ঈদ উদযাপনের সেকাল-একাল
কোরবানির ঈদ: ফ্রিজের আড়ালে হারিয়ে গেছে ‘জ্বাল দেয়া মাংসের ঘ্রাণ’
- মোহাম্মদ ইয়ামিন
- প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০১৮, ০৩:৪৪ PM , আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৯ PM
মো. আশরাফ হোসাইন। ২০০৮ সাল থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে সরকারি ব্যাংক, পাটকলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৬ সালে রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রবিন্দু মতিঝিলে জন্মগ্রহণ করেন আশরাফ হোসাইন। ষাটোর্ধ্ব এই কর্মকর্তার শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনের পুরাটাই কেটেছে মতিঝিলে। লেখাপড়া করেছেন দেশের প্রধান উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্প্রতি ঈদ উদযাপন নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস’র সাথে স্মৃতিচারণ করেছেন তিনি। কালের আবর্তনে ঈদ উদযাপনে যে ভিন্নতা তিনি তাঁর জীবনকালে দেখেছেন, তার চুম্বক অংশ তুলে ধরেছেন মোহাম্মদ ইয়ামিন।
ষাটের দশক কিংবা গত শতাব্দীর সাথে একবিংশ শতাব্দীর ঈদ বিশেষ করে ঈদ-উদ-আযহা উদযাপনের পরিবর্তন নিরূপণ করে মো. আশরাফ হোসাইন বলেন, কোরবানির পশুর দাম বৃদ্ধিতে যে অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটেছে। আমার মনে আছে ১৯৬৩ বা ৬৪ সালের দিকে, বাবা একটি গরু কিনেছিলেন মাত্র ২০ টাকায়; কিন্তু এখন ৬০ হাজার টাকার কমে কোনো গরু কেনা যাচ্ছে না।
সময় এবং দাম বৃদ্ধির যে অনুপাত সেটি খুবই অকল্পনীয় এবং অগাণিতিক। তবে সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তনটি ঘটেছে সেটি হচ্ছে- মাংস হাড়িতে জ্বাল দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে খাওয়ার যে রীতি এবং ওই মাংসের যে ঘ্রাণ সেটি এখন আর নেই। ফ্রিজ আসার কারণে মানুষ এখন কুরবানির পরপরই মাংস ফ্রিজে তুলে রাখে।
এরপর প্রয়োজন মত সময়ে সময়ে একটু একটু করে ওখান থেকে নিয়ে রান্না করে। কিন্তু আগে দেখা যেত দুই তিনটি হাড়িতে মাংস রেখে প্রতিদিন গরম করা হতো, যাতে করে নষ্ট না হয়। আর অনেকদিন ধরে একই হাঁড়িতে রান্নার ফলে কোরবানির মাংসের একটি বিশেষ ঘ্রাণ আশপাশে ছড়িয়ে পড়তো। যেটা এখন খুব গ্রাম-অঞ্চল ছাড়া পাওয়া যায় না। কোরবানির ঈদের এ বিশেষ সৌন্দর্যটি এখন খুব অনুভব করি।
কোরবানির পশু জবাইয়ের পর তা কাটার যে আনন্দ সেটিও খুব খুঁজে ফিরেন পিজিসিবির এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আগে ঈদের নামাজ শেষে বাসায় ফিরে মৌলভি সাহেব গরু জবাই দিয়ে যেতেন। পরে আমরা নিজেরাই কোরবানির পশুর চামড়া আলাদা করা এবং মাংস কাটার কাজ করতাম। যেটি ছিল সবচেয়ে বড় আনন্দের কাজ। কিন্তু এখন আর সেটি করা হয় না।
যিনি কোরবানি করেন তিনি নামাজ শেষে বাসায় চলে যান। কাজের লোকেরাই সব করেন। কোরবানির পশু কেনার জন্য টাকা দেয়া এবং মাংস খাওয়াটাই আমাদের কাজ। আল্লাহর নামে পশু উৎসর্গের যে আনন্দ, নিজ হাতে পশু জবাই না করলে সত্যিকার অর্থেই সেই আনন্দ পাওয়া দূরহ।
সেকালের ঈদের সাথে এখনকার ঈদ উদযাপনের অারেকটি পরিবর্তন হচ্ছে-আগে আমরা ঈদের দিন দল বেঁধে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে ঘুরতে যেতাম। তখন চাচিরা আমাদের বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি খাবার খেতে দিতেন। আমাদের বাবা-মা সম্পর্কে খোঁজ নিতেন। কিন্তু এখন আর সেটা হয় না। সবাই নিজ নিজ বাসায় আবদ্ধ হয়ে গেছে। কেউ কারো খোঁজ নেন না।