দেশে ফিরে বিনা পয়সায় পড়াতে এবং গবেষণা করাতে চাই(ভিডিওসহ)
বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের এজ হিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক ড. তাসলিম শাকুর। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে যুক্তরাজ্যে চলে যায়। স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্ন করে সেখানে শিক্ষকতা ও গবেষণা পেশায় নিয়োজিত হন তিনি। শিক্ষকতা ও গবেষণার অভিজ্ঞতা রয়েছে ৩০ বছরেরও বেশি। সম্প্রতি ড. তাসলিম শাকুর দেশে আসলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে তার কথা হয়। এ সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো-
টিডিসি: আপনি কোন বিষয় নিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেছিলেন?
ড. তাসলিম শাকুর: ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক শেষ করি। তারপর স্কলারশীপ নিয়ে বিদেশে যাই। ষেখানে এক বছর স্নাতকোত্তর শেষ করে আবার দেশে ফিরে আসি।
টিডিসি: দেশে ফিরে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হয়েছিলেন?
ড. তাসলিম শাকুর: আমি মেধাবী ছাত্র ছিলাম। এসএসসি ও এইচএসসিতে স্ট্যান্ড করা এবং বুয়েট থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলাম। স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি শেষ করে দেশে ফিরে বুয়েটে শিক্ষকতায় যোগ দেয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সেটা হল না। তবে দেশে ফিরে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্পে ৫ বছরের জন্য যোগদান করেছিলাম। সেটা মেয়াদ শেষ হতে না হতে ওখানকার চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিলাম।
টিডিসি: পিএইচডি করতে আবার কখন বিলেতে গেছেন?
ড. তাসলিম শাকুর: ১৯৮২ সালের দিকে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি করতে আবার বিদেশে যাই। ১৯৮৭ সালে পিএইচডি শেষে সেখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করি। তারপর পরিবারকেও ওখানে নিয়ে যাই।
টিডিসি: পিএইচডিশেষে দেশে ফিরে আসেননি কেন?
ড. তাসলিম শাকুর: দেশে ফিরে বুয়েটে শিক্ষকতায় যোগ দেয়ার ইচ্ছে ছিল। ভাল ফলাফল থাকা সত্ত্বেও সেটা আর হলো না। তখন দেখলাম দ্বিতীয় শ্রেণির একজনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দেশে সেই চর্চাটা এখনও হচ্ছে। এই অবস্থার পরিবর্তন কিভাবে করা যায় সে বিষয়ে ভাবতে হবে। দেশে ক্ষমতার হাতবদল হয় কিন্তু এ পরিবর্তনটা হয় না।
টিডিসি: বিদেশে কয় বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা রয়েছে?
ড. তাসলিম শাকুর: ৩০ বছরেরও বেশী সময় সেখানে শিক্ষকতা ও গবেষণার অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রথম ৫ বছরে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি। পরে বিগত ২৫ বছর ধরে এজ হিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগে শিক্ষকতা করছি। আরও ১০ বছর সেখানে শিক্ষকতা করার সুযোগ রয়েছে।
টিডিসি: আরও ১০ বছর সেখানে শিক্ষকতা করবেন?
ড. তাসলিম শাকুর: না। দেশে আসার আগে আমি বিশ্ববিদ্যলয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি আগামী ডিসেম্বরে চাকরি ছেড়ে দিব। অাগামী বছরে একেবারে দেশে চলে আসবো।
টিডিসি: দেশে কেন আসবেন? এসে কী করবেন?
ড. তাসলিম শাকুর: দেশের বাইরে আমি ৩০ বছরের মতো শিক্ষকতা করছি। ওখানে কয়েক হাজার আমার সাদা চামড়ার ছাত্র রয়েছে। সময় এসেছে আমাদের দেশের গরীব ছাত্রদের জন্য কিছু করার। আমি তাদের বিনা পয়সায় শেখাতে এবং গবেষণা করাতে চাই। আগামী ফেব্রুয়ারিতে দেশে এসে বিনা পয়সায় তাদের পড়াবো। আমাদের দেশের মানুষদেরকে কিছু দেয়ার একটা সুযোগ এসেছে।
টিডিসি: কিভাবে এটা শুরু করবেন?
ড. তাসলিম শাকুর: ঢাকাতে আমার বাবার নিজস্ব জায়গা রয়েছে। ওখানে এটা চালু করবো। এটার নাম হবে ‘নলেজেস উইথআউট বর্ডার’। এটা ‘Doctors Without Borders’ এর ধারণা থেকে নেয়া। এখানে শিক্ষকতা ও গবেষণা করবো। স্থাপত্য, পরিকল্পনা, ভূগোল ও ইংরেজি বিষয়ে বিনা পয়সায় পড়াবো। স্নাতক থেকে উচ্চতর শিক্ষার ছাত্ররা পড়তে পারবে।
টিডিসি: সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন?
ড. তাসলিম শাকুর: আমি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবো না। কিন্তু সরকারিতে পড়াবো। কেননা এখানে গরীব ছাত্ররা পড়ে। দরকার হলে আমি রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনায় গিয়ে বিনা পয়সায় পড়াবো। তারপরও নামীদামী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থের বিনিময়ে পড়াবো না।
টিডিসি: অপনিতো রোহিঙ্গাদের নিয়েও কাজ করেন। এ বিষয়ে কোন অভিজ্ঞতা জানাবেন?
ড. তাসলিম শাকুর: আমি পিএইচডি করেছি বাস্তুহারার উপরে। একাত্তর সালে আমরা যখন ১৮-২০ বছরের তরুণ ছিলাম তখন দেখেছি এ দেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র। তখন ভারত আমাদের অনেককে অাশ্রয় দিয়েছে। ঠিক তেমনি রোহিঙ্গাদেরও আজ একই অবস্থা। ৯-১০ বছরের একটি মেয়েকেও ধর্ষনের শিকার হতে হয়েছে মিয়ানমারে। বিষয়টি শুনে আমার খুব কষ্ট হয়। এজন্য দেশে ও দেশের বাইরে তাদের দুঃখ-দুর্দশা বহিঃবিশ্বে তুলে ধরতে সভা-সেমিনারের উদ্যোগ নিয়েছি। আগামীতে রোহিঙ্গাদের বিষয়গুলো তুলে ধরতে নিউইর্য়ক ও টরেন্টো শহরে কনসার্ট করার পরিকল্পনা করেছি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সেভাবে জর্জ হ্যারিসন করেছিল। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে দেশে ও বিদেশে সচেতনা করতে এ উদ্যোগ নিয়েছি।
টিডিসি: আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. তাসলিম শাকুর: আপনাকেও ধন্যবাদ।