১৬ জুন ২০২৪, ১৪:৩৩

ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের ঈদ ভাবনা

ঈদ সব মুসলমানের জন্য আনন্দ-উৎসবের দিন। ঈদ নিয়ে ছোট-বড় সবার মধ্যে আনন্দ-উত্তেজনা বিরাজ করে। দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফেরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন তাদের ঈদ ভাবনা। তাদের সবাই ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত। তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মুহাইমিনুল ইসলাম

ঈদ আসুক প্রতিটি ঘরে আলোকিত হয়ে

বাংলাদেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের সংখ্যা অধিক হওয়ায় ঈদের আনন্দ যেন জোয়ার তোলে প্রতিটি মানুষের হৃদয়-স্পন্দনে। ঈদকে সামনে রেখে পরিবার থেকে দূরে থাকা মানুষগুলো ক্ষুধার্ত পাখির মতো উড়ে যায় আপন মাতৃকোলে, কেবল সবাইকে নিয়ে একটি সুন্দর দিন কাটানোর আশায়। কিন্তু সবার মনে বা হৃদয়ে কি ঈদ খুশির বার্তা বয়ে আনে? সব মানুষের জীবনে কি ঈদের আনন্দ জাগে? ঈদের দিনেও দেখা যায় ফুটপাতে খালি গায়ে বসে থাকে অনেক অসহায় মানুষ। আর্থিকভাবে অসচ্ছ্বল বাবা নিজে কয়েক বছরেও কিনতে পারে না একটি নতুন কাপড়। অথচ সন্তানদের জন্য হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের দ্বারা অর্জিত অর্থ দিয়ে জামাকাপড় কিনে দেন। এসব কারণে অনেক পিতামাতাই ঈদকে অভিশাপ মনে করে। অথচ সম্ভ্রান্ত পরিবারের ব্যক্তিরা বিশাল আয়োজনে ঈদ পালন করে। কিন্তু অভাবী মানুষদের দিকে তাকানোর সময়ও হয় না তাদের। অথচ ঈদের দিনে গরিব-দুঃখীদের মুখে হাসি ফোটানো বিত্তবানদের দায়িত্ব। আর এ দায়িত্ব পালন করতে পারলে প্রতি ঘরে ঘরে মুখরিত হবে ঈদের আনন্দ। ধনী-গরিব সবাই মিলে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এই হোক আমার এবং আমাদের প্রত্যাশা।

আমজাদ হোসেন হৃদয়
ঢাবি প্রতিবেদক, দেশ রূপান্তর

বর্তমানে ঈদ কেন বর্ণহীন

আসলেই তো এই ইদ কেন সেই ইদের মতো হয় না? ইদ চলে গেলেও কেন মানুষ সব ভেদাভেদ ভুলে ও পূর্বশত্রুতা মিটমাট করে এক হয়ে যায় না? বর্তমানে ইদ কেন বর্ণহীন ফ্যাকাশে মনে হয়? কেন মানুষ পশুর গলায় ছুরি চালানোর আগে নিজের ভিতরের পশুত্বকে কুরবানি করে না? এগুলো ভাবলেই মনে হয় আমরা এক ভিন্ন যুগে চলে এসেছি। এ যুগে মানুষ ইদের আসল আনন্দ ও মর্ম বোঝে না। বোঝে না কীভাবে ইদ উদযাপন করতে হয়। ইদুল আজহা মানে শুধু গোশত খাওয়া ও বিলানো নয়। অন্যকে খুশি করারনোই ইদের আসল সৌন্দর্য। সেটা শুধু গোশত বেলানোর মাধ্যমে নয়। এটা উপলব্ধি না হওয়া পর্যন্ত আমরা ইদের আসল আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতেই থাকব। কুরবানি ঈদে যদি হিংসা, বিদ্বেষ, ক্রোধ, লোভ লালসাকে জবাই করতে না পারি তাহলে ঈদের প্রকৃত আনন্দ ভোগ করা কখনো সম্ভব নয়।  

মারুফ হোসেন মিশন 
রাবি প্রতিবেদক, দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস

বড়বেলায় ঈদ মনে হয় রংহীন

ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব হলো ঈদ-উল-আজহা। যা আমাদের ত্যাগের মহত্ব অনুধাবন করতে সহায়তা করে। একজন মুসলিম হিসেবে আমি সৌভাগ্যবান এমন একটি উৎসবের অংশীদার হতে পেরে।উৎসবমূখর পরিবেশে পরিবার-পরিজনসহ একটি ব্যস্তময় দিন কাটবে যা অনেক আনন্দদায়ক। ঈদের আগের এই দিনে দেশজুড়ে এক সুন্দর পারিবারিক ব্যস্ততার আমেজ জেগে উঠে। আর এখন খুব সম্ভবত বড় হলে এই ঈদের আনন্দটা মলিন হয়ে যায়, ছোটবেলায় যেমন ঈদ ছিলো প্রাণবন্ত, রঙিন, বড়বেলায় মনে হচ্ছে ঈদ রংহীন। তবে ঈদের আমেজ কিংবা ছোটদের ছুটোছুটি পূর্ণ ঈদ দেখতে এখনও চমৎকার লাগে আমার। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে হালকা মিষ্টি মুখ করে ঈদের নামায আদায় করতে যাওয়া এই বিষয় গুলোকে সব সময় আনন্দ মুখর। ঈদের যে আনন্দ উপভোগ করে সেটা সত্যিই উপভোগ্য।আসছে ঈদ সবার ভালো কাটুক,প্রাণবন্ত হোক এই প্রত্যাশা রইল।

মো কামরুজ্জামান পুলক 
বেরোবি প্রতিবেদক, ঢাকা মেইল

নিজের মধ্যে বাস করা পশুত্বটা জবাই করায় সার্থকতা

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ঈদ আসলে ছুটি পাওয়ার অন্যরকম আনন্দ-উচ্ছ্বাস ও আবেগের অনুভূতি কাজ করে। পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব সবার মেল বন্ধন হচ্ছে আমাদের ঈদ। বছরে দুটি ঈদ পেলেও ঈদুল আজহায় যেনো ভিন্নরকম আবেগ আনন্দ কাজ করে। পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সাথে পশুর হাটে যাওয়া, পশু কেনা, দু-এক দিন পশু পালন, পশুকে গোসল করানো, অতঃপর পশু জবাই, পশুর গোশত পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও  অস্বচ্ছলদের মাঝে বিতরণ সব মিলিয়ে ভাষায় প্রকাশ না করার মতো আবেগ-উদ্দীপনা কাজ করে এ সময়টাতে।

ইসলামের নিয়মানুসারে ঈদুল আজহায় আমরা পশু কুরবানি বা জবাই করি। তবে এর মূলে যে শিক্ষা রয়েছে এর একটি হলো ত্যাগ করার মানসিকতা সৃষ্টি আর অপরটি যদি বলি নিজের মাঝে বাস করা সকল ভেদাভেদ, হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকারসহ মনের মধ্যে চিন্তা করা সকল অন্যায় দূর করা বা জবাই করা। ঈদুল আজহায় যদি পশু কুরবানির পাশাপাশি নিজের মধ্যে বাস করা পশুত্বটা জবাই করতে পারি তবেই ঈদুল আজহা আমার কাছে সার্থক হবে বলে বিশ্বাস করি।

শেখ সাদী ভূঁইয়া 
যবিপ্রবি প্রতিবেদক, দৈনিক যায়যায়দিন

সকল ভেদাভেদ ভুলে মিলিত হই ঐক্যের বন্ধনে

ঈদুল আজহা বিশ্বাসী মুসলমানদের ত্যাগের উৎসব। মনের পশুত্বকে ধ্বংস করে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানোই যার মূল উদ্দেশ্য। সুন্দর পৃথিবীতে পবিত্র হওয়ার বা নতুনত্বে জীবন বদলানোর প্রয়াস থেকে ঈদ উদযাপিত হয়ে আসছে। নিজের ভেতরের পশুত্বকে বিসর্জন দিয়ে প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন ও অসহায় মানুষদের সাথে নতুন ঈদের কাপড়, ভালো খাবার ও সবার দুঃখ ভাগ করে নিয়ে ইদের খুশিতে মেতে উঠি।নানা ধরনের মিষ্টান্ন আর বিশেষ করে ঈদুল আযহার কোরবানীর গরুর মাংস খাওয়ার মাধ্যমেই যেন এই ঈদের আনন্দ আয়োজন আরো বহুগুণে বেড়ে যায়। এছাড়াও ইসলামের বিধান অনুযায়ী কুরবানিকৃত পশুর কিছু অংশ আত্মীয়স্বজন এবং দুস্থদের মাঝে বিলিয়ে দিতে হয় যার ফলে দরিদ্রদের প্রতি সামর্থ্যবানরা দায়িত্ব পালনের একটি সুযোগ পায় এবং একই সঙ্গে আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এভাবেই সকল ভেদাভেদ ভুলে মিলিত হই ঐক্যের বন্ধনে।ঈদের সম্প্রীতি বজায় থাকুক, ছড়িয়ে পড়ুক অনাবিল আনন্দ, দূর হোক হতাশা-দুঃখ এটাই প্রত্যাশা।

রাসেল হোসেন
বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি, দৈনিক সংবাদ

মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদ, সব মুসলমানদের জন্য এক আনন্দমুখর উৎসব। আর এই আনন্দের দিনটি ছাত্রজীবনে, বিশেষ করে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের জন্য একটু ভিন্ন ও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সাথে জড়িত থাকার ফলে দায়িত্ব পালনে অনেক সময় ই ব্যাস্ত থাকা হয়। দু বা তিনদিনের ছুটিতে দায়িত্ব পালন ও ক্যাম্পাস থেকে বাড়ির দূরত্বের জন্য বাড়ি ফেরা আর হয়না। ঈদের ছুটি গুলো তখন আমার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান সময়। যে সময় নিজের ও পরিবারের জন্য হয় উৎসর্গ। ঈদুল ফিতরে যেমন রোজা ভঙ্গের আনন্দ রয়েছে তেমনি ঈদুল আজহায় রয়েছে কুরবানির আনন্দ। এ আনন্দ শুধু পরিবারের সাথে সীমাবদ্ধ নয় বাড়িতে এসেও অনলাইনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী, সাংবাদিক সহকর্মী, বন্ধু, অগ্রজ, অনুজদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা হয় কিছুটা।

নিজের ব্যাক্তিগত আনন্দ উপভোগ করার পাশাপাশি আমার মনে হয় পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের তরুনদের ঈদুল আজহায় কিছু দায়িত্ব পালন করা উচিৎ। আমরা জানি হযরত ইবরাহীম (আ.) মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি লাভে যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, তা বিশ্ববাসীর কাছে চিরকাল অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। সেই অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শকে লালন করে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা কে ছড়িয়ে দিতে হবে। ঈদের আনন্দ ধনী-গরিব সবার জন্য।তাই আনন্দ যেন সবার মাঝে ছড়িয়ে যেতে পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। ঈদ আনন্দে কোনো বৈষম্য কাম্য নয়। সবার মাঝে ঈদ আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে পারলেই পূর্ণতা আসবে। সুতরাং সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে পরিবারের পক্ষ থেকে বা বন্ধুরা মিলে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। সবার মাঝে ঈদ আনন্দ যেন সমানভাবে ছড়িয়ে যায়, সেজন্য সামর্থ্যের সর্বোচ্চ টুকু দিয়ে আমাদের নিজেদের আনন্দের পাশাপাশি অসহায় দরিদ্র মানুষদের আনন্দের কারণ হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

মোতালেব হোসাইন 
এগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি বিভাগ
দৈনিক সময়ের আলো, 
যবিপ্রবি প্রতিবেদক