নীতি-আদর্শে আপোষ না করে স্বজন, অঞ্চল প্রীতির ঊর্ধ্বে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেছি

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম  © টিডিসি ছবি

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) পঞ্চম উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম। ২০১৯ সালের ১২ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের এ অধ্যাপককে উপকূলীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নোবিপ্রবি পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করে। দিনপঞ্জিকার হিসেবে উপাচার্য পদে অধ্যাপক দিদার-উল-আলমের চার বছর মেয়াদের আজ সোমবার (১২ জুন) শেষ কর্মদিবস। দায়িত্বে থাকাকালীন নেয়া নানা উদ্যোগ, অজর্ন, চ্যালেঞ্জসহ সার্বিক অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইরফান এইচ সায়েম—

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন। নোবিপ্রবির উপাচার্য হিসেবেও মেয়াদ পূর্ণ করতে যাচ্ছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর নিশ্চয় নানা পরিকল্পনা নিয়েছিলেন, প্রত্যাশা ছিল। তার কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন বা বাস্তবায়ন হয়েছে?
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম: আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করি। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আস্থা স্থাপন করে আমাকে উপাচার্যের দায়িত্ব প্রদান করেন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সেই আদর্শ ও আস্থার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। যোগদানের পর বিশ্ববিদ্যালয়টির অ্যাকাডেমিক, প্রশাসনিক ও অবকাঠামো খাতে যেসব ঘাটতি ছিল সেগুলো পূরণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। যেসব অর্জন ছিল তা আরো প্রসারিত ও বিকশিত করার উদ্যোগ নিই। এক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতা ছিল। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটে, এমন কোনো বিষয়ে ছাড় দিইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনায় সুশাসনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বেশকিছু অর্জন যুক্ত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপন করেছি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ফরম পূরণ ও টাকা জমাদানের জন্য অনলাইন সেবা চালু করেছি, পরীক্ষার উত্তরপত্রে স্বচ্ছতার জন্য খাতায় নামের পরিবর্তে ইউনিক আইডির ব্যবস্থা করেছি, বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত শুদ্ধাচার কার্যক্রম পরিচালনা করছি। সব পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা অর্জন হয়েছে, তা বলা যাবে না। কারণ ভালো ও অর্জনের পথের কোনো শেষ নেই।

“আবাসিক হলে র‍্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে আমরা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছি। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের হয়রানির শিকার হতে হয় না। অভিযোগ পাওয়া গেলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সাম্প্রতিক সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে দায়িত্ব পালনকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা। আপনি কী ধরনের চ্যালেঞ্জ বা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন?
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম: দায়িত্ব গ্রহণের শুরু দিকে জনবল নিয়ে বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে। কারণ আমার যোগদানের আগে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ ও পদোন্নতিতে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এজন্য শিক্ষক সংকটে কয়েকটি বিভাগে ঠিকভাবে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছিল না। তবে বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ের নজরে আনা হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসিসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সর্বোচ্চ সহযোগিতা পেয়েছি। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর প্রয়োজনীয় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ প্রদান সম্ভব হয়। কার্যক্রম পরিচালনায়ে আন্তরিক সহযোগিতা পেয়েছি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও। সর্বোপরি নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় তা খুব সহজেই উতরে যেতে পেরেছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানতম অংশীজন হলেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আবাসনসহ শিক্ষার অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন?
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম: দায়িত্ব পাওয়ার পর দেখলাম যে, সিট বরাদ্দ না নিয়েই হলে থাকত অনেক শিক্ষার্থী। অননুমোদিত উপায়ে হলে থাকা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এজন্য বরাদ্দের আলোকে শিক্ষার্থীদের হলে থাকার সুযোগ নিশ্চিতে ব্যবস্থা নিই। হলগুলোতে সংঘর্ষসহ যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা প্রায় শূন্যের কোটায় চলে এসেছে। এছাড়া র‍্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে আমরা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছি। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের হয়রানির শিকার হতে হয় না। অভিযোগ পাওয়া গেলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফলে গত চার বছর শিক্ষার্থীদের কোন সমস্যা নিয়ে একদিনের জন্যও এই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়নি। শুধু শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারী সকলেই কাজ করার জন্য সুন্দর একটি পরিবেশ পেয়েছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম কাজ হলো গবেষণা। এক্ষেত্রে নোবিপ্রবির অবস্থান ও অজর্ন নিয়ে কিছু বলুন…
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম: প্রতিবছরই গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। গবেষণায় ব্যয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিসহ অনেকেরই সহযোগিতা পেয়েছি, আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। শুরুতে দেড় কোটি থেকে সাড়ে তিন কোটি; সর্বশেষ অর্থবছরে সেটি বাড়িয়ে প্রায় চার কোটি টাকা হয়েছে। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানোর সুফলও মিলতে শুরু করেছে। কিউ ওয়ান, কিউ টু জার্নালে আমাদের পাবলিকেশন ক্রমেই বাড়ছে। গবেষণাগার সমূহ আগের তুলনায় সমৃদ্ধ করেছি। ফলে ল্যাবের কাজে শিক্ষার্থীদের আগের মত অন্য প্রতিষ্ঠানের দারস্থ হতে হয় না। নিজেদের ল্যাবেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নোবিপ্রবিতে আমরা গবেষণা সামগ্রী স্ক্যানিং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ স্থাপন করেছি। প্রথমবারের মতো স্মার্ট ক্লাস রুম স্থাপন করেছি। আরও কিছু স্মার্ট ক্লাসরুম করার পরিকল্পনাও নিয়েছি।

