ঢাবিতে প্রথম হওয়া প্রিয়ন্তী কখনই ১০ ঘণ্টার বেশি পড়েননি

প্রিয়ন্তী মন্ডল
প্রিয়ন্তী মন্ডল  © টিডিসি ফটো

খুলনার সরকারি এম এম সিটি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী প্রিয়ন্তী মন্ডল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষার কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের প্রথম স্থান অধিকার করেছেন তিনি। ভর্তি পরীক্ষায় নিজের সাফল্যের গল্প নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের।

প্রিয়ন্তী বলেন, আমার মূলত স্কুল জীবন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির একটা স্বপ্ন ছিল। এজন্য আমি কলেজে পড়া অবস্থা থেকেই একটু একটু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে শুরু করি এবং সে মোতাবেক প্রি এডমিশনের কিছু ক্লাস করে আমার একটা ধারণা তৈরি করি যে আমার ভবিষ্যতে কোন বিষয়ে কতটুকু সময় দিতে হবে। কোথায় আমার দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো খোঁজার চেষ্টা করি।

প্রস্ততিকালীন সময়ে তার পড়াশোনার কৌশল জানতে চাইলে বলেন, কোনো বাধা-ধরা রুটিনের মাধ্যমে আমি পড়ালেখা করিনি। ছোট থেকেই এটা আমার অভ্যাস, তাই ভর্তি প্রস্তুতির সময় আমার একটা চিন্তা ছিল যে আমি বাধা ধরা কোনো নিয়মে পড়বো না। প্রতিদিন একটা টার্গেট থাকবে এবং আমি এ টার্গেট অনুযায়ী পড়বো। এভাবে আমি আমার মতো করে পড়াশোনা গুলো গুছিয়ে নিই এবং আমার প্রস্তুতি গ্রহণ করি।

সময়ের সঠিক ব্যবহার নিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু দিন এবং রাত মিলিয়ে চব্বিশ ঘণ্টা সময় তাই এ সময়টাকে যদি আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করি তাহলে আমাদের জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই সমস্যা হবে না। এমন নয় যে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আমাকে চৌদ্দ ঘণ্টাই পড়তে হবে। পুরো দিনের একটা সময় আমি পড়ার জন্য রাখবো, একটা আমার ঘুমানোর জন্য, একটা টাইম আমার দৈনন্দিন অন্যান্য কাজের জন্য থাকবে। দশ ঘণ্টার বেশি আমি কখনোই পড়িনি। শুধু পড়লেই তো আর হয় না বিষয়টাকে বোঝা এবং অন্যান্য বিষয়ের সাথে এটাকে সমন্বয় করে আয়ত্তে আনার ব্যাপারও রয়েছে। তাই গড়পড়তা ভাবে পড়ে যেতে হবে এরকম ভাবনা দিয়ে আমি মনে করি সম্ভব নয়।

প্রিয়ন্তী আরও বলেন, বরাবরই যে কোনো বিষয় নিয়ে বেশি চিন্তা করি আমি। ভর্তি পরীক্ষার সময়ও অনেক বেশি করেছি। প্রায় দিনই হতাশায় কান্না করা হতো। তবে আমার বাবা-মা পাশে থেকে আমার সাহস জুগিয়েছে। তাদের প্রতিটি কথা আমার নিজের উপর নিজের বিশ্বাস আনতে সাহায্য করে।’ 

“একদিন আমার বাবার কাছে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে আমি যদি না পারি কি হবে আমার? আমার বাবা তখন বলছিলেন, তুমি তোমার নিজের মতো করে চেষ্টা করো। যখন মনে হবে এর চেয়ে বেশি তুমি আর পারছো না, তখন জানবে যে তুমি সফল। এরপরও যদি তোমার আফসোস থাকে হয়ত আমি আরও চেষ্টা করতে পারতাম তাহরে তুমি কখনো সফলতা পাবে না। এ বিষয়টা আমি মাথায় রাখি এবং আমার নিজের পক্ষে যতটুকু সম্ভব এবং মনে হয়েছে যে আমি এ পর্যন্ত পারবো আমি সে পর্যন্তই চেষ্টা করেছি।”

পরীক্ষাকালীন সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত যত পরীক্ষাই দিয়ে থাকি না কেন পরীক্ষার হলে পরিস্থিতি পুরোপুরি ভিন্ন। নিজের মাথা তখন ঠিক রাখা খুবই কঠিন। আমি নিজেও প্রথমে প্যানিক হয়ে যাই। ধীরে ধীরে মনকে শান্ত করে এবং সৃষ্টিকর্তাকে ডাকা শুরু করি। তখন একটা বিষয়ই মাথায় রাখতে হবে যে আমি এতোদিন চেষ্টা করেছি সেটার প্রয়োগ এখন করতে পারি যেন। এজন্য সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রাখা অনেক বেশি প্রয়োজন। প্রথমে আমি প্রশ্ন দেখে প্যানিক হয়ে যাই তবে ধীরে ধীরে নিজের মনকে শান্ত করি। তারপর প্রশ্নগুলো বোঝার চেষ্টা করি এবং সেগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি।

তার ভবিষ্যৎ ইচ্ছা জানতে চাইলে বলেন, আমার ভবিষ্যৎ ইচ্ছা একজন যোগ্য বিচারক হওয়ার এবং সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ হওয়ার। স্বপ্ন ছিল আইন বিভাগে পড়বো সেটা এখন সত্যি হবে।  

নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষা প্রস্তুতির সময়টা কখনোই সহজ নয়। এটা খুব কঠিন একটা সময় তবে কঠিনের মধ্য দিয়েই চেষ্টা তোমার যত বেশি হবে সফলতার পর খুশিও তত বেশি। হতাশ হওয়া যাবে না কোনোভাবেই। আগে যদি আমি জানতাম যে হতাশা মানুষকে কতটা গ্রাস করে ফেলে তাহলে হয়ত আমি নিজেকে অতটা হতাশ হতে দিতাম না। নিজেকেই নিজে অনুপ্রেরণা দিতে হবে। আশেপাশে বাবা-মা অন্যান্য সবাই থাকলেও নিজেকে সব সময় বলে যেতে হবে ‘আমি পারবো’। আরেকটা বিষয় হলো এটাই জীবনের শেষ লক্ষ্য নয়। জীবনে ইচ্ছা বা স্বপ্ন সব সময় বড় হওয়া উচিত কখনোই একটা জিনিসেই স্বপ্নকে বেধে রাখা উচিত নয়। হতাশার পথে কখনো আগানো যাবে না।


সর্বশেষ সংবাদ