০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪:৫৫

‘বিসিআরপি’ দেশে গবেষক বাড়াবে, বৃদ্ধি করবে গবেষণাকর্মও

অধ্যাপক মো. শাহ আলম চৌধুরী  © টিডিসি ফটো

দেশব্যাপী নবীন গবেষকদের নতুন নতুন গবেষণা প্রবন্ধ এবং প্রবীণদের গবেষণাকর্ম নিয়ে জার্নাল প্রকাশে কাজ করছে গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ সেন্টার ফর রিসার্স এন্ড প্ল্যানিং (বিসিআরপি)’। শিক্ষক ও গবেষক অধ্যাপক মো. শাহ আলম চৌধুরীর হাত ধরে সংস্থাটি দেশব্যাপী গবেষণাকর্ম বৃদ্ধিতে কাজ করছে। ২০২০ সালে এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু। যাত্রা শুরুর পর থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গবেষকদের গবেষণাকর্ম প্রকাশে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান।

গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান বিসিআরপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যাপক শাহ আলম চৌধুরী পেশায় একজন শিক্ষক। ব্যাক্তিগত গবেষণার পাশাপাশি তিনি এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। বিসিআরপি নামে নিজের গড়া গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিয়ে কথা বলেছেন এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মো. শাহ আলম চৌধুরী। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল কবীর ফারহান-


দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশ সেন্টার ফর রিসার্স এন্ড প্ল্যানিং এর কার্যক্রম কি?

অধ্যাপক মো. শাহ আলম চৌধুরী: বাংলাদেশ সেন্টার ফর রিসার্স এন্ড প্ল্যানিং মূলত একটি গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান। দেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ গবেষণা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিতদের নিয়মিত গবেষণায় আগ্রহী করতে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। যারা শিক্ষকতা করছেন অথবা শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন পেশায় থেকেও গবেষণা করছেন, তাদেরকে নিয়েই  আমরা কাজ করছি। তাদের বিভিন্ন গবেষণাকর্ম প্রকাশ করতে আমরা নিয়মিত বিভিন্ন জার্নাল প্রকাশ করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিআরপি এর জার্নাল কয়টি, সেগুলো কি ধরনের গবেষণা নিয়ে কাজ করছে?

অধ্যাপক মো. শাহ আলম চৌধুরী: আমাদের ২টি প্রিন্টেড জার্নাল রয়েছে। এরমধ্যে ১টি ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব বিজনেস, আর্টস এন্ড সাইন্টিফিক স্টাডি নামে প্রকাশিত হয়। এটি আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত প্রথম জার্নাল। ২০২০ সালে এই জার্নালের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এই প্রকাশনীর ৪র্থ ভলিউম এর কাজ চলমান রয়েছে। পরবর্তীতে ২০২১ সালে কার্যক্রম শুরু করা জার্নাল অব সাস্টেইনেবল লার্নিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর ৩য় ভলিউম এর কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া অনলাইনভিত্তিক জার্নাল হিসেবে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব অ্যাডভান্স রিসার্স এন্ড হায়ার স্টাডিজ; সাম্প্রতিক সময়ে এই জার্নালের কাজ শুরু করা হয়েছে। 

আমরা সব ধরনের গবেষকদের গবেষণাকর্ম নিয়েই কাজ করছি। আমাদের সবক’টি জার্নালেই ইঞ্জিনিয়ারিং, সাইন্স, বিজনেস এবং কলা ও সমাজবিজ্ঞানসহ সকল ক্ষেত্র নিয়েই প্রবন্ধ প্রকাশ হচ্ছে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: জার্নালসমূহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কেমন স্বীকৃতি পাচ্ছে? 

অধ্যাপক মো. শাহ আলম চৌধুরী: বাংলাদেশ সেন্টার ফর রিসার্স এন্ড প্ল্যানিং কর্তৃক প্রকাশিত ৩টি জার্নালই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। সবকয়টি জার্নালেরই ইন্টারন্যাশনাল স্টান্ডার্ড সিরিয়াল নাম্বার (আইএসএসএন) রয়েছে। ফ্রান্সভিত্তিক এই সংস্থাটি প্রকাশিত জার্নালসমূহের সম্পাদকীয় পরিষদসহ বিভিন্ন মানদণ্ড যাচাই বাছাই করে একটি কোড নাম্বার দিয়ে থাকে। এই কোড নাম্বারকে আইএসএসএন নাম্বার বলা হয়। প্রথম প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব বিজনেস, আর্টস এন্ড সাইন্টিফিক স্টাডি এর আইএসএসএন নাম্বার ২৭০৯-০৮২৫; পরবর্তীতে কার্যক্রম শুরু হওয়া জার্নাল অব সাস্টেইনেবল লার্নিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর আইএসএসএন নাম্বার ২৭৯১-০৮৮১ এবং ২৯৭৫-৮৬৭১ হল সাম্প্রতিক প্রকাশিত অনলাইনে প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব অ্যাডভান্স রিসার্স এন্ড হায়ার স্টাডিজ আইএসএসএন নাম্বার। 

এছাড়াও ভারতীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি ইনস্টিটিউটের সঙ্গে রিসার্স কোলাবরেশনের জন্য আমাদের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়েছে। আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান বিসিআরপির কাজ শুরুর উদ্দেশ্য কি?

