সাক্ষাৎকার
ডিজাইনিংই দেশীয় শিক্ষার প্রধান অন্তরায়
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০১৮, ০৫:২৩ PM , আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮, ০৭:১৬ PM
সম্প্রতি দেশের প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতির নানা প্রসঙ্গ নিয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে মিলিত হন প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. আবদুল হান্নান চৌধুরী। রাজু আলীমের নেওয়া সাক্ষাৎকারটি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস’র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো
প্রশ্ন : গ্রামের অসচ্ছল পরিবারের সন্তানরা বেশি পড়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে?
ড. হান্নান চৌধুরী : আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলাম। এখনও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরে আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে। এদেশের তরুণ মেধাবী গ্রাম থেকে আসা অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনার জায়গা। এই কারণে তারা যে অর্থনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসে তাদের জন্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দারুণ উপযোগী।
প্রশ্ন : কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভনিং শিফটের টিউশন ফি না-কি বেশি?
ড. হান্নান চৌধুরী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে নৈশকালীন প্রোগ্রামগুলো শুরু করেছে, এখানে হাই টিউশন কস্ট নেওয়া হচ্ছে। একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে এর বিরোধিতা করি। আমি মনে করি, রাষ্ট্র যে প্রতিষ্ঠানের সকল খরচ বহন করে এবং যে শিক্ষকরা বা যারা প্রোগ্রাম চালাচ্ছেন তারা যেহেতু তার দায়-দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই তাদের সেই কস্টে ইভিনিংয়ে পড়াতে হবে। তাহলে দায়িত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যাবে গরিব ছেলে-মেয়েদের প্রতি।
প্রশ্ন : বেশিরভাগ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগ শোনা যায় এবং টাকা কামানের মেশিন যেন হয়ে পড়েছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো? বিসিএস পরীক্ষায়ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে?
ড. হান্নান চৌধুরী : বিসিএস আল্টিমেট গোল নয়। ১২-১৩ লাখ টাকার টিউশন ফি বাংলাদেশের একটা বা দুটো ইউনিভার্সিটি ছাড়া কোথাও নেই। কেউ কেউ অনিয়মের সাথে যুক্ত নিচের দিকের প্রাইভেট ইউনিভার্সিগুলো। তাদের মনিটরিংয়ের জন্যে ইউজিসি আছে। যারা সার্টিফিকেটের অনিয়ম করছে তাদের সনদ বাতিল করলেই তো হয়?
প্রশ্ন : মেডিকেল শিক্ষার খরচ অনেক বেশি?
ড. হান্নান চৌধুরী : মেডিকেলে প্রাইভেটে অনেক টাকা নেওয়া হয়। মেডিকেল ডিফারেন্ট কারণ, সেখানে খরচ বেশি। প্রতিবছর ১০-১২ লাখ শিক্ষার্থী বের হয় মাস্টার্স বা গ্রাজুয়েট শেষ করে। সেখানে কতজন বিসিএস কোয়ালিফাই করে? যারা করছে তাদের অবশ্যই আমি অ্যাপ্রিশিয়েট করি। জব মার্কেট হতে হবে একটা ওয়াইড স্কেলে, ইন্ডাস্ট্রি, বিজনেস- সব জায়গায় তরুণ মেধাবীদের জায়গা দিতে হবে দেশে-বিদেশে। তিন-চার বছর পরপর বিসিএসে ৩-৪ হাজার শিক্ষার্থী সুযোগ পায়। এটি পরিসংখ্যানের দিক থেকে কিছুই না। কিন্তু দেশের জন্যে ভালো। কেউ সচিব হবে প্রথম শ্রেণির চাকরি করবে সেই অর্থে গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া টোটাল জব মার্কেটের কথা চিন্তা করলে তা কিছুই না। মাস স্কেলের স্টুডেন্টদের অবস্থা দেখতে হবে, তাদের কীভাবে প্রক্রিয়া করে জব মার্কেটে নেব, তার চিন্তা করতে হবে? এখন কোয়ালিটি প্রসঙ্গে আসি। হ্যাঁ, এটি সত্যি। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ৫-১০টি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকিগুলোর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। সে-বিষয়ে তদারকি করতে ইউজিসি-শিক্ষা মন্ত্রণালয় আছে, এটি দেখভাল করা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এই জায়গায় কাজ করতে হবে।
প্রশ্ন : কারিগরি শিক্ষার জন্য কী করা যেতে পারে?
ড. হান্নান চৌধুরী : আমার ব্যক্তিগত মোটিভটা বলি, আই অ্যাম প্রমোটর অব ইয়ুথ অ্যান্ড চেইঞ্জ মেকার অব ইয়ুথস। আমি সবসময়ই তাদের বলি, আজকের বিশ্বের জন্য যেটা আমাদের দরকার, সেটাই শেখো। হ্যান্ডস অন থিংক জানতে হবে। হ্যাঁ এটা ঠিক, উন্নত বিশ্বে উচ্চ শিক্ষা এমবিএ বা পিএইচডি এত দরকার হয় না। একটা বেসিক জায়গায় কোনো বাচ্চাকে যদি আপনি ট্রেনিং দিতে পারেন তাহলে সে ভালো কিছু করতে পারবে। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ডিজাইনিংয়ে হিউজ প্রবলেম আছে। এটাই প্রধান অন্তরায়। এই জায়গায় আমাদের কাজ করতে হবে।
প্রশ্ন : পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু কিছু সাবজেক্ট আছে, যেগুলোর প্রয়োজনীয়তা বর্তমান বিশ্বে সংকুচিত- এসব বিষয় কি আদৌ চালু রাখার প্রয়োজন আছে?
ড. হান্নান চৌধুরী : এটার দুটো দিক আছে। যেমন ধরেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে যদি আমি আসি। তারা ব্যবসায়ী ধারণা নিয়ে প্রোগ্রামগুলো চালায়, যাতে ফাইন্যান্সিয়ালি সাসটেন হয় সেভাবে মডেল করে। যেমন- আমার বিশ্ববিদ্যালয় প্রাইভেট হলেও ব্যবসা বিভাগ নিয়ে খুব বেশি কনসার্ন না। আমাদের এখানে সায়েন্সের বিষয়গুলো নাম করা- বায়োকেমিস্ট্রি, ফার্মাসি, মাইক্রো বায়োলজি, টেক্সটাইল, পাবলিক হেলথ, নিউট্রিশন। এগুলো আমাদের এখানে খুব ভালো। কারণ আমরা সায়েন্স ফোকাস ইউনিভার্সিটি। কোনো কোনো বিষয়ের প্রয়োজন নেই। এ-রকম বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের সুযোগ বিশ্ববিদ্যালয় রাখতে পারে না।