শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসাই শিক্ষকতায় আমার প্রাপ্তি
১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এই দিবসটি শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য পালন করা হয়। বাংলাদেশে এবারেই প্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘শিক্ষক দিবস’ পালিত হতে যাচ্ছে। শিক্ষক দিবসে শিক্ষকবৃন্দের চাওয়া-পাওয়া, নানা অর্জন ও চিন্তা ভাবনার বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিপ্রবি প্রতিনিধি রিয়া মোদক-
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
শরিফুল ইসলাম: শিক্ষক দিবস পালনের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। দিবসটিকে কেন্দ্র করে হলেও শিক্ষকদের ভূমিকাকে মূল্যায়ণের একটি বিশেষ উপলক্ষ্য তৈরি হয়। যদিও আমাদের দেশে দিবসটি আড়ম্বরভাবে উদযাপিত হতে দেখা যায় না। আমি মনে করি, এ দিবসকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের অর্জন, ব্যর্থতা, স্বপ্ন ও বাস্তবতা নিয়ে স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সভা-সেমিনার করা প্রয়োজন। গণমাধ্যমগুলোতে বিশেষ প্রতিবেদন ও আলোচনা অনুষ্ঠান হতে পারে। এতে শিক্ষকতা পেশার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে। শিক্ষকদেরও সম্মান ও দায়বদ্ধতা বাড়বে। যা পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষকদের মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয়—আমাদের শিক্ষকরা সেই বহুল কাঙ্ক্ষিত আলোকিত মানুষ তৈরি করতে পারছেন?
শরিফুল ইসলাম: আদর্শ শিক্ষক আলোকিত মানুষ গড়তে সদা সচেষ্ট থাকেন। তবে যার উপর আলোকিত মানুষ গড়ে তোলার দায়িত্ব, তিনি নিজে প্রথমে আলোকিত হতে হবে। সততা, মানবিকতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার মতো সদগুণগুলো তাকে ধারন করতে হবে। তবেই তার হাত ধরে আলোকিত মানুষ গড়ে উঠবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষক হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে আপনার স্বপ্ন কী, প্রাপ্তি কতখানি?
শরিফুল ইসলাম: একজন 'শিক্ষক' হয়ে উঠতে যেন পারি এটাই আমার স্বপ্ন। আমি মনে করি শিক্ষক হয়ে উঠতে পারার স্বপ্ন অনেক বড় স্বপ্ন। যে স্বপ্নে থাকে জ্ঞান পিপাসু হয়ে উঠার স্বপ্ন- ’বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র’। আমি স্বপ্ন দেখি আমার শিক্ষার্থীরা যেন আমার উপর আস্থা রাখতে পারে। তাদের জ্ঞান পিপাসা নিবারণে আমি যেন নিজেকে প্রস্তুত রাখতে পারি। আর শিক্ষকতায় আমার প্রাপ্তি বলতেও বুঝি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘The teachers we need for the education we want: The global imperative to reverse the teacher shortage’ অর্থাৎ, ‘কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা পেতে যেমন শিক্ষক চাই : শিক্ষক সংকট ঠেকাতে বৈশ্বিক উদ্যোগ।’ প্রতিপাদ্যটি কি সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক? আপনার মন্তব্য কি?
শরিফুল ইসলাম: এটা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আরেকটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত তা হলো ফ্যাকাল্টি একচেঞ্জ প্রোগ্রাম। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষকদের আমাদের দেশে নিয়ে আসা ও আমাদের শিক্ষকরাও বৈশ্বিক পরিসরসহ দেশের আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াতে পারেন। আমাদের দেশে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশ কিছু সংকট থাকে। এক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞান বিনিময়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দেশের শিক্ষকরা বেতন-মর্যাদায় পিছিয়ে আছে বলে শোনা যায়-সেটা কতটুকু প্রাসঙ্গিক? এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
শরিফুল ইসলাম: এ কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে ন্যায্য পাওনা থেকেও বঞ্চিত হোন। একজন শিক্ষকের থেকে মানসম্মত আউটপুট পেতে হলে তার আর্থিক নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে হবে। উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষকদের বেতনের ও সামাজিক মর্যাদা অন্যান্য পেশার তুলনায় বেশি। আমাদের দেশে উল্টো। নীতিনির্ধারণেও শিক্ষকদের অংশগ্রহণ তেমন চোখে পড়ে না। অথচ বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের জ্ঞান, দক্ষতা ও গবেষণা কাজে লাগানো গেলে রাষ্ট্র আরো সমৃদ্ধ হতো।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একজন ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
শরিফুল ইসলাম: বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হওয়া উচিত পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। একজন শিক্ষার্থীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া মানে তার চিন্তা ও মতামতকে শ্রদ্ধা জানানো। এর ফলে শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠে। সে বড় স্বপ্ন দেখতে শেখে, বড় চ্যালেঞ্জ নিতে আত্মপ্রত্যয়ী হয়। অন্যদিকে একজন শিক্ষার্থীরও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন। এতে শিক্ষকের বক্তব্য ও উপদেশের প্রতি শ্রদ্ধা জন্মে। শিক্ষকের বক্তব্যকে অধিক মূল্যবান ও অনুসরণযোগ্য মনে হয়।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হোক কিন্তু পরস্পরের বন্ধু হয়ে উঠবে না; অন্যদিকে সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীলতা থাকুক কিন্তু তা যেন ভয়ের উৎস হয়ে না উঠে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীলতা গুরুত্ব দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে অস্বীকার করা। বরং সম্পর্কে বন্ধুত্বপূর্ণ ও শ্রদ্ধাশীল হওয়ার মধ্য দিয়ে একটি ভারসাম্য তৈরি হয় যা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যক। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হোক সৌহার্দপূর্ণ, মানবিক ও আন্তরিক ভাবাপন্ন।