কলঙ্কজনক অধ্যায় থেকে রেহাই পেয়েছে ঢাবি
গত ১২ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষা শুরু ঘন্টাখানেক আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠলেও পরে তা আমলে নেয়নি প্রশাসন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ছাত্র ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ পরীক্ষা বাতিল করে তা পুনরায় নেয়ার দাবি জানায়। এরই মধ্যে প্রশাসন থেকে একটি এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি করলেও তাতেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া যায়। এসবের পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ পরীক্ষা ফল ঘোষণা করে। ঘোষিত এ ফলে ১৮ হাজার ৪০০ জন শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে।
এদিকে, এ পরীক্ষার ফল বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেয়াসহ চার দফা দাবিতে ১৬ অক্টোবর দুপুর ১২টা থেকে অনশন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী আখতার হোসেন। তার এ কর্মসূচিতে সমর্থন জানান ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো। অনশনের এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করানো হয় তাকে। এরপর দীর্ঘ ৫৪ ঘন্টা পরে চিকিৎসকের পরামর্শে অনশন ভাঙ্গেন তিনি।
অবশেষে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন'স কমিটির এক জরুরি সভায় ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় ১৮ হাজার ৪০০ জন শিক্ষার্থীর পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বিষয়ে নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের ঢাবি প্রতিনিধি নুর হোসেন ইমনের সঙ্গে কথা হয় আখতার হোসেনের। এ সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো-
টিডিসি: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা কিভাবে দেখছেন?
আখতার হোসেন: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি খুবই ইতিবাচক। এ সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই। আমি মনে করি, এ সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা স্বীকার করে নিয়েছে। এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে সম্ভব হয়েছে । পাশাপাশি বিগত বছরগুলোতে যারা জালিয়াতি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত তাদের ব্যপারে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিগগির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে আশা রাখছি। মোটকথা, নতুন করে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার মাধ্যমে আমি মনে করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় থেকে রেহাই পেয়েছে।
টিডিসি: প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে একক অবস্থান ও অনশনে যাওয়ার পেছনে কোন বিষয়টি বেশী কাজ করেছে?
আখতার হোসেন: আমি নিজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টা শুনার পর আমি ব্যাপকভাবে মর্মাহত হয়। এর আগেও গত বছর অনেক শিক্ষার্থী জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। যা তখন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। তারপরও সবার বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। এবার অন্তত আমি ভেবেছিলাম, ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠার পর পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু যখন দেখলাম পরীক্ষা বাতিল না করে রেজাল্ট ঘোষণা দিয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তখনই আমি একাই অনশন শুরু করার ডিসিশন নেই।
তাছাড়া আমি ১৪জন ভর্তিচ্ছুকে পড়াতাম। তাদের একজন আমাকে প্রশ্ন করেছিলো, ‘আমরা এত পড়াশোনা করলাম, কিন্তু প্রশ্নফাঁস হওয়ায় আমরা কি চান্স পাব? তাহলে কি আমরা দুর্নীতির কাছে হেরে গেলাম?’। তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারাও আমার এ একক অনশনের পিছনে ভূমিকা রেখেছে।
টিডিসি: প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে প্রথম তেমন জোরালো আন্দোলন হয়নি। আপনি অনশনে যাওয়ার পর অনেকে সমর্থন জানিয়েছে এবং এরপর অনেকেই এ পরীক্ষা বাতিলে জোর দাবি জানিয়েছে। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
আখতার হোসেন: আমি এককভাবে অনশন শুরু করলেও অনেকেই আমাকে পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়েছে। পরে ছাত্র সংগঠনগুলো সমর্থন ছিল। জ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবিদের যেহেতু অনেক বিষয় ভেবে-চিন্তে ডিসিশন নিতে হয় তাই তারা দেরিতে সমর্থন দিয়েছে। সবার প্রচেষ্টায় বিষয়টির একটি ইতিবাচক সমাধান সম্ভব হয়েছে বলে আমি মনে করি।
টিডিসি: পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা না নিয়ে শুধুমাত্র উত্তীর্ণদের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
আখতার হোসেন: আমার দাবি ছিলো পরীক্ষা পুনরায় নেয়ার। এখন যারা উত্তীর্ণ হয়েছে শুধু তাদের পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতদের বাদ দেয়া গেলেও বিষয়টি খুবই ভালো। কারণ যারা নূন্যতম শর্ত পূরণ করতে পারেনি তারাতো এমনিতেই বাদ গেছে। শুধু উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের আবার পরীক্ষা নেয়ার মাধ্যমে জালিয়াতদের বাদ দেয়া সম্ভব হবে।
টিডিসি: এ কর্মসূচিতে যাওয়ার পর থেকে কোন ধরণের হুমকি কিংবা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কিনা?
আখতার হোসেন: এটা সবার দাবি ছিল। তাই এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কারও হুমকি বা কোন ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। ভবিষ্যতে আশা করি, এটা নিয়ে কোন ধরণের সমস্যা হবে।
টিডিসি: আপনাকে ধন্যবাদ।
আখতার হোসেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।