শিক্ষা ক্যাডার হতে চেয়ে অ্যাডমিনে সুপারিশ পেলেন সজল

শাকিল মোহাম্মদ (সজল)
শাকিল মোহাম্মদ (সজল)  © টিডিসি ছবি

গ্রামের অন্য আট-দশজন ছেলের মতোই বেড়ে ওঠা। তবে ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফলের মাধ্যমে সফলতার যাত্রা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পাড়ি দিয়ে ৪০তম বিসিএসে নন-ক্যাডার এবং সোনালী ব্যাংকে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। বলেছিলাম নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) কম্পিউটার সাইন্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসটিই) বিভাগের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাকিল মোহাম্মদ (সজল) এর কথা।

সম্প্রতি ৪১তম বিসিএসে প্রসাশন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন শাকিল মোহাম্মদ (সজল)। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন, পরামর্শ ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহসিন আবেদিন—

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার শৈশবের বেড়ে ওঠা সম্পর্কে জানতে চাই?
শাকিল মোহাম্মদ: আমার বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের আর দশজন সাধারণ ছেলের মতই। ছোটবেলায় গ্রামে বড় হয়েছি, তখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি আমাদের গ্রামে। তবে ছোটবেলায় পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলাম। মাধ্যমিক পর্যন্ত ক্লাসে রোল-১ ছিল। যার ফলশ্রুতিতে এসএসসি ও এইচএসসিতেও রেজাল্ট ভালো ছিল আলহামদুলিল্লাহ। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছিলাম। যার মধ্যে অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘মশাল’ আমাদের সময় ‘NSTU-OSN’ নামে একটা প্রোগ্রামিং ক্লাব ছিল যাদের কাছ ছিল প্রোগ্রামিং বিষয়ে ওয়ার্কশপ পরিচালনা করা। আমি ‘NSTU-OSN’-এর প্রেসিডেন্ট ছিলাম। আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের ড. মুশফিকুর রহমান স্যার তখন শীতবস্ত্র কালেকশান করতো উনার সাথেও কাজ করা হয়েছে। এছাড়া জাগো ফাউন্ডেশনসহ আরও সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা ছিল আমার।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস পরীক্ষা দিবেন– এ সিদ্ধান্ত কখন নিলেন?
শাকিল মোহাম্মদ: ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। ইঞ্জিনিয়ার হলাম। ফাইনাল পরীক্ষার পর এবং রেজাল্টের আগে বিসিএসের সার্কুলার হলো এবং দেখলাম সিএসই’র জন্য আইসিটি (শিক্ষা) ক্যাডারের সুযোগ আছে। এভাবেই আবেদন সিদ্ধান্ত নেওয়া।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এতটা পথ পাড়ি দিতে কার অনুপ্রেরণা সবসময় পাশে ছিল?
শাকিল মোহাম্মদ: প্রথমেই যাদের নাম আসে তারা মা, বাবা, তারপর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং পরবর্তীতে কলিগ সবাই আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস ক্যাডার হিসাবে দেশের মানুষের জন্য কি কি সার্ভিস দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
