০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:৩০

‘পশ্চিমাদের চাপে বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা গৃহীত হয়েছিল’

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক  © ফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনে দেখা দিয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। নতুন প্রশাসন এবং শিক্ষার্থীদের নানান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে এ বিষয়ে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের সাথে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন এম টি রহমান। অনুলিখনে তার চৌম্বক অংশ তুলে ধরেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস।

অনেকদিন ধরেই দেশ একটি জটিল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যতই সময় যাচ্ছে বিষয়গুলো আরও জটিল হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো দেশের এ অবস্থার উন্নতি করতে পারে নি এবং চেষ্টাও করেনি। শেখ হাসিনা অনেক কাজ করেছেন যেগুলো জনগণের দৃষ্টিতে আসে যেমন- পদ্মা সেতু, কর্নফুলী টানেল, মেট্রোরেল ইত্যাদি কিন্তু সমাজের উচ্চ শ্রেণীর নিচের মানুষের জীবনে নানান জটিল সমস্যা দেখে দিয়েছে। এর কিছু পত্র-পত্রিকায় এসেছে কিছু আসেনি। 

এই জুলাই মাসের শেষে এবং আগস্টের প্রথম দিকে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত, যশোর থেকে নেত্রকোণা দেশের সব জায়গায়ই সরকারি সম্পত্তি পোড়ানো হয়েছে নষ্ট করা হয়েছে। শেখ মুজিবের অসংখ্য ছবি নষ্ট করা হয়েছে। ড. ইউনূস সরকারের উপদেষ্টারা কিছু কিছু ধারণা দিলেও স্পষ্ট ধারণা দিচ্ছেন না কীভাবে রাষ্ট্রের এ বিশৃঙ্খল অবস্থা কাটানো যাবে এবং স্বাভাবিক করবে। 

শিক্ষাব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই নষ্ট করে আসছিলো। ২০১০ সালের শিক্ষানীতির পর পাঠ্যপুস্তক-শিক্ষাক্রম সবকিছুই অনুচিত পথে গিয়েছে; উচিত পথে যায়নি। এর সবটাই আমাদের মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্তে হয়নি।

রাষ্ট্রে যে যে অবস্থান আছে যেমন কলকারখানার শ্রমিক এবং মালিক এর সাথে সরকার। শ্রমিকদের অধিকার আদায় হয় এমনভাবে কাজ করতে হবে, সেইসাথে মালিকেরা যেন উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কাজ করে। মালিক-শ্রমিক-সরকারের চেষ্টায় অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো এ ব্যবস্থা করা খুব দরকার এটা এখনো গড়ে ওঠেনি।    

হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর আদেশ-নির্দেশ এবং চাওয়ার মধ্য দিয়ে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউরোপ-আমেরিকার পলিসি পছন্দ করতেন না এবং সেদিকে তিনি যান নি। কিন্তু ওদের চাপে এ শিক্ষাব্যবস্থা গ্রহণ করায় আমাদের জাতীয় শিক্ষার অবনতি হয়েছে, উন্নতি হয়নি। জাতীয় শিক্ষার উন্নতির জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষানীতির পরিবর্তন প্রয়োজন। এ বিষয়ে শিক্ষকদের কথা বলা দরকার।

আরও পড়ুন: শিক্ষা এখন সামাজিক বিভাজনে সহায়তা করছে

বিচার ব্যবস্থার যে অন্ত:সারশূন্য অবস্থা এবং এতোদিন গুরুত্বপূর্ণ সব মামলার রায় যে শেখ হাসিনার ইচ্ছেমতোই হতো এটা এখন অনেকের কাছেই পরিষ্কার। তবে সব মামলার নয়; যেগুলো রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এসব মামলার রায় শেখ হাসিনার ইচ্ছেমতোই হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্ট করতো। এখানে যাদের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। শুধু একাডেমিক না, তাদের সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় অবস্থাও বিবেচনার বিষয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা মোটেই ভালো নয় এটা সবাই বলছে। তবে এ অবস্থার জন্য এককভাবে শিক্ষকরা দায়ী নয়। যখন যে সরকার আসে তারা তাদের দলীয় স্বার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যবহার করে। এর পরিবর্তনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে শিক্ষকদের দাবি করা উচিত। জনসাধারণের মধ্য থেকে শিক্ষানীতি এবং শিক্ষা ব্যবস্থা বিষয়ক মতামত উঠে আসা উচিত। রাজনৈতিকভাবে আমাদের চরম দুরবস্থা কাজ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে অতীতেও কাজ করেছে এখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই এগিয়ে এসে সরকারের কাছে নিজেদের বক্তব্য জানাতে হবে। 

স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরিচালনা করতে যে শিক্ষানীতি দরকার তা এখন নেই। এর উন্নতির জন্য আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে। জনগণকে জাগ্রত করতে হবে এবং সমস্ত রাজনৈতিক বিষয়ের সাথে জনগণকে সম্পৃক্ত রাখতে হবে।