যাদের গুজব ধরিয়ে দিই, তারাই সিআরআইকে গুজবের কারখানা বলে
তন্ময় আহমেদ। একাধারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটি সদস্য। সেন্ট্রার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া সম্প্রতি তিনি তিতাস গ্যাস কোম্পানির পরিচালকেরও দায়িত্ব দায়িত্ব পেয়েছেন।
এতো এতো দায়িত্বের মাঝেও তিনি সিআরআই-এর সঙ্গে কাজ করা বেশি উপভোগ করেন। সম্প্রতি গুজব প্রতিরোধে প্রতিষ্ঠানটি ১০ হাজার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। প্রশিক্ষণের এ কার্যক্রম সারাদেশে চলমান রয়েছে। প্রশিক্ষণের বিষয়সহ সার্বিক বিষয়ে নিয়ে তন্ময় সম্প্রতি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন। তার কথাগুলো শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের তাওফিকুল ইসলাম হিমেল।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: গুজব প্রতিরোধে সম্প্রতি আপনারা ১০ হাজার ছাত্রলীগকর্মীকে প্রশিক্ষণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। ঢাকায় ৭০ জনকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমের অগ্রগতি কতটুকু?
তন্ময় আহমেদ: আসলে আমরা ৭০ জনকে এমনভাবে তৈরি করছি, যেন তারা সারাদেশের কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। সেভাবে তাদেরকে ট্রেনিং করানো হচ্ছে। এরা আমাদের ট্রেনিং নিয়ে সারাদেশে আরও অন্তত ১০ হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেবে। অলরেডি আমরা দশটা ইউনিটের ট্রেনিং সম্পন্ন করেছি। যেখানে প্রতিটি ইউনিটে গড়ে গড়ে ৩০০ জন করে কর্মী অংশ নিয়েছেন।
এ কার্যক্রমে আমাদের প্রায়োরিটি কিন্তু ছাত্রলীগ। কারণ সব ইউনিটেই আওয়ামীলীগ আর ছাত্রলীগ একসাথে কাজ করছে। এর বাইরে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মীদেরকে আলাদাভাবে ট্রেনিং করাব। কারণ এখানে একটু বেশি পরিমাণে কর্মী পাওয়া সম্ভব। তার থেকে বড় কথা হলো এসব শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তি জ্ঞানে অন্যদের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এ প্রশিক্ষণ নিয়ে সারাদেশের ছাত্রলীগকর্মীদের কেমন সাড়া পাচ্ছেন? তারা কী বলছেন?
তন্ময় আহমেদ: ছাত্রলীগ কর্মীরা আমাদের এ উদ্যোগ ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন। তাদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নিতে কর্মীদের এখন আগের থেকে বেশি অনলাইনে সক্রিয় থাকতে হচ্ছে।
এখন আমাদের টার্গেট কীভাবে কো-অর্ডিনেটলি একটা নেটওয়ার্কের ভেতরে এসে কাজ করা যায়। কীভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটা মেসেজ হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। এটা কর্মীদের জন্য অনেক বেশি এক্সাইটমেন্টের। যেহেতু তারা অনলাইনে থাকেন, সেহেতু তারা এটা এফিশিয়েন্টলি ইউজ করবেন। এজন্য তাদের মধ্যে এক্সাইটমেন্টটা একটু বেশি দেখা যায়।
কোন পক্ষ সিআরআইকে গুজবের কারখানা বলে সেটা শুরুতেই বললাম। আমাদের কাজ গুজব করা না, আমাদের কাজ হচ্ছে গুজব থেকে মানুষকে সঠিক তথ্যটা জানানো।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কোন বিষয়গুলোকে আপনারা গুজব হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন? কিসের ভিত্তিতে সেটা নির্ধারণ হয়?
তন্ময় আহমেদ: কিছু গুজব আছে যেমন একদম ব্লান্ড—কিছু কথাবার্তা, যেগুলোর কোনো রেফারেন্স নেই। যেমন সজীব ওয়াজেদ জয়কে দলের হেড হতে দেওয়া হচ্ছে না, এটা একটা ছিলো। এখন কথা হলো সজীব ওয়াজেদ জয় যেহেতু পাবলিকলি মিডিয়ায় কথা বলছেন না বা উনি আওয়ামী লীগের কোনো বড় পোস্টেও নেই যে উনি এসে প্রেস ব্রিফিং করবেন। একটি পক্ষ এটাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগায়।
আবার যেমন কিছুদিন আগে মির্জা ফখরুল বলছেন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত এক লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এর কিছুদিন আগে আমির খসরু সাহেব একবার বলছেন ১৪ লাখ কোটি টাকা, একবার বলছেন ১০ লাখ কোটি টাকা, এখন আবার বলছেন ১ লাখ কোটি টাকা। মানে এরা গুজব করার সময় নিজেরাই জানে না যে এরা আসলে কি বলছে। নিজেরা কোনো ফ্যাক্টচেকিং করে না।
আমাদের মূল কাজ হলো এই যে এই কথাবার্তাগুলো বলা হয়, মানুষজনকে বিভ্রান্ত করা হয়, এটার সত্যতা তুলে ধরা। তারপর খুব দ্রুত গতিতে আমাদের প্রকাশিত তথ্য নগর থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি সেন্ট্রার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের সমন্বয়ক। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কি?
তন্ময় আহমেদ: আপনারা হয়তো ইতিমধ্যে জয় বাংলা ইউথ এওয়ার্ডের কথা শুনেছেন। এখানে যেসব তরুণরা সরকারি কোনো সহযোগিতা ছাড়া দেশের জন্য বা সমাজের জন্য কাজ করছেন তাদেরকে আমরা স্বীকৃতি দিই। আমাদের কাজটাই হলো তরুণদের নিয়ে। একইসাথে ডেভেলপমেন্ট রিলেটেড যত রিসার্চ আছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করা।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আসন্ন নির্বাচনে সিআরআইয়ের ভূমিকা কি থাকবে? হাইকমান্ড থেকে কোনো নির্দেশনা কি দেওয়া হয়েছে আপনাদের?
তন্ময় আহমেদ: আমাদের ভূমিকা এটাই, লোকজনকে ট্রেইনআপ করা। আর সামনে আমাদের একটা ইউথ ফেয়ার হবে। যেখানে জনগণ আসলে কি চায়, কোন দিকগুলো মানুষ অপছন্দ করে, কোন জিনিসগুলা পছন্দ করে—এই জিনিসগুলা আমরা হাইকমান্ডকে জানাবো।
এখানে হাইকমান্ডের নির্দেশনা দেওয়ার কিছু নেই। পার্টি পার্টির মতো কাজ করবে, আমরা আমাদের মত করছি। আমরা কিন্তু ইন্ডিপেন্ডেন্ট। তবে আমরা পার্টির রিসার্চ উইং এটাও ঠিক। আবার পার্টি আমাদেরকে কোনো একটি পার্টিকুলার বিষয়ে অনুরোধ করতে পারেন। যেমন বলল যে, এই জিনিসটা নিয়ে আমরা একটা বিবৃতি দিতে চাই। তোমরা আমাদেরকে ডাটা দাও। সেটা আমরা ব্যবস্থা করে দিই।
তারপর ধরেন কোনো একটা বিষয়ে বিবৃতি দিতে হবে বা কোনো একটা পলিসি ফর্ম করতে হবে। এ বিষয়ে কি ধরনের ইনপুট দেওয়া দরকার, সেই জিনিসগুলোও আমরা ব্যবস্থা করে থাকি।
এর বাইরে পার্টি থেকে এখনকার যে নির্দেশনা সেটা হলো, কীভাবে সকল মানুষের কাছে আওয়ামী লীগকে একটি গণমানুষের দল হিসেবে তুলে ধরা যায়, সে বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া। যেহেতু আওয়ামী লীগ মানুষের জন্যই কাজ করে, সে কাজটা আমরা তুলে ধরবো।
আরও পড়ুন: গুজব প্রতিরোধে ১০ হাজার ছাত্রলীগকর্মী প্রস্তুত করছে আ.লীগ
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একটি পক্ষ সিআরআইকে গুজব তৈরির কারখানা বলে দাবি করেন। যেখানে আপনারা গুজব প্রতিরোধে কাজ করেন, সেখানে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া কীভাবে দেখেন?
তন্ময় আহমেদ: আমি শুরুতেই বললাম, কোন পক্ষটা এই কথাটা বলে। যে পক্ষের গুজবগুলা আমরা ধরে ধরে দেখিয়ে দিই, সেই পক্ষ এই কথাটা বলে।
দেখেন, একবার ফেসবুকে গুজব ছাড়ালো সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঘেরাও করছে! আবার সেনাবাহিনীর অনেক ট্রেনিং-এর পরে দেখা গেল যে পাহাড়ি এলাকা বা চট্টগ্রামের দিকে গেটে মার্চ করছে। ওই জিনিসগুলোকে তারা বলতেছে যে ঘেরাও করতে আসছে!
যখন এই জিনিসগুলা আমরা আবার পাবলিকের সামনে তুলে ধরি, ‘এগুলো ফেইক, এগুলো মিথ্যা’। তখন তো তাদের যেই মেইন উদ্দেশ্য, সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণেই তারা সিআরআই নিয়ে এত চিন্তিত থাকে। সিআরআইকে একটু কোনোভাবে বিতর্কিত করা যায়, এটাই হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য। আমাদের কাজ গুজব করা না, আমাদের কাজ হচ্ছে গুজব থেকে মানুষকে সঠিক তথ্যটা জানানো।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আপনার শৈশব নিয়ে যদি বলতেন। লাইফের কোন স্টেজটা আপনার সবচেয়ে উপভোগ্য ছিলো?