অধ্যাপক মো. শাহ আলম চৌধুরী: খোঁজ নিলে জানতে পারবেন, আমাদের দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল রয়েছে। তবে এই জার্নালগুলো নিয়মিত প্রকাশ করা হয় না। এর কারণ হিসেবে আমি মনে করি, দেশের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের শিক্ষকরা নিয়মিত গবেষণা করেন না। অনেক শিক্ষক আছেন যারা পদোন্নতি পাওয়ার সময় হলে প্রয়োজন অনুযায়ী আর্টিকেল লিখেন। পদোন্নতি পেয়ে অধ্যাপক হয়ে গেলে  অনেককেই আর গবেষণায় দেখা যায় না। ফলে প্রয়োজন অনুযায়ী আর্টিকেল না পাওয়াতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জার্নাল থাকলেও তা বছরের পর অপ্রকাশিতই থেকে যায়। 

এতে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা গবেষণা শুরু করছেন, তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করতে চাইলেও এখন পর্যন্ত হাতের নাগালে তেমন জার্নাল নেই তাদের। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত গবেষণায় আগ্রহীরা, তাদের মানসম্মত আর্টিকেল নিয়ে কাজ করতেই আমরা এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে কয়েকটি জার্নাল প্রকাশ করেছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশ সেন্টার ফর রিসার্স এন্ড প্ল্যানিং এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

অধ্যাপক মো. শাহ আলম চৌধুরী: জৈষ্ঠ গবেষকদের নিয়মিত চিন্তাশীল কাজে নিযুক্ত রাখার পাশাপাশি তরুণদের গবেষণায় আগ্রহী করে তুলতে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দেশে গবেষণা আগের তুলনায় বেড়েছে, তবে বিশ্বব্যাপী গবেষণা যে পরিমাণ হচ্ছে, তার তুলনায় আমরা পিছিয়ে আছি। সর্বোপরি আমাদের লক্ষ্য সকল ফিল্ডেই দেশব্যাপী গবেষণা ও গবেষক আরও বৃদ্ধি করা। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা ইতিমধ্যে কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। 

আমরা গবেষণা সংক্রান্ত দুটি কোর্স চালু করব। রিসার্স মেথডলোজি  সার্টিফিকেট কোর্স এবং এইচ আর এম সার্টিফিকেট কোর্স নামের এই দু’টি কোর্সে গবেষণা সংক্রান্ত পাঠদান দেওয়া হবে। এতে শিক্ষার্থীরা গবেষণা শিখে বিসিআরপির সঙ্গে কাজ করতে পারবে এবং নিজেদের গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করতে পারবে। চলতি বছরের শেষদিক থেকে দুই কোর্সেই একত্রে চালু করা হবে। নিয়মিত গবেষণায় আগ্রহীরা এই দুই কোর্সে ভর্তি হতে পারবে। 

এছাড়াও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প নিয়ে কাজ করব। সরকার গবেষণায় অনেক বরাদ্দ দিচ্ছে। তবে এই গবেষণা আরও বাড়ানো দরকার বলে আমি মনে করি। সুযোগ পেলে আমরাও সরকারি গবেষণা প্রকল্পে কাজ করতে চাই। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিআরপি’র জার্নালসমূহে আর্টিকেল প্রকাশের পদ্ধতী কি?

অধ্যাপক মো. শাহ আলম চৌধুরী: এটি একটি নন প্রফিট অর্গানাইজেশন। আমাদের উদ্দেশ্য দেশে গবেষক বাড়ানোর পাশাপাশি গবেষণাকর্ম বৃদ্ধি করা। এখানে নামমাত্র একটি ফি সহ গবেষকদের বিভিন্ন আর্টিকেল জমা নেওয়া হয়। সেগুলো আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী আমাদের সম্পাদনা পরিষদ কর্তৃক যাচাই বাছাই করা হয়। গবেষণার মান যথার্থ থাকলে এটি নির্বাচন করা হয় এবং জার্নালে প্রকাশ করা হয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিআরপি গবেষণাধর্মী বিভিন্ন করফারেন্স কি ভাবছে?

অধ্যাপক মো. শাহ আলম চৌধুরী: আমাদের এখনো কোন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে আমরা ইতিমধ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা একটি ন্যাশনাল কনফারেন্স করবো। সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা গবেষকরা নিজেদের প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে পারবে। এসব গবেষণা প্রবন্ধ হতে যেগুলো নির্বাচিত হবে সেগুলো নিয়ে আমরা একটি বিশেষ জার্নাল প্রকাশ করবো।