১৯ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:০০

সবাই ৩৫ চায়, বাধা কোথায় জানি না: ইমতিয়াজ হোসেন

সাধারন ছাত্র পরিষদ আন্দোলনের উপদেষ্টা ইমতিয়াজ হোসেন

চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ দাবিতে বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী পরিষদের আন্দোলন; যা ২০১২ সালের ১লা জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেনের হাত ধরে শুরু হয়। আন্দোলনের সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় এই উদ্যোক্তার সাথে। কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি-  নূর হোসেন ইমন


দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাদের দাবি সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলুন।

ইমতিয়াজ হেসেন : সরকারি চাকরির বয়স ৩৫ করার দাবিতে আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। কর্মে যোগদানের অধিকার আমাদের সাংবিধানিক অধিকার; সুনির্দিষ্ট বয়স দিয়ে তা থামিয়ে দেয়ার অধিকার কারো নেই। বাংলাদেশে ছয় বছর বয়সে শিক্ষাজীবনের শুরু হয়; যা শেষ করতে লাগে ২৩ বছর। অথচ নন-পিএসসি চাকরি ক্ষেত্রে আবেদন শুরুর বয়স রাখা হয়েছে ১৮ বছর; যা একটি অকার্যকর আইন। আবার বর্তমানে ক্যাডারের ক্ষেত্রে ২১ বছর বয়সে আবেদনের আইনটিও গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। আমরা চাই- চাকরিতে আবেদনের আইনটি সংশোধন স্বাপেক্ষে আবেদনের বয়স ৩৫ বছর করাই অধিক যুক্তিযুক্ত।  সে দাবিতেই আমরা আন্দোলন করছি।


দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই বয়স বাড়ানো কতটা যৌক্তিক?

ইমতিয়াজ হেসেন: গড় আয়ু ও কর্মক্ষমতা বাড়ার যুক্তিতে সরকারি চাকরিতে অবসরের সময়সীমা ২ বছর বাড়ানো হয়েছে।  আমাদের দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর।  বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে তুলনা করলে কিংবা এ দেশের বাস্তবতায় এই সময়সীমা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।  দেশের মানুষের গড় আয়ু যখন ৪৫ বছর ছিল, তখন চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ২৭ বছর, আয়ু বেড়ে ৫০ হলে ৩০ বছর করা হয়। এখন আয়ু বেড়ে ৭১ হওয়ার পরও চাকরিতে প্রবেশের বয়স কোনোভাবেই ৩০ বছর থাকতে পারে না। এ বয়স অন্তত ৩৫ হওয়া উচিত।  ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরিতে বয়সের সীমা ৪০ বছর। অন্য প্রদেশগুলোতেও ৩৮ থেকে ৪০ বছর। শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ৩৫ থেকে ৪৫ বছর। এ ছাড়া ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোতে কোথাও কোথাও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৪০ বা তার ওপরে। দেশের দক্ষ ও মেধাবীরা যেকোনো বয়সে সরকারি চাকরিতে ঢুকতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশে যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তা শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর জনশক্তিতে পরিণত হওয়ার পথে বাধা। এ কারণে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করা ‘যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত’ বলে মনে করি।

                              আরও পড়ুন: সরকারি চাকরিতে ‘৩৫ চাই’: দ্বিধায় পড়েছে সরকার

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কীভাবে শুরু আজকের ‘৩৫ চাই’ আন্দোলন?

ইমতিয়াজ হেসেন: মূলত আমিই আন্দোলনটা প্রথম শুরু করি। ৩৩তম বিসিএস-এর ভাইভা দেয়ার পর বিভিন্ন দেশ নিয়ে পিএসসির করা বিভিন্ন প্রতিবেদন দেখি। পৃথিবীর সব দেশেই চাকরিতে ঢোকার বয়স ৩০-এর বেশি। তাই আমি প্রথমে ঢাবির টিএসসিতে লিফলেট বিতরণ করি; এরপর আস্তে আস্তে আন্দোলনটি ব্যাপকতা লাভ করে।


দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আন্দোলনের বয়স কত?

ইমতিয়াজ হেসেন: প্রায় সাত বছর। আমরা সর্বপ্রথম ২০১২ সালের ১লা জানুয়ারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ চাই আন্দোলন শুরু করি। সেদিন এই আন্দোলন শাহবাগে ব্যাপক সাড়া ফেলে। এরপর বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও তৎকালীন সংসদের স্পিকার সংসদে ৩৫-এর পক্ষে কথা বলেন। মূলত তখনই আন্দোলনটা সারা দেশে ছড়িয়ে যায়।


দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আন্দোলনের প্লাটফর্ম সাধারণ ছাত্র পরিষদ নিয়ে কিছু বলেন?

ইমতিয়াজ হেসেন: আন্দোলনকে বেগবান করতে আমরা এ প্লাটফর্ম গড়ে তুলি। বর্তমানে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি আছে এবং সারাদেশের জেলা ও উপজেলায় কমিটি আছে। বর্তমানে আমি এই প্লাটফর্মের উপদেষ্টা হিসেবে আন্দোলনে যুক্ত আছি।


দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি কি এ আন্দোলনের সফলতার ব্যাপারে আশাবাদী?

ইমতিয়াজ হেসেন: অবশ্যই। আন্দোলনের সফলতার ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।


দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সরকারের পক্ষ থেকে কী আশ্বাস পেয়েছেন?

ইমতিয়াজ হেসেন: আমরা স্মারকলিপির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে দাবির বিষয়ে জানিয়েছি; এর আগে সরকারের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের ব্যাক্তিরা এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। সর্বশেষ ছাত্রলীগের সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধূরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সাথে আমরা কথা বলেছি। তারাও আমাদের দাবি রাষ্ট্রপতির কাছে বলেছেন। রাষ্ট্রপতি বলেছেন তিনিও এটা চান। সবাই তো চায়, বাঁধা কোথায় জানিনা।


দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করলে নেতিবাচক প্রভাব আছে কিনা?

ইমতিয়াজ হেসেন: আমাদের আন্দোলনের ইতিবাচক প্রভাব ১০০% কিনা জানিনা। এর নেতিবাচক প্রভাবও থাকতে পারে। তবে ইতিবাচক প্রভাবই বেশি।


দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস:  আগামী দিনের কর্মসূচী কি?

ইমতিয়াজ হেসেন: আমরা ইতোমধ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি করেছি। আমরা শান্ত আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করতে চাই। কিন্তু বাংলাদেশে দাবি আদায়ের সংস্কৃতি ভিন্ন হয়ে গেছে। আমরা দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত আন্দোলন থেকে যাবো না। আগামীতে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করব।


দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে ধন্যবাদ।
ইমতিয়াজ হেসেন: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ।