২৮ জুন ২০২৩, ১৪:৪১

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষের দিকে ঈদ আনন্দটা কমে গেছে

অধ্যাপক আবদুল হক  © টিডিসি ফটো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল হক একজন সিনিয়র শিক্ষক। তিনি জীবনে ৫০টির বেশি ইদ উপভোগ করেছেন। শিক্ষকতায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২ যুগ সময় অতিবাহিত করেছেন তিনি। এসময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অভিজ্ঞ এই শিক্ষক।

সম্প্রতি তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন। খোলামেলা কথা বলেছেন তার শিক্ষকতা জীবন ও ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে। তার কথাগুলো শুনেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানে আলম। আজ থাকছে প্রথম পর্ব

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি জীবনে কয়টি ঈদ উপভোগ করেছেন? ঈদের আনন্দ কখন বেশি উপভোগ্য মনে হয়েছে?
অধ্যাপক আবদুল হক: আনন্দ অনুভূত হওয়ার সময় থেকে হিসেব করলে ৪৩টা ঈদ উপভোগ করেছি। এর মধ্যে প্রথম ১০-১৫টা অনন্য সাধারণ ঈদ ছিল। কক্সবাজারের পেকুয়া থেকে চট্টগ্রামের বাকলিয়া সরকারি কলেজে পড়তাম। দীর্ঘসময় পর বাড়িতে যেতাম। সবাইকে নিয়ে ঈদ উদযাপন করতাম।

তখনকার ঈদগুলো জীবনের স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষের দিকে এসে আনন্দটা কমে গেছে। ছাত্রজীবনে ইদের অনুভূতি সবচে বেশি ছিল।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বয়স হওয়ার সাথে সাথে ঈদের আনন্দ কমে যায়, এমনটি কেন হয়?
অধ্যাপক আবদুল হক: বর্তমানে মানুষের চিন্তার চাহিদার মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। ফলে মানুষের অল্পে তুষ্ট থাকার, খুশি থাকার প্রবণতা কমে গেছে। আগে গ্রামে গেলে গ্রাম্য একটা আভাস পেতাম। কিন্তু এখন নগরকেন্দ্রিকতা এবং অবকাঠামোগত অনেক পরিবর্তন এসেছে। শহর-গ্রাম আলাদা করা যায় না। এছাড়াও মানুষের গুণগত পরিবর্তন এসেছে। যা ঈদ অনুভূতিতে প্রভাব ফেলছে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঈদের দিনে কী কী করেন আপনি?
অধ্যাপক আবদুল হক: বিশেষত পরিবারের সাথে সময় কাটানো হয়। এছাড়াও পুরোনো বন্ধু-বান্ধবদের সাথে গল্প-আড্ডা হয়। এলাকার মানুষদের সময় ভালোই কেটে যায়। বাবাকে হারিয়েছি দুই বছর হচ্ছে। এই অপূর্ণতা থেকেই যায়। এটা ঈদের সাবলীলতা হারিয়ে দিয়েছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঈদুল আজহা থেকে আমরা কি শিক্ষা নিতে পারি?
অধ্যাপক আবদুল হক: ঈদুল আজহার মর্মবাণী মূলত আত্মত্যাগ। আমাদের ভোগের চাহিদাকে অবদমিত রাখার শিক্ষা আছে এই ঈদে। ত্যাগের শিক্ষা এই আমাদের নিতে হবে। তবে দুঃখের বিষয়, এই ঈদ সমাজের অনেকের কাছে ভোগ করার একটি উপলক্ষ্য হয়ে উঠেছে। এটি কাম্য নয়। প্রিয় বস্তু ত্যাগ করার প্রশিক্ষণ আমরা এই ঈদ থেকে পাই। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষার্থীদের নানান ব্যস্ততা এবং হতাশাকে মোকাবিলায় ঈদের ভূমিকা কেমন? শিক্ষার্থীরা এখান থেকে কীভাবে শিক্ষা নিতে পারেন?
অধ্যাপক আবদুল হক: ঈদ আমাদের সতেজ করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি কম্পিউটারে কাজ করতে করতে অনেক সময় স্লো হয়ে পড়ে। তখন আমরা রিফ্রেশ করি। এতে কাজের বিঘ্ন ঘটে না বরং কাজের গতি বৃদ্ধি পায়। 

অনেকের মনে হতে পারে ঈদের সময়টা পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে ক্ষতি হয়। আসলে তা নয়। যতই পরীক্ষার চাপ, চাকরির দুশ্চিন্তা থাক কিংবা ব্যস্ততা থাক, ইদের সময়ে রিফ্রেশ হওয়া উচিত। কারণ, মস্তিষ্ক সবসময় চাপ নিতে পারে না। ভালো পারফরম্যান্সের জন্য এই সুযোগগুলো শিক্ষার্থীদের কাজে লাগাতে হবে। এতে দীর্ঘ সময়ের জন্য কাজের ইচ্ছে বৃদ্ধি পাবে। এই জাতীয় সকল উপলক্ষ্যকে কাজে লাগাতে হবে শিক্ষার্থীদের।