২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:২৮

সংসার-সন্তান সামলে সহকারী জজ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির তাসলিমা

তাসলিমা ইসলাম  © টিডিসি ফটো

১৬তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলে সহকারী জজ হিসেবে মেধাতালিকায় ৮০তম হয়েছেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তাসলিমা ইসলাম। পরীক্ষায় তার প্রস্তুতি ও সাফল্য নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। তার কথাগুলো শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিনিধি জান্নাতুল ফেরদৌস

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় দেশব্যাপী ৮০তম হয়েছেন। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা।
তাসলিমা ইসলাম: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে আপনার কেমন লাগছে? আপনার অনুভূতি জানতে চাই
তাসলিমা ইসলাম: এটা আমার অনেকদিনের জার্নি। আশা ছিলো কিন্তু এভাবে দিনটা কল্পনার বাইরে ছিলো। ভাষায় বোঝানো যাবে না। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচয়?
তাসলিমা ইসলাম: মুন্সিগঞ্জের মেয়ে আমি। ঢাকাতেই থাকি। স্কুল কলেজ ও ঢাকায় ছিলো। আমার একটি পাঁচ বছরের সন্তানে র‌য়েছে। আমি ২০০ এবং ২০০৮ সালে আমার এসএসসি এবং এইচএসসি সম্পূর্ণ করি। আমার স্বামী একজন সরকারি চাকুরীজীবী।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিজেএস পরীক্ষা শুরুর যাত্রা।
তাসলিমা ইসলাম: বিজেএসের যাত্রা শুরু হয় আমার ১৩তম থেকে। এর আগ পর্যন্ত বিজেএস সম্পর্কে আমার ধারনা ছিলো না। বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষের কাছে শুনতাম। সিনিয়র ভাইয়া আপুরা বলতো। শুরু থেকে তেমন আগ্রহ ছিলো না ১৩তম পরীক্ষা থেকে মোটমুটি সিরিয়াস হওয়া শুরু হই। ১৫ তম বিজেএসে আমি অসুস্থ হয়ে যখন আর কিছু করতে পারিনি তখন আমার মনে হয়েছিলো আর পারবো না আমাকে দিয়ে হবে না আর। আমি এটার জন্য না। অনেককিছু নিয়ে সংশয় ছিলো। বাচ্চা সংসার সামলে পড়ার জন্য সময় বের করাটা একটু কষ্টের ছিলো। আমার বাচ্চাকে যখন স্কুলে নিয়ে যেতাম তখন ওকে ক্লাসে দিয়ে আমি স্কুলের সামনের মাঠে গার্ডিয়ানরা যখন আড্ডা দিতো তখন আমি বসে বসে পড়াতাম। হয় পেপার পড়তাম নাহলে বই নিয়ে যেতাম বই পড়তাম। আমার ম্যাথ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীতে দুর্বলতা ছিলো তাই আমি প্রত্যেকদিন চেষ্টা করতাম সময় ভাগ ভাগ করে এগুলো পড়ার। এটা আমার শেষ জুডিশিয়ারি ছিলো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কোন বিষয় আপনাকে অনুপ্রেরণা দিতো?
তাসলিমা ইসলাম: ২০১৮ এর শেষের দিকে প্রিপারেশন নেয়া শুরু করি। আমি ১৩ তম, ১৪তম, ১৫ তম, বিজেএস দিই কিন্তু সফলতার মুখ দেখতে পাইনি। প্রত্যেকবারই আমার সর্বোচ্চটা দিতাম কিন্তু হয়তো আমার প্রিপারেশনে কমতি থাকায়, প্রপার গাইডলাইনের অভাব থাকায় সফল হতে পারিনি। আমি যখন ১৩ এবং ১৪ তম বিজেএসের রিটেন দিই তখন দেখি যে আমার ম্যাথ অনেক খারাপ হয়। সম্ভবত মাত্র ২ টা ম্যাথ উত্তর করি। তখন অনেক ভেঙ্গে পরি মনে হচ্ছিলো পারবো না তাও আমি শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়েছি।

এটা আমার শেষ বিজেএস ছিলো। সফল হই বা না হই আমার দিক থেকে আমি চেষ্টা করে রেখেছিলাম। প্রত্যেকবার যখন অসফল হতাম আমার স্বামী এবং আমার ছোট ভাই আমাকে খুব অনুপ্রেরণা দিতো যে না আমি পারবো। সে বলতো শেষ বলতে কিছু নেই শেষ থেকেই শুরু। সাথে আমার মায়ের সাপোর্ট, শশুড়- শাশুড়ির সাপোর্ট ছিলোই। এছাড়াও আমার নিজেরও একটা জেদ ছিলো যে না আমি এতো তাড়াতাড়ি হার মানবো না। দেখি আরেকবার দিয়ে কি হয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করার জন্য আইনের পাশাপাশি আর কোন কোন বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
তাসলিমা ইসলাম: দুর্বল জায়গাগুলো আগে বের করতে হবে। আইনের শিক্ষার্থী হিসেবে এ বিষয়ে দক্ষতা থাকবে স্বাভাবিক তার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক, বাংলাদেশ বিষয়াবলী, ম্যাথ, গ্রামার এগুলো ভালোভাবে দেখতে হবে। এ বিষয়গুলো একটু টেকনিক্যালি বুঝে বুঝে পড়লে অনেক নাম্বার পাওয়া যায় এবং এটিই এগিয়ে রাখতে সাহায্য করে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এই পরীক্ষার প্রস্তুতি কখন থেকে নেয়া উচিত বলে মনে করেন?
তাসলিমা ইসলাম: আমার মনে হয় একদম শুরু থেকেই এর প্রস্তুতি নেয়া শুরু করা উচিত। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয় প্রথম থেকেই যদি নোট করে পড়া শুরু করা যায় তাহলে সফলতাটা দ্রুত পাওয়া সম্ভব। আমি এটা নিয়ে খুব স্ট্রাগল করেছি। আইনের বিষয়গুলোতে প্রথম থেকেই দক্ষতা থাকলে পরে আর বাকিগুলো পড়তে তখন প্রেশার হয় না। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিজেএস পরীক্ষায় একাডেমিক রেজাল্টের গুরুত্ব কতটুকু?
তাসলিমা ইসলাম: ওখানে আসলে একাডেমিক রেজাল্টের গুরুত্ব থাকে না। আপনি প্রিলি, রিটেন, ভাইবা কেমন দিবেন তার উপর নির্ভর করে। তবে ভালো রেজাল্টের একটা প্রভাব অবশ্যই থাকে। এটি আপনার কনফিডেন্স বাড়িয়ে দেয়। আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। তখন ভাইবা বোর্ডে নার্ভাস হওয়াটা কাজ করে না। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নিয়োগ পাওয়ার পর দেশ নিয়ে আপনার ভাবনা জানতে চাই। কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে কিনা?
তাসলিমা ইসলাম: আসলে বিচার বিভাগ এমন একটি জায়গা এখানে অনেক কিছু দেওয়ারও আছে নেওয়ারও আছে। সৎ থেকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য যতটুকু করা দরকার করবো। কারণ এটা নিজের জন্য তো নয় দেশের জন্য করা। আইনি সহায়তা যারা পাচ্ছে না তাদের সাহায্য, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এটি বিশাল দায়িত্বের কাজ। সৎ থেকে বিচার বিভাগের আদর্শ বজায় রাখা। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যারা এ পরীক্ষা দিতে আগ্রহী তাদের কোন কোন বিষয়গুলো বেশি গুরুত্ব দিলে সফল হওয়া সম্ভব?
তাসলিমা ইসলাম: এখানে স্পেসিফিক কোনো জায়গা ধরা যাবে না। কারণ বিচার বিভাগের এটা এমন একটি জায়গা যেখানে আপনাকে সব বিষয়েই কোয়ালিফাই হতে হবে, দক্ষতা থাকতে হবে। আপনি একজন প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার হবেন আপনাকে অন্য অফিসারদের মতোই দক্ষ হতে হবে। কোনো বিষয়কেই হালকাভাবে নেয়া যাবে না। একেকজনের একেক বিষয়ে দুর্বলতা থাকে ওটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যদি কম পারে বেশি বেশি করে অনুশীলন করতে হবে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার মানুষ মেধার জোরে না পারলেও পরিশ্রমের জোরে ঠিকই পারে। আমার মেধার হার যতটা না ছিলো আমার পরিশ্রমের পরিমাণ তার চাইতে অনেক বেশি ছিলো। কেও যদি সঠিকভাবে পরিশ্রম করে তার ফলাফল সে পাবেই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার সাফল্য কামনা করছি।
তাসলিমা ইসলাম: আপনাকেও ধন্যবাদ।