ফলস্বরূপ বিগত সময়ের চেয়ে নোবিপ্রবির বার্ষিক গবেষণা সংখ্যা বেড়েছে, গবেষণার মান বেড়েছে এবং আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিভিন্ন সংস্থার তালিকায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিং বেড়েছে। ওয়েবমেট্রিক্স প্রকাশিত র‍্যাঙ্কিংএ নোবিপ্রবি বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ২য় স্থানে রয়েছে। করোনার জিনোম সিকুয়েন্স নিয়ে গবেষণায় আমাদের গবেষকগণ সফল হয়েছে। দূষিত পানিতে প্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। এছাড়াও নানাবিধ গবেষণায় সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে আমাদের গবেষকরা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার মেয়াদের একটি বড় সময় করোনার প্রাদুর্ভাব ছিল। ওই সময়ের চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা করেছেন?
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম: আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করোনায় পড়ালেখায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়নি। করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই অনলাইন কার্যক্রম শুরু করে দিই। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক সচেতনতা বজায় রেখে অনলাইন এবং অফলাইনে দুই সেমিস্টার পর্যন্ত সম্পন্ন করেছি। সব বিভাগে সকল ব্যাচ ন্যূনতম একটি সেমিস্টার অনলাইনে সম্পন্ন করেছে। করোনায় যাতে সময় নষ্ট না হয় সেজন্য আমরা কোর্সেরা সহ বিভিন্ন সাইটে চুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কোর্সের বাইরেও ঘরে বসে অনলাইনে নিজেদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট করার সুযোগ করে দিয়েছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক সামাজিক ও ভৌগোলিক দায়িত্বও রয়েছে। উপকূলীয় এ জনপদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নোবিপ্রবি কী ধরনের ভূমিকা রাখছে?
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম: শিক্ষা-সংস্কৃতি চর্চায় নোয়াখালী একটি সমৃদ্ধ অঞ্চল। মহান মুক্তিযুদ্ধেও এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর অনেক অবদান রয়েছে। এজন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নোয়াখালীর জীবিত সকল মুক্তিযোদ্ধাদের এবং নোবিপ্রবিতে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবারের সকল মুক্তিযোদ্ধাকে আমরা সম্মাননা দিয়েছি। এছাড়া করোনাকালীন সময়ে যখন চারদিকে সংক্রমনের ভয় তখন আমরা নিজস্ব অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা ল্যাব স্থাপন করেছি। এই ল্যাবে এক লক্ষাধিক করোনা স্যাম্পল পরীক্ষা করা হয়েছে; যেটি শুধু এই অঞ্চল নয় সমগ্র দেশের সংকটময় সময়ে রাখা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান। আমাদের এই ল্যাবের করোনা টেস্ট শতভাগ নির্ভেজাল বলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) স্বীকৃতি দিয়েছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একাডেমিক ভবন-৩-এর উন্নয়ন কাজ অনেক দিন ধরেই থমকে আছে। এ বিষয়ে আপনারা কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন?
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম: আমি দায়িত্ব পাওয়ার আগেই এই ভবনটির কাজ শুরু হয়। এই প্রকল্পের কাজ পায় জিকেবিএল (জেভি) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির মালিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন অভিযোগে ফ্রিজ করে দেয়। ফলে আমাদের কাজটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়া পূর্বের (২০১৮ সালের) শিডিউলে প্রজেক্টটি পাস হওয়ায় পরবর্তী শিডিউলে মালামালের দাম অনেক বেড়ে যায়। এতে মূল্যের ব্যবধান বেড়ে যাওয়ায় প্রজেক্টটি বাতিল হয়ে যায়। আমরা প্রকল্পটির কাজ নতুন করে আবার শুরুর ব্যবস্থা করছি। এটি ইতিমধ্যে ইউজিসি এবং মন্ত্রনালয় হয়ে প্ল্যানিং কমিটিতে পাস হয়েছে। একনেকে পাস হলেই আমাদের বহুল আকাঙ্খিত এই ভবনটির কাজ আবারও শুরু হবে। এই কাজ আটকে যাওয়াতে কয়েকটি বিভাগের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। তবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে কয়েকটি কক্ষ তৈরি করে বিভাগ সমূহকে ক্লাস নেওয়ার জন্য দিয়েছি। এছাড়াও অনেক অসম্পন্ন কাজ আমরা সম্পন্ন করেছি এবং নতুন করে অবকাঠামো উন্নয়ন করেছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হল এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের কাজ সম্পন্ন করে আমরা প্রয়োজনীয়তা দেখে মেধাবী শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ দিয়ে হলে তুলেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ, ত্রিধর্মী উপাসনালয়, বিশ্ববিদ্যালয়  মেডিকেল সেন্টার, বিএনসিসি ভবন সম্পন্ন করেছি এবং নতুন করে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে যোগাযোগ সুবিধার জন্য রাস্তা-ঘাট তৈরি করেছি। এখন প্রত্যেকটি হল থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সুন্দর রাস্তা দিয়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে আসা যাওয়া করতে পারে। এছাড়াও অর্থনৈতিক সংকীর্ণতার মধ্যে থেকেও আমরা নিজস্ব অর্থায়নে কিছু অবকাঠামো উন্নয়ন করেছি। আবাসিক হল সমূহ সহ সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধার আওতায় এনেছি। ক্যাম্পাসের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস সিসিটিভির আওতায় এনেছি।

“পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে যারা ভাইবাতে যোগ্যতা প্রমাণ করতে পেরেছে ইউজিসির নীতিমালা অনুসরণ করে তাদেরকেই আমরা নিয়োগ দিয়েছি, এতে সুপারিশের চেয়ে যোগ্যতাকে আমরা অধিক গুরুত্ব দিয়েছি।”

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: উচ্চশিক্ষায় কোলাবরাশনকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। এক্ষেত্রে নোবিপ্রবি কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে?
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম: জাপান, তুরস্কসহ বিদেশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সঙ্গে নোবিপ্রবির চুক্তি করেছি। ফলে আমাদের শিক্ষার্থীরা ওইসকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়ম অনুযায়ী কোর্স সম্পন্ন করার সুযোগ পাবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের গবেষণায় মনোনিবেশ করতে আমরা গবেষণাধর্মী বিভিন্ন ক্লাবকে সুযোগ করে দিয়েছি। ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও গবেষণায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এসব শিক্ষার্থীরা বড় বড় গবেষকদের সঙ্গে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে নিজেদের গবেষণা উপস্থাপন করে শীর্ষস্থান অর্জন করছে। তারা বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আমেরিকা, ইউরোপসহ বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডি করার সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা অ্যামাজন, মাইক্রোসফট সহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পেয়ে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি বলেছেন, পূর্বের নিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় নোবিপ্রবিতে দীর্ঘদিন নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা ছিল। আপনার সময়ের নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কী ধরনের নীতি অনুসরণ করেছেন?
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম: আমরা নিয়োগ পরীক্ষাগুলোর উত্তরপত্রে কোড ব্যবহার করেছি। যাতে খাতা দেখে কোন প্রার্থীকে চেনা না যায়। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে যারা ভাইবাতে যোগ্যতা প্রমাণ করতে পেরেছে ইউজিসির নীতিমালা অনুসরণ করে তাদেরকেই আমরা নিয়োগ দিয়েছি, এতে সুপারিশের চেয়ে যোগ্যতাকে আমরা অধিক গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের সুষ্ঠু নিয়োগে অংশগ্রহণ করে এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ৩৬ জন গ্র্যাজুয়েট একত্রে এখানে শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। গত চার বছরে পরিবার অথবা আঞ্চলিক স্বজনপ্রীতি দেখিয়ে একজনেরও নিয়োগ দিয়েছি কেউ প্রমাণ করতে পারবে না।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