এমবিবিএস পাস করা চিকিৎসকের বেতন ২০-২৫ হাজার কাম্য নয়
‘ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা’ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে ‘স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা’ নিশ্চিত করণের নতুন চ্যালেঞ্জ। বদলে যাওয়া বিশ্বে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সবই যখন হচ্ছে হাতের মুঠোয়, জাদুর কাঠি যখন বদলে দিচ্ছে সবকিছু; চাওয়ায় পরিণত হচ্ছে মানবের সব প্রত্যাশা। তখন সে পরিবর্তনের আঁচ থেকে বাদ যায়নি দেশ-বিদেশের স্বাস্থ্যসেবাও। নতুন পৃথিবীর স্বাস্থ্যখাতে আশা জাগানিয়া নতুন বিষয় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অন্যতম অনুষঙ্গ ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ যা সংক্ষেপে ‘এআই’। ঠিক এমন পরিবর্তনের মূহুর্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে এআই চালু, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারণ বা প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ, দেশের স্বাস্থ্যখাতে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে’র সম্ভাব্য কারিগরি ও ব্যবহারিক নানা দিক নিয়ে নানা জিজ্ঞাসাসহ স্বাস্থ্যখাতে এআই’র ভূমিকা, ইতিবাচক নেতিবাচক নানা দিক এবং এখাতে এআই’র প্রভাব বা পরিবর্তন ক্ষমতা এবং দেশের স্বাস্থ্য-শিক্ষা খাতসহ নানা বিষয় নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন যুক্তরাজ্যের বেইজ হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং হুইটিংটন হসপিটাল এনএইচএস’র কনসালটেন্ট (উইমেন্স হেলথ) ডা. আশফাক এম খান। তিনি এ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন আমাদের সাথে; দ্বিতীয় পর্বে তার চৌম্বক অংশ তুলে ধরেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের নিজস্ব প্রতিবেদক খাঁন মুহাম্মদ মামুন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দেশের স্বাস্থ্যশিক্ষা খাত নিয়ে আপনার অভিমতগুলো কী?
ডা. আশফাক এম খান: যেহেতু আমি এদেশের শিক্ষার সাথে জড়িত না, তাই আমি কোনো মূল্যায়ন করবো না। আমি বাইরে যেহেতু কিছু শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছে; সে আলোকে বলবো। আমি আজকেই সদ্য চিকিৎসা শিক্ষায় উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের সাথে বসেছি, তাদের চিন্তা-ভাবনাগুলো আমার কাছে যথেষ্ট পরিণত মনে হয়েছে। তারা কিছু কাজের বিষয়ে আমাকে বলেছে; তখন আমি তাদের বলেই বসলাম যে, আমি শিক্ষার্থী থাকাবস্থায় এরকম চিন্তা করিনি। তার মানে আমাদের এখানেও ভালো চিন্তা করার মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। তারা ইতোমধ্যে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ নিয়ে জার্নাল বের করেছে; তার মানে তারা অনেক এগিয়ে আছে। দেশের স্বাস্থ্যশিক্ষা খাত নিয়ে আমি আসলে কোন সমালোচনা বা বিতর্কের জন্য বলছি না।
