গ্রামে আর কোনো বিসিএস ক্যাডার না থাকাটাই সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা ছিল সৌরভের
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ (ব্যবস্থাপনা) বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ দাস। সম্প্রতি প্রকাশিত ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। বর্তমানে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে জুনিয়র অফিসার (হিসাব) পদে কর্মরত আছেন তিনি। এছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলেও যোগদান করেননি।
বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল, ইলুহার গ্রামে বেড়ে উঠা সৌরভ দাস দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে শুনিয়েছেন বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন, শিক্ষার্থীদের প্রতি তার পরামর্শ ও সফলতার গল্প। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আরিফ হোসাইন—
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কখন থেকে বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করলেন?
সৌরভ দাস: ষষ্ঠ সেমিস্টারের শেষের দিকে বিভাগের পড়াশোনার পাশাপাশি আমি বিসিএস প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। আমার প্রথাগত কোন কোচিং সেন্টারে কোচিং সুযোগ হয়নি। তবে এক স্যারের (বিসিএস ক্যাডার) কাছে প্রাইভেট পড়তাম এবং তার দিকনির্দেশনা অনুসরণ করতাম। ২০১৯ সালে ৪১তম বিসিএস এর সার্কুলার প্রকাশিত হলে অষ্টম সেমিস্টারে থাকাকালীন এপিয়ার্ড দিয়ে আবেদন করি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রিলি, ভাইভা ও রিটেন নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
সৌরভ দাস: ৪১তম বিসিএসই ছিল আমার প্রথম বিসিএস এবং প্রথম চাকরির পরীক্ষা। তাই প্রথমদিকে ভয় এবং শঙ্কা থাকাটাই স্বাভাবিক। তখন করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাব থাকায় বাড়িতে ছিলাম। লিখিত পরীক্ষায় অনেক বেশি ধকল পোহাতে হয়েছে। প্রতিদিন পরীক্ষা থাকে, লিখিত পরীক্ষা সকলের জন্যই চ্যালেঞ্জ। ৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার কিছুদিন পূর্বে ৪৩তম বিসিএস এর প্রিলি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তাই একসাথে প্রিলি এবং রিটেনের প্রস্তুতি নেয়া একটু কঠিন হয়ে যায়। ইংরেজি এবং বিজ্ঞান একটু খারাপ হয়েছিল, সাব্জেক্টিভ পরীক্ষার (ম্যানেজমেন্ট) প্রশ্নপত্র স্বাভাবিকের তুলনায় একটু কঠিন হয়েছিল।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এমন কোনো অভিজ্ঞতা আছে যা আপনাকে সফল হতে প্রেরণা দিয়েছিল?
সৌরভ দাস: আমার জন্মস্থান (ইলুহার) একটি নদীবেষ্টিত এলাকা। এর চারপাশেই নদী, এখানে শিক্ষার হার খুবই কম, যোগাযোগ ব্যবস্থাও খারাপ। এক কথা বলতে গেলে একটি প্রত্যন্ত এবং অনুন্নত অঞ্চল।কিন্তু পাশের গ্রামও উন্নত। ষষ্ঠ শ্রেণীতে আমি পাশের উপজেলার স্বরূপকাঠি কলেজিয়েট একাডেমিতে ভর্তি হই। যেখানে যেতে আমার এক ঘন্টার অধিক সময় লাগতো এবং এর মাঝে ৩০ মিনিটের পথ ট্রলারে যেতে হতো। যেটা শিক্ষার্থীদের জন্য কষ্টদায়ক ছিল। আমার জানা মতে, আমার গ্রামে আর কোনো বিসিএস ক্যাডার নেই। সেই জায়গা থেকে নিজেকে বিসিএস ক্যাডার হয়ে প্রতিষ্ঠিত করার আকাঙ্ক্ষা জেগেছিল।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার জীবনের মূলমন্ত্র/গোল কী ছিল?
সৌরভ দাস: নিজেকে সমাজের একজন ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা ছিল জীবনের লক্ষ্য। নিজেকে প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার আকাঙ্ক্ষা ছিল। এখন কাস্টমস ক্যাডারে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কাস্টমস ক্যাডারে যাওয়ার ইচ্ছে কেন?
সৌরভ দাস: আমার কাছে মনে হয়, কাস্টমস ক্যাডার থাকলে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। শিক্ষকতা অবশ্যই একটা সম্মানীয় পেশা। কিন্তু কাস্টমসে থাকলে বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করার স্বাধীনতা পাওয়া যায় এবং দেশ সেবার সুযোগ পাওয়া যায়।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কোনো স্মৃতি আছে কী?
সৌরভ দাস: ছোটবেলায় ট্রলারে করে কষ্ট করে বিদ্যালয়ে যেতে হতো। এসএসসির পর আমি বরিশাল অমৃত লাল দে কলেজে ভর্তি হলে তার সবকিছু পাল্টে যায়। শিক্ষাজীবনে বন্ধু-বান্ধবের সাথের আড্ডা, ট্যুর খুব উপভোগ করতাম। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নিজ বিভাগ থেকে একবার ভারতে শিক্ষাসফরে গিয়ে ছিলাম। যেটা আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সৌরভ দাস: দেশের সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চাই। বিশেষ করে আমার জন্মস্থানের জন্য। সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করব । নিজ এলাকার শিক্ষার হার বৃদ্ধির জন্য কিছু যুগান্তরকারী পদক্ষেপ নেব। অবসরে গেলে নিজ এলাকার জন্য কাজ করব।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ কী?
সৌরভ দাস: বিসিএসে সাফল্যের জন্য জন্য বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন উপভোগ করা থেকে বিরত থাকার দরকার নেই বলে আমি মনে করি। প্রথমে মাইন্ড সেটআপ করতে হবে যে আমি বিসিএস পরীক্ষা দিবো এবং আমাকে উত্তীর্ণ হতেই হবে। শুরুতে বিগত সালের প্রশ্নগুলো পড়তে হবে, তাতে প্রশ্নের ধরন বুঝতে সুবিধা হবে এবং কোন কোন টপিকস থেকে প্রশ্ন হয় এবং কীভাবে হয় সেটাও বোঝা যাবে। এক একজনের রুটিন একেক একরকম হতে পারে, কিন্তু রুটিন অনুযায়ী পড়াশোনা করতে হবে। এলোপাতাড়ি না পড়ে সাজিয়ে গুছিয়ে পড়তে হবে। ভাইবার ভীতি দূর করতে মক ভাইবা দিতে পারেন। বেশি বেশি মডেল টেস্ট দিতে পারেন, তাতে নিজের প্রতি কনফিডেন্সে বৃদ্ধি পাবে। সর্বোপরি অধ্যাবসায়ের কোনো বিকল্প নেই।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।
সৌরভ দাস: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্যও শুভ কামনা। ধন্যবাদ।