শাকিল মোহাম্মদ: আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করবো। অবশ্যই সেটা ন্যায়,সাম্য, মানবিক এবং আমার দেশের মানুষের উপর মমত্ববোধ রেখেই- আমি নীতিনির্ধারকদের দেওয়া অর্পিত কাজ বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস ক্যাডার হওয়ার আগে ও পরে আশেপাশের মানুষের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? 
শাকিল মোহাম্মদ: চমৎকার, আগেই বলেছি আমি সবসময় একটা পজেটিভ পরিবেশের মধ্যে ছিলাম। আমি আমার চারপাশের মানুষের আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছি। রেজাল্ট পাওয়ার পর আমার মা এবং আত্মীয় স্বজনরাও খুশিতে কেঁদেছিল। আমার সিএসটিই বিভাগের বন্ধুরাও সমানভাবে খুশি হয়েছিল। আমি সবাইকে প্রাউড ফিল করতে পেরেছি একটা ভালো লাগা তো আছেই নিজের মধ্যে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: মানুষের জীবনে একটা ক্রান্তিকাল মুহুর্ত থাকে ঐ সময়ে যে কেউ হতাশায় ভোগে আপনার ক্ষেত্রে এমন কিছু হয়েছিল কি? এমন কিছু ঘটে থাকলে তা কিভাবে কাটিয়ে উঠেছেন?
শাকিল মোহাম্মদ: অনুপ্রেরণা আর হতাশা জোয়ার আর ভাটার মত। নিত্য আসে। আমার ও ছিল। কিন্তু স্বপ্ন পূরণে মনের শক্তি আমাদের সামনে যেতে সাহায্য করে। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটা জিনিস ফলো করতাম, যেই বিষয় নিয়ে হতাশা, তা মাথায় আসলে জাস্ট সেটা নিয়ে চিন্তা অফ করে দিতাম। অন্য কিছু ভাবতাম। অন্যদের ক্ষেত্রে এটা কাজ করবে কিনা জানি না, আমার ক্ষেত্রে করত।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সবাই কেন বিসিএসের পিছনে ছুটছে?
শাকিল মোহাম্মদ: এর কারণ হতে পারে তুলনামূলকভাবে কম হলেও এখানে অনেক ভ্যাকেন্সি থাকে। অন্য ক্ষেত্রে জবের ক্ষেত্র কম। তাছাড়া সবাই চায় হয়তো একটা প্রথম শ্রেণির চাকরি পেতে ক্যাডার না হলেও নন ক্যাডারেও হওয়ার চান্স থাকে। তাই হয়তো সবাই এদিকে ঝুঁকছে। কারণ বিকল্প চাকরিক্ষেত্র তো খুব কম আপনার হাতে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: অন্য ক্যাডার থাকতে প্রশাসন ক্যাডারে কেনো এলেন?
শাকিল মোহাম্মদ: প্রশাসনে কাজের ডাইভার্সিটি বেশি এজন্যেই এখানে আসা। এখান থেকে দেশের জন্য যতটা বিস্তৃতভাবে কাজ করা যায় অন্যজায়গা থেকে তা অনেকটা কষ্টসাধ্য। এজন্যই প্রশাসন ক্যাডারে আসা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নতুনদের জন্য বিসিএস প্রস্তুতির জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শাকিল মোহাম্মদ: প্রথমে বিসিএসের সিলেবাস সম্পর্কে পূর্ণ ধারনা নিতে হবে, পূর্বের বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন এনালাইসিস করে দেখতে হবে; সে অনুযায়ী পাঠ পরিকল্পনা সাজাতে হবে। এ পড়ার সাথে সাথে কিছু মৌলিক বই ও পড়ার চেষ্টা করতে হবে। তবে একাডেমিক পড়াশোনা সবার আগে, তারপর গ্রাজুয়েশনের শেষের দিকে গিয়ে বিসিএস নিয়ে পড়া শুরু করা যায়। লক্ষ্য অটুট থাকলে স্বপ্ন ছোঁয়া সম্ভব। মহাভারতে দ্রোণাচার্য যখন গাছে বসা পক্ষীর দিকে তীর নিক্ষেপ করতে পঞ্চপাণ্ডবকে বলল, তখন সবাই পাখি ছাড়াও অন্য সব গাছপালা ও মানুষ দেখতে পাচ্ছিল, একমাত্র অর্জুন ছাড়া। অর্জুন বলল, " গুরুদেব, আমি শুধু পক্ষীর মস্তক দেখতে পাচ্ছি।" দ্রোণাচার্য বললেন, " তুমি আমার যোগ্য শিষ্য।" লক্ষ্য হতে হবে এমন অটুট।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার আগামীর দিনের জন্য শুভ কামনা।
শাকিল মোহাম্মদ: আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence