সাক্ষাৎকার
অংশগ্রহণমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় ‘প্রতিবন্ধী মন্ত্রণালয়’ জরুরি
সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান ৫৬ শতাংশ কোটা সংস্কার করে যৌক্তিক হারে কোটা সংরক্ষণের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অক্টোবরের শুরুতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিল করে সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১ম ও ২য় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে ৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ আলী হোসাইনের সাথে। মোহাম্মদ আলী হোসাইন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। সাক্ষাৎকারের চম্বুক অংশ পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিনিধি নুর হোসেন ইমন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা কেন প্রয়োজন ?
আলী হোসাইন: প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা শিক্ষাক্ষেত্রে নানা বৈষম্যের শিকার হয়, তারা কমার্স ও সাইন্স পড়তে পারে না। এদেশে তাদের জন্য শিক্ষার যথেষ্ট উপকরণ নেই। রাষ্ট্র তাদের জন্য এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারেনি। রাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ও একটি অংশগ্রহণমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় তাদের জন্য কোটা প্রয়োজন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাদের দাবিগুলো সম্পর্কে বলুন।
আলী হোসাইন: আমরা ১১ ধফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। আমাদের প্রধান দাবিগুলো হলো- প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি ১ম ও ২য় শ্রেণীর চাকরিতে বিনাশর্তে ৫ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা, সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রিলি থেকে কোটা ব্যবস্থা কার্যকর করা, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীতে প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথকভাবে ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা ও প্রতিবন্ধী মন্ত্রণালয় স্থাপন করা।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা সংরক্ষণে সংবিধানের বাধ্যবাধকতা কোন জায়গায় ?
আলী হোসাইন: সংবিধানের ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির জন্য কোটার কথা বলা হয়েছে। আর প্রতিবন্ধীদের জন্য জারি করা ২০১৩ সালের অধ্যাদেশে তাদের জন্য কোটা সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এর আগে প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত ছিলো, কিন্তু এ ১ শতাংশ কোটাও বিভিন্ন সময় খালি রয়ে গেছে । সরকার যদি ১ শতাংশ কোটা দেয় তাহলে কি তা আপনারা মেনে নিবেন?
আলী হোসাইন: কোটা কখনও খালি রয়ে যায়নি, বরং বিভিন্ন সময় প্রতিবন্ধীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। ১ শতাংশ কোটাও আমাদের ভালোভাবে দেয়া হয়নি। সরকার যদি ১ শতাংশ কোটা দেয় তাহলে তা আমরা মেনে নেব না। আমাদের দাবি ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিশেষ নিয়োগের বিধান কিভাবে দেখছেন?
আলী হোসাইন: আমাদের কিসে ভালো হবে কিসে খারাপ হবে সেটা আমরাই বুঝি। বিশেষ নিয়োগ যদি দিতে হয় তাহলে সরকারের উচ্চ নীতি-নির্ধারনী পর্যায়ে প্রতিবন্ধীদের প্রতিনিধি রাখতে হবে এবং প্রতিবন্ধীদের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই বিশেষ নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ‘প্রতিবন্ধী মন্ত্রণালয়’ দাবি সম্পর্কে আর কিছু বলার আছে?
আলী হোসাইন: মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মত করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্যও বিশেষ মন্ত্রণালয়ের দাবি করছি। এবং আমাদের দাবি হলো এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবে একজন প্রতিবন্ধী মানুষ।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আন্দোলন এখন কোন পর্যায়ে আছে এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
আলী হোসাইন: সামনে জাতীয় নির্বাচন তাই আমরা মাঠের কর্মসূচি স্থগিত রেখেছি। তবে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি ও মানববন্ধনের মাধ্যমে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। আগামী ১৩ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কর্মসূচি পালন করব। দাবি আদায় না হলে নির্বাচনের পরে আমরা কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবো।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সরকার থেকে আপনারা কোন ধরণের আশ্বাস পেয়েছেন কি?
আলী হোসাইন: আমরা সমাজকল্যাণমন্ত্রী থেকে আশ্বাস পেয়েছি। তিনি আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন এবং আন্দোলন সক্রিয় রাখতে বলেছেন। আমরা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা জাতীর বিবেকের কাছে খোলা চিঠি দেব।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে ধন্যবাদ
আলী হোসাইন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের কথাগুলো তুলে ধরার জন্য।