২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:১৪

হলের হাঁটু সমান পানিতে বসে বিসিএসের প্রস্তুতি নিয়েছি

নাজমুল হাসান নাহিদ   © টিডিসি ফোটো

বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের ইংরেজি বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান নাহিদ সম্প্রতি প্রকাশিত ৪১তম বিসিএসে নন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বর্তমানে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে অডিটর পদে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলেও সেখানে যোগদান করেননি।

বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল পূর্ব গরঙ্গল গ্রামে বেড়ে উঠা নাজমুল হাসান নাহিদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে শুনিয়েছেন বিসিএসে উত্তীর্ণ, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন, শিক্ষার্থীদের প্রতি তার পরামর্শের কথা। তার কথাগুলো নিয়েছেন বিএম কলেজ প্রতিনিধি জুনাইদ সিদ্দিকী।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে শুরু করেছিলেন?
নাজমুল হাসান নাহিদ: আমি প্রথম দিকে জব সলিউশন থেকে বিসিএসের বিগত সালের প্রশ্নগুলো সলভ করতাম। কোথায় কোথায় আমার দুর্বলতা আছে এগুলো খুঁজে বের করে সমাধান করতাম। বিশেষ করে প্রত্যেকটা বিষয়ের জন্যই আমি আলাদা করে বই কিনে পড়তাম।

যেমন বাংলার জন্য অগ্রদূত, গণিতের জন্য শাহীন’স ম্যাথ, ইংরেজির জন্য কম্পিটিটিভ এক্সাম, সাধারণ জ্ঞানের জন্য জর্জ-এর বই। এমন করে সাবজেক্ট ভিত্তিক আলাদা আলাদা বই পড়তাম। এছাড়াও নবম-দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্রসহ বিভিন্ন টেক্সট বই বেশি বেশি পড়তাম।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে আমি কোনো সাবজেক্টের জন্য একাধিক কোনো বই নেইনি। প্রতিটা সাবজেক্টের জন্য একটা করেই বই নিয়েছি এবং যেটা নিয়েছি সেটা ভালোভাবে পড়েছি। আমি মনে করি পরীক্ষার পূর্ব পর্যন্ত বেশি বেশি রিভিশন দেওয়া উচিত।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএসের প্রস্তুতি কবে থেকে শুরু করেছেন?
নাজমুল হাসান নাহিদ: মূলত আমি অনার্স তৃতীয় বর্ষ থেকে মোটামুটি পড়াশোনা শুরু করেছি। ওই সময় জব সলিউশনসহ টুকি-টাকি বই পড়েছি। তবে মূল প্রস্তুতি অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পর থেকেই নিয়েছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এমন কোনো অভিজ্ঞতা বা কোন ব্যক্তি কি আছে, এ যাত্রায় আপনি যার থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন?
নাজমুল হাসান নাহিদ: এটা বলতে গেলে ডিপার্টমেন্টের বড়দের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার সফলতা, সফল ব্যক্তিদের মোটিভেশনাল বক্তব্য এবং ক্লাসের স্যারদের পরামর্শই আমার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার এমন সফলতার পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি?
নাজমুল হাসান নাহিদ: সফলতার গল্প বলতে গেলে বাবা মায়ের কথাই অগ্রগণ্য। অতএব সফলতার গল্পের পেছনে বাবা-মায়ের অবদানই সব থেকে বেশি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য এমন কোনো স্মৃতি আছে কিনা, যা আপনি আগে কখনো বলেননি।
নাজমুল হাসান নাহিদ: সেরকম উল্লেখযোগ্য খুশির কোনো স্মৃতি না থাকলেও আমার কষ্টে জর্জরিত কিছু স্মৃতি রয়েছে। সেটা হলো আমি বিএম কলেজে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার ডিগ্রি হল (ডরমেটরি) নামক হলে একটা জীর্ণ কুটিরে মানবেতর জীবনযাপন করেছি। এই হলের অবস্থা সম্পর্কে আপনারা সবাই জানেন।

তবে একটা পর্যায়ে আমি এখানে থাকতে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। নতুন কেউ এ হলের অবস্থা দেখলে আশ্চর্য হয়ে বলেন এখানে কি কোনো শিক্ষার্থী থাকেন! নাকি এটা পরিত্যক্ত? অনেকের ধারণা এখানে কোনো শিক্ষার্থী থাকে না। তবে আসলে এটা পরিত্যক্ত নয়, এখানেও শিক্ষার্থী থাকে। এসব নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে। কোনো পরিবর্তন হয়নি।

ডরমেটরিতে দেখা যেত যখন পড়তে বসতাম বৃষ্টি হলে বৃষ্টির পানি টিনের চালা বেয়ে সরাসরি আমার পড়ার টেবিলে এসে পড়তো। এমনও দেখা যেত ভারী বর্ষণে রুমের ভেতরে হাঁটু সমান পানি উঠতো। তখন চেয়ারের উপর পা তুলে অথবা খাটের উপরে বসে পড়তাম। স্মৃতি বলতে এগুলো আমি কখনো ভুলবো না।

আরও পড়ুন: ভারি বর্ষণে ডুবে গেছে বিএম কলেজ ক্যাম্পাস, পানি ঢুকেছে দুই ছাত্রাবাসে

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শৈশবের সময়টা কীভাবে কেটেছে?
নাজমুল হাসান নাহিদ: শৈশব এবং কৈশরের সময়টা আমি গ্রামেই কাটিয়েছি। আমি উচ্চমাধ্যমিক পাস করে শহরে আসি। গ্রামে থাকায় শৈশবটা হৈ-হুল্লোড়ে কেটেছে। লেখাপড়াটা মূলত গৌণ ছিলো, অতটা মুখ্য ছিল না।

এখনকার বাচ্চাদের যেমন ক্লাসের আগে প্রাইভেট এবং ক্লাসের পরে কোচিং থাকে—আমাদের সময় এমনটা ছিল না। আমরা স্কুলে যাওয়ার আগে খেলাধুলা করতাম, স্কুল থেকে এসে আবার খেলাধুলায় নেমে যেতাম। আমাদের সময় মূলত বাসায় বসে লেখাপড়াটা সন্ধ্যার পরেই হতো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
নাজমুল হাসান নাহিদ: আমি একজন সফল সরকারি চাকরিজীবী হতে চাই। আমি যে ক্যাডারেই নিযুক্ত হই না কেন, আমার অবস্থান থেকে দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য সর্বোচ্চ সেবা দিতে চাই। নিজেকে সর্বদা দেশের সেবায় নিয়োজিত রাখতে চাই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএসে আগ্রহী আপনার জুনিয়রদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?
নাজমুল হাসান নাহিদ: আমার মতে অনার্স প্রথম বর্ষ থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। প্রথম দিকে বিসিএসের বিগত সালের প্রশ্নগুলো অ্যানালাইসিস করে যেই সাবজেক্টগুলোতে দুর্বলতা রয়েছে, সেই সাবজেক্টগুলো এখন থেকেই পড়া শুরু করে দেওয়া।

অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পরীক্ষা দেওয়ার পরপরই  বিসিএসের পড়াশুনার মূল জার্নিটা শুরু করা। এছাড়া পড়াশুনার পাশাপাশি নিয়মিত পেপার-পত্রিকা পড়া। দেশ এবং দেশের বাইরের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখা। আরেকটা বিষয় হচ্ছে যেটা না বললেই নয়, সেটা হলো অ্যাকাডেমিক বিষয়গুলো সুন্দরভাবে অধ্যয়ন করতে হবে। ভালো রেজাল্ট করতে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
নাজমুল হাসান নাহিদ: আপনাকেও ধন্যবাদ। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্য শুভকামনা রইলো।