সত্য কথা হচ্ছে, আমাদের এখানে অনেক বেশি মেডিকেল কলেজ অনেক বেশি পরিমাণে হয়ে গেছে। গুণগত মান বজায় না রেখে আপনি ১৫ হাজার চিকিৎসক তৈরি করে কোন লাভ হবে না। আজকে একজন চিকিৎসকের বেতন ২০ হাজার ২৫ টাকা; এটা কোনোভাবেই উচিৎ না। এতে তো তিনি কাজ করতে পারবেন না। আপনি এভাবে ১৫-২০ হাজার চিকিৎসক তৈরি করবেন, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে না। এতে করে চিকিৎসকদের প্রতি মানুষের অনাস্থা বাড়তেই থাকবে এবং ভারতে যাওয়ার প্রবণতা বাড়তেই থাকবে; গত বিশ বছরে তাই হয়েছে। আজকে কোনো কিছুই এ প্রবণতা রুখতে পারছে না। আমি নিজে গত ২২ বছর ধরে বিলেতে কাজ করছি; আমি তো ভারতীয়, পাকিস্তানি, শ্রীলঙ্কানসহ ইউরোপিয়ানসহ বিভিন্ন দেশের চিকিৎসকদের সাথে কাজ করেই তো আমাকে কনসালটেন্ট হতে হয়েছে বা সিনিয়র হতে হয়েছে; আমার মতো আরও অনেকেই রয়েছেন। আমার তো একবারও মনে হয়নি যে, আমার কোনো দিকে ঘাটতি আছে; আমি পারবো না বা আমাকে দিয়ে হবে না। তাহলে কেন আমাদের দেশের ডাক্তাররা রোগীদেরকে ধরতে পারছেন না—কারণটাই হচ্ছে, শীর্ষ পর্যায়ে কিছু ভালো চিকিৎসক তৈরি হচ্ছেন; সাধারণ পর্যায়ে চিকিৎসকরা ওই পর্যায়ে যেতে পারছেন না।
একটা বিষয় দেখেন, দেশে ১০৩ টি মেডিকেল কলেজের মেডিকেল সার্জারি, গাইনী বাদে শুধু এনাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রির মতো বেসিক বিষয়ে পড়ানোর জন্য দুইজন করে ভালো মানের শিক্ষক হলে দেশে ২০৬ জন ভালো শিক্ষক থাকার কথা; আমার মনে হয় না দেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে সে সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন প্রভাষক বা বিভাগীয় প্রধান বাদে। তাহলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন কারা? তারা ইউটিউব থেকে শিখছে। আমি আমার শিক্ষাজীবনের পাঁচ-দশ বছর আগে বা পরে কখনো শুনিনি যে মেডিকেল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এইএচএসসি বা এসএসসির শিক্ষার্থীদের মতো প্রাইভেট টিউশনিতে যেতে হচ্ছে; এটা আমি কখনো শুনিনি—যা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পরিণতি দেখিয়ে দিচ্ছে। এ নিয়ে কথা বলে আমি কাউকে বিন্দুমাত্র কষ্ট দিতে চাই না বা আহত করতে চাই না; তবুও আমাদের মনে হয় এখন আবারও ভেবে দেখার সময় এসেছে যে, এতো মেডিকেল কলেজের আসলে দরকার আছে কি-না; অথবা ভালো কিছু মেডিকেল কলেজকে খুব ভালো পর্যায়ে নিয়ে সেখানে আসন বাড়িয়ে দেয়া যায়।
আমরা যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়তাম তখন সেখানে ১৫০ জন শিক্ষার্থী এখন ২৫০ এর মতো। সেখানে আপনি আসন বাড়িয়ে ৭০০ করেন; ভালো ভালো শিক্ষক নিয়ে আসেন। বাকী ১৫টি মেডিকেল কলেজ বন্ধ করে দেয়া যেতে পারে; কারই তো লাভ হচ্ছে না। এছাড়াও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর অনেকের সাথেই আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল, আমি বিদেশে থাকার সময় আমাকে অনেকেই বলেছেন, এখানে এসে পড়ানোর জন্য। আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, অধিকাংশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজের উদ্দেশ্য ছিল একটি হাসপাতাল করবে, রোগী দেখবে। কিন্তু, যখন দেখল যে, তারা খুব বেশি লাভ করতে পারছে না, তখন লাভ আনার জন্য মেডিকেল কলেজসহ খোলা হয়। মেডিকেল কলেজের পয়সা দেয় হাসপাতাল চলে; তাহলে, উদ্দেশ্য কিন্তু শিক্ষার্থী পড়ানো না, এটি অনেকটাই ব্যবসায়িক উদ্দেশে এখানে মেডিকেল কলেজ পরিচালনা করা হয়।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখন দেশের স্বাস্থ্যখাতে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলেলিজেন্স’ চালুর উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে; এ খাতে এআই কতটা প্রভাব ফেলবে বা পরিবর্তন আনবে?