তন্ময় আহমেদ: সবার ক্ষেত্রেই স্কুল জীবনটা সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য থাকে। কারণ স্কুল লাইফে সবাই টেনশন ফ্রি থাকে।
স্কুলের শেষে আমরা যখন ঢাকায় কলেজে আসলাম, তারপর বুয়েটে গেলাম—এ যাত্রায় আস্তে আস্তে এ স্বাধীনচেতা ভাবটা সংকুচিত হতে লাগলো। তারপর অবশ্যই রাজনীতিতে পুরোপুরি যুক্ত হওয়ার। পরে সেটা আরো বেশি সংকুচিত হয়ে যায়। এটা আসলে যারা আমাদের মতো ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ডের, তাদের জন্য স্কুল লাইফটাই সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কর্মজীবনে আপনি তিতাস গ্যাস কোম্পানির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। সঙ্গে রাজনীতিতেও সক্রিয়। সিআরআইয়ের মতো প্রতিষ্ঠান নিয়েও আপনাকে ব্যস্ত থাকতে হয়। এ সময়ে কোন লাইফটা বেশি উপভোগ করেন?
তন্ময় আহমেদ: সিআরআইতে আমি ২০১৩-এর নভেম্বরে যুক্ত হই। ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত অনেক বছর। স্বাভাবিকভাবে এটা যদি ইনজয় না করতাম তাহলে এতদিন থাকতাম না। পার্টির জন্য, দলের জন্য কাজ করার বড় একটা সুযোগ সিআরাইয়ে পেয়েছি।
এই জায়গাটায় যেহেতু পার্টির হয়ে কাজ করতে পারছি, ডেফিনেটলি সিআরআই-এর কাজটাই বেশি উপভোগ্য। তিতাসের ব্যাপারটা হলো, তিতাসের বোর্ড অফ ডাইরেক্টরদের কাজ বোর্ড মিটিং করা। মিটিংয়ে বসে যদি কোনো ইনপুট দেওয়ার থাকে সেটা দেওয়া। এর বাইরে কোনো কাজ নেই।
কারণ আমাদের ওইখানে অফিস করারও কিছু নেই। সময় দেওয়ারও তেমন কিছু নেই। যখন বোর্ড মিটিং হয়, ডিসিশন মেকিং-এর ব্যাপার থাকে, তখন কিছু ডিসিশন দিতে হয়। যেহেতু আমার ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ড এবং এই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর তিতাসেরও কাজ থাকে। আমার সে কাজগুলোতে কনট্রিবিউট করার সুযোগ থাকে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ২০১৩ সালের একটি ঘটনায় আপনি শিবির কর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় একটি মামলাও হয়েছে। হামলার ঘটনার বিচার কি পেয়েছিলেন?
তন্ময় আহমেদ: হামলার ঘটনার বিচার এখনো পুরোপুরি পাইনি। কয়েকজন আসামি জামিন পেয়েছে, কয়েকজন পলাতক আছে। বেশ কয়েকজনই পলাতক। এটার এখনো কোনো রায় বা কোনো কিছু হয়নি।
কিন্তু আশা করছি সামনে ন্যায়বিচার পাবো। সেরকম আশায়ই তো থাকি। যেহেতু অনেক আসামি আন আইডেন্টিফাইড ছিলো, তাই হয়তো সময় লাগছে। কিন্তু যেটা হয়, আমাদের এখানে তো আসলে মার্ডার না হলে কেউ সিরিয়াসলি নেয় না। অনেক ইস্যুতে অনেকে অনেকভাবে ছাড় দেয়। আমি বর্তমানে আমার নিজের কাজ নিয়ে বেশি চিন্তিত, ওইটা নিয়ে নয়।
আমরা ৭০ জনকে এমনভাবে তৈরি করছি, যেন তারা সারাদেশের কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। এরা আমাদের ট্রেনিং নিয়ে সারাদেশে আরও অন্তত ১০ হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
তন্ময় আহমেদ: আমরা চাই আমাদের রাজনীতিটা অবশ্যই মাঠের রাজনীতি হবে। আবার এই যুগে ইন্টেলেকচুয়াল লেভেলের রাজনীতিটা অনেক বেশি প্রয়োজন। তবে এটা আসলে ইন্ডিভিজুয়ালি হয় না।
যে কারণে আমার ইচ্ছা আছে, এটলিস্ট আমাদের আওয়ামী লীগ এখানে একটা উইং থাকবে। যেখানে জ্ঞানভিত্তিক কাজ হবে এবং এখানে পার্টির নিজস্ব একটা ক্যাপাসিটি থাকবে। যেখানে পার্টির কোন জায়গায় কি সমস্যা সেটা যেন আমরা মুহূর্তের মধ্যেই জানতে পারি, সমাধান করতে পারি। ওই জায়গাটায় আমাদের নেওয়ার ইচ্ছা।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
তন্ময় আহমেদ: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্যেও শুভকামনা রইলো।