১৮ নভেম্বর ২০২৩, ২০:১১

লকডাউনে নিঃস্ব খাদিজার ঘুরে দাঁড়ানোর অবলম্বন ফ্রিল্যান্সিং

শেখ খাদিজা খানম  © টিডিসি ফটো

চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ে বসবাস শেখ খাদিজা খানমের। কাজ করছেন ডিজিটাল মার্কেটিং এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনিং নিয়ে। সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে পেয়েছেন ‘ন্যাশনাল ফ্রিল্যান্সার কনফারেন্স ২০২৩’-এ সম্মাননা। ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা  দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন  তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস   

ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শুরু করি লকডাউনের পর থেকে। বর্তমানে আপওয়ার্কে কাজ করছি। আমার স্কুল এবং কলেজ লাইফ গ্রামেই কাটে, কলেজ ছিলো চট্টগ্রাম মহিলা কলেজ। সেখানে আমি বাংলায় অনার্স সম্পন্ন করি। আমার ইন্টার থেকেই কম্পিউটারের প্রতি একটি ভালোলাগা ছিলো। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে আমি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানতে পারি। তারপর ২০১৮ সালে এটা নিয়ে আমি একটি কোর্স সম্পন্ন করি। বর্তমানে আমি ডিজিটাল মার্কেটিং এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনিং নিয়ে কাজ করছি। এছাড়া একটি কোম্পানির ভার্চুয়াল এসিসট্যা্ন্ট হিসেবে কাজ করছি। 

২০২০ সালে যখন কাজ শুরু করি এই সেক্টরে খুব একটা মানুষ কাজ করতো না। তখন যতটা সহজে কাজ পাওয়া যেত এখন পাওয়া যায়না, প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। বিশেষত আপওয়ার্কে, এখানে এখন প্রোফাইল বুস্ট করার সিস্টেম করে দেয়ায় নতুন যারা আসছে তাদের কাজ পাওয়ার জন্য অনেক অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। 

যখন করোনা আসে লকডাউনের কারনে আমার পরিবার কিছুটা আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। আমার স্বামীর বিদেশে একটা দোকান ছিলো যা লকডাউনের জন্য বন্ধ হয়ে যায় ফলে পরিবার, তিন সন্তানের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিলো। তখন দেখা যেত আমাদের কোনো আয় নেই কিন্তু মাসে এক-দেড় লাখ টাকা খরচ ছিলো। আমি চেষ্টা শুরু করি নিজে কিছু করার। সেখান থেকেই আমার ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু। এখন আমার সপ্তাহে ৬০-৬৫ ঘণ্টা কাজ করা হয়। 

শুধুমাত্র একটা বিষয় সম্পর্কে দক্ষতা নিয়ে এখানে আসলে টিকে থাকাটা খুব কঠিন। যেমন ধরুন কোনো কোম্পানি গ্রাফিক্স ডিজাইনার হায়ার করলো, দেখা যায় যে সে একই সাথে ডিজিটাল মার্কেটিংটাও জানে। তখন কোম্পানি তাকে রেখে যে শুধুমাত্র গ্রাফিক্স ডিজাইনিং যে পারে তাকে বাদ দিয়ে দিবে। আমি একটা বিষয় শিখলাম সেটা দিয়ে মার্কেটপ্লেসে কাজ করবো এই ধরনের চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দ্বিতীয়ত, ক্লায়েন্টের কাজগুলো সময়মতো জমা দিতে হবে। প্রত্যেকটা কাজ সময়মতো সম্পন্ন করে দিতে হবে।  এটা না করলে দেখা যায় ক্লায়েন্ট খারাপ রেটিং দিবে এভাবে এক-দুইজন খারাপ রেটিং দিলেই সেই মার্কেটপ্লেসে আর কাজ করা সম্ভব হবে না। তাদের পছন্দ-অপছন্দ অনুযায়ী কাজ করতে হবে। সর্বশেষ যে বিষয়টা, অনেকে কয়েকমাস অনেক পরিশ্রম করে খুব ভালো আয় করে কিন্তু তার কিছুদিন পরই সে আলসেমি করে কাজ করাটা বন্ধ রাখে, ঘুরাফেরা ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়  এর ফলে আবারও ফিরে আসাটা কষ্টকর অনেকক্ষেত্রে সম্ভব হয়না। এটা একটা ডেডিকেশনের ব্যপার। প্রতিনিয়ত কাজ করে যাওয়ার একটা মনমানসিকতা রাখতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে আমার প্রথম আয় নিয়ে আসলে অতটা খুশি হওয়ার বা এটা নিয়ে ভাবার সুযোগ পাইনি। এই আয়টা আসলে তখন আমার প্রয়োজন ছিলো। এটা আমার জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে গিয়েছিলো। আমার মাথায় সবসময় একটা চিন্তা ঘুরতো যে আমাকে যেভাবেই হোক আয় করতে হবে। এখন আমি কোনো কাজে যে পরিশ্রমটা দেই তখন তার দিগুণ-তিনগুণ পরিশ্রম দিয়ে কাজ করতাম। এখন আমি ঘণ্টায় যেখানে ১৫ ডলার আয় করি সেখানে তখন সপ্তাহে আমি ২০ ডলার আয় করতাম। তো তখন আসলে আমার প্রথম আয়ের আনন্দ নেয়ার মতো মন মানসিকতায় ছিলাম না। 

এই সেক্টরে টিকে থাকতে চাইলে বা ভালো করতে চাইলে নিজেকে সবসময় আপটুডেট রাখতে হবে। আমি একটা কাজ জানি এটা ভালো কিন্তু আমাকে এই কাজের একদম এডভান্স লেভেল পর্যন্ত যেতে হবে। আমাদের ভাবতে হবে যে আমরা এশিয়ার খুবই অনুন্নত একটি দেশে আছি, পশ্চিমারা আমাদের চেয়ে অনেক এডভান্স লেভেলের কাজ জানে এবং তারা আমাদের তুলনায় অনেক বেশি দক্ষ। আমাদের সেভাবেই চিন্তা করে কাজ করতে হবে। 

নতুনদের বলবো প্রথমত ফ্রিল্যান্সিংয়ের কোন সেক্টরটা ভালো লাগে সেটা বের করতে হবে। ভালো একজন মেন্টর খুঁজে বের করতে হবে। চেষ্টা করতে হবে যে কোনো একটি পেইড কোর্স করার। ইউটিউব দেখে এব্যাপারে ধারণা নেয়া যায়। কারও কারও কোডিং পছন্দ আবার কারো ভিডিও এডিটিং এটা ব্যক্তিভেদে নির্ভর করে। দ্বিতীয়ত নিজেকে ঝালাই করে নিতে হবে। কাজ শিখেই কোনোভাবে মার্কেটপ্লেসে যাওয়া যাবে না। এতে ক্লায়েন্টের খারাপ রিভিউ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যার কারণে পরে এখানে টিকে থাকাটাও খুব কঠিন।