ডা. আশফাক এম খান: দেশের স্বাস্থ্যখাতে প্রযুক্তি দুইভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনি যদি প্রযুক্তিটাকে নিয়ে আসেন সেকেন্ডারি বা টারশিয়ারি; মানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় বা ইন্সটিটিউট পর্যায়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করা। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বাংলাদেশে প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিৎ জনগণের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরির জন্য। এখন বাংলাদেশে যে ট্রেন্ড আছে, এখানে প্রচুর ইউটিউবার আছে, এখানে অনেক ইনফ্লুয়েন্সার রয়েছে—তারা আমার চাইতেও ভালো করে তথ্য প্রচার করনতে পারবে। আমি হয়তো দশজন লোককে বোঝাতে পারবো, তিনি হয়তো এক হাজার লোককে বোঝাতে পারবেন। কিন্তু, আমরা তো তাদের ব্যবহার করতে পারছি না। সাধারণ মানুষকে সচেতন করা খুবই দরকারি ছিল—যা আমরা কোভিডের সময় দেখেছি। আমার এখনো মনে হয়, সাধারণ মানুষের মাঝে যে সচেতনতা এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা তার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে না।
আমি ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্স’নিয়ে নিজেকে খুব বিশেষজ্ঞ বলবো না—তবে আমার যেহেতু উৎসাহ আছে এবং আমি এটি নিয়ে যেহেতু অনেকদিন পড়াশোনা বা কয়েকটি প্রজেক্টে কাজ করেছি, সেহেতু এআই নিয়ে আমার অভিজ্ঞতার আলোকেই বলবো। ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্স’যদি আমাদের দেশের উপযোগী করে ব্যবহার করা যায় তাহলে তার বিরাট সুফল পাওয়া যাবে। সেজন্য আমাদের উপযোগী এবং সঠিক এআই নির্ধারণ করতে হবে। যেটি আজকে বলেন বা কালকে বলেন, কোন চিকিৎসকই দিতে পারবে না। আমার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লোকজন যতোই চেষ্টা করুক তারা চিকিৎসকের কাছে যেতে পারবেন না এবং চিকিৎসকরাও চাইলে তাদের একদম কাছে যেতে পারবে না; যেটি এআই বা ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্স’ পারবে।
বিল গেটস যে মন্তব্য করেছে যে, আগামী দশ বছরে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে এআই। আমি তার সাথে শতভাগ একাত্মতা পোষণ করি। সেজন্য আমাদের সঠিক এআই নির্বাচন করতে হবে। আমাদের রোগীদের অভিযোগ ডাক্তাররা পাঁচ মিনিট সময় দেন। একই সময় দিয়ে এআই ঠিকই ডাক্তারের চেয়ে ভালো স্ক্রিনিং করতে পারবে, রোগ ধরতে পারবে। এটি একদম ভালো একজন চিকিৎসকের চেয়ে ভালো না হলেও সাধারণ একজন চিৎিসকের মানের চেয়েও খারাপ হবে না—তাহলে আমি এআই নিয়ে কাজ করতে অসুবিধা কি। এখন আমাদের পুরোনো চিন্তা থেকে বের হওয়ার সময় এসেছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দেশের উচ্চশিক্ষায় বা চিকিৎসা শিক্ষায় ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়?
ডা. আশফাক এম খান: এআই তো এখনই কেবল আসল, এটি আরও পরের ধাপ। এখাতে এখন ডিজিটাল এডুকেশন আনা যেতে পারে। আমাদের দেশে কোভিডের সময় যেটা হয়েছে; কন্টেন্ট তৈরি করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে শিশুদের জন্য। এখন যদি আপনাকে দেশে ১০৩টি মেডিকেল কলেজই রাখতে হয়, তাহলে তাদের জন্য একটি কেন্দ্রীয় পাঠদান পদ্ধতি চালু করা হোক। তাদের জন্য ভালো কনন্টেন্ট বা ক্লাস দেওয়া হোক, তারা শুনুক; সমস্যা তো নাই—সবাই তো আমাদের দেশেরই শিক্ষার্থী। এরপর বিদেশে এখন এআই দিয়ে শেখানো হয়, যেমন: আমরা একটা অপারেশনের সময় শিক্ষক অপারেশন করতো বাকীরা চারপাশে হুমড়ি খেয়ে বা টুলের উপর দাঁড়িয়ে দেখতাম।
এরপর আসলো শিক্ষকের মাথায় ক্যামেরা সংযুক্ত রেখে তা স্ক্রিনে প্রচার করা হতো—দুর্ভাগ্যবশত এটি বাংলাদেশে আসেনি; এটি প্রায় বিশ বছর আগের পুরোনো গল্প। ফলে, শিক্ষক কী অপারেশন করছেন শিক্ষার্থীরা তা জানেন না। এখন ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্স’র ফলে আমি অপারেশন বা এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখতে পারি যে সেটি কেমন। আমাদের দেশের স্বাস্থ্যখাতে আন্তর্জাতিক সংযুক্তি খুবই কম। যেমন, আমি অক্সফোর্ডের একজন সার্জনের অপারেশন পদ্ধতি দেশের শিক্ষার্থীদের দেখাতে চাই—সেটি এখন আপনি করতে পারেন। এতে তো শুধু শিক্ষার্থীরাই নয় দেশের চিকিৎসক বা সার্জনরাও উপকৃত হবেন। আপনাকে মনে রাখতে হবে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বিদেশী কনফারেন্সে পাঠিয়ে তো কোন লাভ হয় না; যদি লাভ বা কোন অর্জন করতে চান তাহলে ডিজিটালি লার্নিংটাকে বাড়াতে হবে। আমি গত তিনবছর ধরে কোনে কনফারেন্সে সরাসরি যাচ্ছি না, আমার বাড়ির পাশে তবুও আমি যাচ্ছি না; তাতে আমার জ্ঞানের বিন্দুমাত্র কোনো কমতি হয়েছে বলে আমার মনে হয়নি।
একই সুবিধা তো চাইলেই আমার ঢাকার বন্ধুরাও পেতে পারতো। তাই, পরিবর্তনগুলো আপনাকে মানতে হবে। এখন এআই আছে, রোবোটিক সার্জারি চলে আসছে—সবকিছু আপনাকে গ্রহণ করতে হবে এবং সেজন্য আপনার নতুন জিনিসগুলোকে নেওয়ার বা গ্রহণ করার উদার মানসিকতা থাকতে হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দেশের বাইরে চিকিৎসা শিক্ষা এবং দেশের চিকিৎসা শিক্ষায় ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্স’কীভাবে কাজ করছে বা আমাদের করনীয়গুলো কী?
