর রহমান: কোন সমস্যা পাশ না কাটিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে সকল ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সহাবস্থান বজায় রেখে চলার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইবি পরিবারের যে কোন সমস্যা দেখা দিলেই প্রক্টরিয়াল বডি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করছে। আমি মনে করি ক্যাম্পাস শান্ত থাকার এটি একটি বড় কারণ।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: অনেকে মনে করেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় এক সময় প্রতিক্রিয়াশীলদের দখলে ছিল। সেই অবস্থা থেকে ক্যাম্পাসকে কতটুকু মুক্ত করতে পেরেছেন? আপনার পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে বলুন।
ড. মাহবুবর রহমান: মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে সোনার বাংলা গড়তে যে কর্মসূচী ঘোষণা দিয়েছেন আমরা তা শতভাগ বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। এ ধারাবাহিকতায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শতভাগ বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ক্যাম্পাসে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনায় আপনার ভূমিকা ও ক্যাম্পাসকে সম্পূর্ণ মাদক মুক্ত করতে আপনার কোন পরিকল্পনা আছে কিনা?
ড. মাহবুবর রহমান: মাদক একটি জাতিকে খুব সহজেই ধ্বংস করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের বসে থাকার কোন সুযোগ নেই। অবশ্যই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে সম্পূর্ণ মাদক মুক্ত করতে চাই। ক্যাম্পাসে মাদক বিরোধী অভিযান চলমান আছে। চলমান থাকবে। এছাড়া মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক সেমিনার, আলোচনা সভা, দেশের সর্ববৃহৎ র্যালিসহ প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ অব্যাহত থাকছে। অচিরেই আমরা ক্যাম্পাসকে র্যাগিং ও মাদক মুক্ত ঘোষনা করতে পারবো বলে আমি মনে করি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে আপনার পরিকল্পনা কি?
ড. মাহবুবর রহমান: যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য প্রযুক্তির অধিক ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমান প্রশাসন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিকীকরণের স্বপ্ন দেখছে, এই আন্তর্জাতিকীকরণে প্রক্টর হিসেবে আপনি প্রশাসনকে কিভাবে সহযোগিতা করছেন?
ড. মাহবুবর রহমান: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিকীকরণের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রশাসনের সাথে নিরলসভাবে কাজ করছি এবং সকল নির্দেশ পালন করছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এই তিন বছরের পথচলায় আপনার বড় প্রাপ্তি কি?
ড. মাহবুবর রহমান: সকলের আন্তরিক ভালবাসা এবং প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তথ্য প্রাপ্তির জন্য একটি শক্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছি। এছাড়া ক্যাম্পাসের মরা গাছের কাঠ (প্রায় এক কোটি টাকা সমমূল্যের) দিয়ে দৃষ্টি নন্দন ফার্নিচার তৈরি করে তা বিভিন্ন বিভাগ ও অফিসে সরবরাহ করা হয়েছে। এটাও আমার সাফল্য বলে মনে করি। এছাড়া গত চারটি ভর্তি পরীক্ষা সম্পূর্ণ নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমি সক্ষম হয়েছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ক্যাম্পাসকে নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
ড. মাহবুবর রহমান: মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিমুক্ত এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতানায় উজ্জ্বীবিত বিশ্বমানের ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. মাহবুবর রহমান: আপনাদেরকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।