মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্তের ব্যবস্থা করার অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়
‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’- গানের এই লাইনটি হয়ত অনুসরণ করেন রক্তযোদ্ধারা। মুমূর্ষু রোগীর জীবন বেঁচে যাবে এক ব্যাগ রক্তের বিনিময়ে। সেই সঙ্গে দেখা মিলবে পরিবারের হাসিমাখা মুখ, মিলবে দোয়া। এই আত্মতৃপ্তি থেকেই মানুষের জীবন রক্ষায় রক্তের সন্ধানে কেউ কল করলেই এগিয়ে আসেন কোররবান আলী । একের পর এক কল করতে থাকেন রক্তদাতাদের। রক্তের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তার যেন বিশ্রাম নেই।
কোরবান আলী রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি ২০২০ সালে নিজ জেলা পঞ্চগড়ের ‘পাঁচপীর ব্লাড ডোনার সোসাইটি’র প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। প্রতিবছর কয়েকশো ব্যাগ রক্ত জোগাড় করে দেয় তার এই সংগঠন। বিদ্যাপীঠ ঢাকাতে হলেও সংগঠনের কাজে নিয়মিত এলাকায় যান কোরবান । তার সংগঠনের কাজে পাশে পেয়েছেন অনেক সহযোদ্ধাদের। যারা প্রতিনিয়ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। কোরবান আলীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমান উল্যাহ আলভী-
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: রক্ত সংগ্রহের মানবিক কাজটি নিয়ে আপনার অনুভূতি কেমন?
কোরবান আলী: মানুষ বলতেই মানবিক। মানবিকতার বড় গুণগুলোর একটি মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্তের ব্যবস্থা করা। এই কাজটি করার পর যখন কারো মুখে হাসি ফুটতে দেখি, তখন সত্যিই খুব ভালো লাগে। এর অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এই মহৎ সেবায় যুক্ত হওয়ার কারণ কি?
কোরবান আলী: দেশ ও জাতি গঠনের জন্য ভালো মানুষ খুবই প্রয়োজন। ভালো মানুষ হতে হলে ভালো মন তৈরির প্রয়োজন। রক্ত সংগঠন একটি সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি ভালো মানুষ তৈরিতেও ভূমিকা রাখে। ভালো মানুষ ও ভালো মন তৈরির জন্য রক্ত সংগঠন অন্যতম প্লাটফর্ম। তাই এই মহৎ সেবায় যুক্ত হওয়া।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পরিবারকে এই বিষয়ে পাশে পেয়েছেন কি না?
কোরবান আলী: 'পাঁচপীর ব্লাড ডোনার সোসাইটি' এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে কাজ করছি প্রায় ৩ বছর। এই সংগঠন পরিচালনায় প্রতিমাসে নির্দিষ্ট একটি খরচ বহন করতে হয়। মোবাইল বিল ও ইন্টারনেট খরচ পরিবার থেকে পাচ্ছি। এছাড়াও প্রায় সময় রাতের বেলা রক্তদাতাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়, সেক্ষেত্রেও পরিবারের সমর্থন পাচ্ছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: রোগীর জন্য রক্তের ব্যবস্থা কিভাবে করেন?
কোরবান আলী: রক্ত যোগাড় করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম। বিশেষ করে ফেইসবুক, ম্যাসেঞ্জার । এছাড়াও আমরা যারা এই সংগঠনে কাজ করি, তাদের কাছে এলাকাভিত্তিক রক্তের গ্রুপের তালিকা থাকে। কারো রক্তের প্রয়োজন হলে আমরা আমাদের তালিকা দেখে খুঁজি। ফেসবুকে রক্ত সংগ্রহের গ্রুপে পোস্ট দেই। এভাবেই রক্তের ব্যবস্থা করি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: রক্তদাতা কিংবা রোগীর স্বজনদের জন্য কখনো বিড়ম্বনায়পড়েছেন কি না?
কোরবান আলী: বর্তমান সময়ে এসে রক্তদাতার চেয়ে রোগীর স্বজনদের কাছে আমরা স্বেচ্ছাসেবীরা বেশি বিড়ম্বনার শিকার হয়েছি। রোগীর লোক রক্ত চাওয়ার সময় সঠিক তথ্য দিতে অনীহা দেখায়। বেশি কিছু বললে ভুল বুঝে। রক্ত চাওয়ার সময় কেউ কেউ হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ করে। রক্তদাতার যাতায়াত খরচ, স্যালাইন খাওয়ানো ইত্যাদি বিষয়েও অনীহা প্রকাশ করে। রক্ত দেওয়ার পরে একবারও খোঁজ নেয়না। এতে করে আমরা নিয়মিত রক্তদাতাদের হারিয়ে ফেলছি। অনেক সময় আমরা নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে ভাড়া বহন করি। কারণ রক্তদাতা বেশিরভাগই শিক্ষার্থী।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: অন্যদের রক্তদানে উৎসাহিত করার বিষয়ে কি বলবেন?
কোরবান আলী: রক্তদান একটি মহৎ কাজ। ধর্মীয় এবং বিজ্ঞানগতভাবেও। নিয়মিত রক্তদান করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ছাড়াও নানা উপকার হয়। মনের শান্তি মিলে। আমরা চাই প্রত্যেক ঘরে ঘরে রক্তদাতা তৈরি হোক।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সংগঠনের কার্যক্রম নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
কোরবান আলী: পাঁচপীর ব্লাড ডোনার সোসাইটি এখন শুধুমাত্র এলাকাভিত্তিক নয় পুরো পঞ্চগড় জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। এই সংগঠনের মাধ্যমে মানুষকে কাউন্সিলিং করে নতুন নতুন রক্তদাতা বানানোর ইচ্ছা। দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে সংগঠনের শাখা খুলতে চাই। মানুষের যে রক্তের ভোগান্তি সেটা কমিয়ে আনাই আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উপলক্ষে কি বলতে চান?
কোরবান আলী: বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উপলক্ষে একটিই চাওয়া, শুধু মাত্র ব্যানার দিয়ে একটি দিন উদযাপন করলেই হবে না আমাদের রক্তদানেও এগিয়ে আসতে হবে। সরকারিভাবেও অনেক কাজ করা যায়। বিশেষ করে ইউনিয়ন ভিত্তিক। চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে যদি একটি করে সংগঠন থাকে; তাহলে ইউনিয়নের মানুষ সেখান থেকে রক্তদাতা খুঁজে পাবেন। এছাড়াও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সচেতনতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা নিতে পারে। যারা স্বেচ্ছাসেবী, তাদের একটা তালিকা হাসপাতালে রেখে দিলেও ভোগান্তি কমবে। এতে করে সুষ্ঠু ভাবে কাজগুলো এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। তবেই রক্তের অভাবে আর কোন প্রাণ ঝড়বে না।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য ধন্যবাদ।
কোরবান আলী: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পসের জন্যেও শুভ কামনা রইলো।