ডা. আশফাক এম খান: আমি যখন বিভিন্ন সময়ে দেশে আসি বা দেশের মানুষের সাথে কথা বলি তখন তাদের কথা অনুযায়ী বুঝতে পারি যে, দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর থেকে সাধারণ মানুষের আস্থা কমে গেছে। এটা মানতেই হবে, আমি জ্ঞান দেবার জন্য বলছি না। আমি তো এদেশেরই ছেলে বা এখানকার চিকিৎসকরা তো আমারই বন্ধু, তারা তো আমার থেকেও বেশি মেধাবী এবং এটা সত্য; আমি নিজেও জানি। তখন তারা চাইলেও পারছে না স্বাস্থ্যখাতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে। যদিও আমি রাজনীতিবিদ না, তবুও আমার কাছে সবসময়ই একটা জিনিস মনে হয়েছে মানুষকে খুশি করার একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে স্বাস্থ্য আর একটি হচ্ছে শিক্ষা। এর কারণ হচ্ছে, তার যখন স্বাস্থ্য ভালো থাকবে বা তার ছেলে মেয়েরা যখন শিক্ষা পাবে, তখন তার আর খুব বেশি অভিযোগ থাকবে না। হ্যাঁ, দ্রব্যমূল্য বা এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো তাকে ভোগাবে; কিন্তু তারা তা মেনে নিবে বা নিতে প্রস্তুত থাকবে। কিন্তু, মানুষের হাতে পয়সা আছে, তার যদি স্বাস্থ্য ভালো নেই; তখন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ৫ হাজার এবং এমআরআই করতে গিয়ে ১০ হাজার খরচ করে তারা ঠিকই গালি দেবে সরকার বা সংশ্লিষ্টদের।
আমি এটা খুব ভালোভাবেই অনুভব করি যে, আমাদের স্বাস্থ্যখাতে বেশকিছু ভালো উন্নতি হয়েছে, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলসহ বিভিন্ন সূচকে আমরা উন্নতি করেছি ঠিকই কিন্তু, ঐ অর্থে আমরা মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারিনি। এটা যদি জোর করে বলা হয় তাহলে তা সত্য হবে না—দিনে দিনে এটি আরও বেড়েই চলেছে। এখন আমাদের দেশের চিকিৎসকদের এক ভিন্ন জবাবদিহিতা করতে হয়-তা হচ্ছে আপনি পারেননি, কিন্তু ঐ দেশের ডাক্তাররা তো ঠিকই পেরেছে—এটা একটি অদ্ভুতদ জবাবদিহিতা; এটি আপনি পৃথিবীর কোথাও পাবেন না বাংলাদেশ ছাড়া। এ বিষয়টি নিয়ে আমার চিকিৎসক বন্ধুদের এখানে ভুগতে হয়—এটি একটি অদ্ভুদ বিষয়; আমি এতো বছর বিদেশে কাজ করছি বা বেসরকারি খাতে কাজ করছি কখনো আমাকে এ বিষয়টি নিয়ে শুনতে হয়নি। এখন দেশের স্বাস্থ্যখাতে আস্থা ফিরিয়ে আনার একটাই সুযোগ আছে, তা হলো মেডিকেল এডুকেশন এবং পেশেন্ট কেয়ার্ড হেলথ-কেয়ার চারু করতে হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত ও প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ চ্যালেঞ্জ আমাদের কতটুকু আশাবাদী করছে?
ডা. আশফাক এম খান: এখানে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নতুন কোন কিছু করার ক্ষেত্রে সবাই তা সহজে নিতে চায় না—তবুও আমি দেশের স্বাস্থ্যখাতে এআই নিয়ে আশাবাদী; এখানকার মানুষদের জিদ আছে এবং তারা কোনো কিছু একবার করতে চাইলে করে ফেলে, এআইও এদেশে বাস্তবায়িত হবে বলে আমি যথেষ্ট আশাবাদী।