১৯ এপ্রিল ২০২৩, ১৭:৫৫

কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ঈদ ভাবনা

  © টিডিসি ফটো

রমজানে একমাস সিয়াম সাধনার পর আসে ঈদ-উল-ফিতর। আর ঈদ-উল-ফিতরে অন্য সবার থেকে শিক্ষার্থীদের জীবনে ঈদ একটু ভিন্নরকম আমেজ। সারা বছর ক্লাস, পরীক্ষা, লাইব্রেরি আর পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকা শিক্ষার্থীদের ঈদ উৎসব উদযাপন একটু বিচিত্র ধরনের। ঈদের আনন্দকে আরো বাড়িয়ে নিতে তারা বিভিন্ন পরিকল্পনা করেন। ভাবনার ছকে আঁকেন আনন্দ উপভোগের নানা দিক। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সেই ভাবনা ও অনুভূতি তুলে ধরেছেন তুলে ধরেছেন রাজশাহী কলেজ প্রতিনিধি এস আলী দূর্জয়-

ঈদের খুশি হোক সার্বজনীন

ঈদ বলতেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের কিচিরমিচির ধ্বনি, আপনজনের হাসিমাখা মুখ, মিষ্টান্ন থেকে শুরু করে হরেক রকম খাবারের কারসাজি।  এককথায়,  ঈদ হলো আনন্দকে ভাগাভাগি করার একটি বড় অবকাশের আটপ্রহর। বস্তুত দূর–দূরান্তে নিজেদের কর্মস্থল ও অধ্যয়নরত প্রতিষ্ঠান থেকে সবাই ছুটে আসে ঈদের এই আনন্দঘন মুহূর্তকে পরিবার পরিজনের সাথে উপভোগ করতে। আর এই ঈদের আমেজকে যেনো সর্বস্তরের মানুষ উপভোগ করতে পারে তা অবশ্যই প্রতিটি মানবহৃদয়ে উপলব্ধি করতে হবে। এই উপলব্ধিকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে, প্রতিটি সচ্ছল ও উচ্চবিত্ত পরিবারের অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব হলো এই ঈদে ভুক্তভোগী,  অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, তাদের বস্ত্র বা বিবিধ প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর মাধ্যমে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়া। যদি পথশিশু ও সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে আমরা নিজেরাই বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে বিলাসবহুল ঈদ উদযাপন করি তাহলে আমি মনে করি, একজন মানুষ হিসেবে আমরা ব্যর্থ। উপর্যুক্ত বাক্যে "বঞ্চিত" শব্দটি ব্যবহার করার কারণ হলো একজন মানুষকে অবশ্যই তার নিঃস্ব অবস্থায় অপরজনের সাহায্য করা উচিত। ঈদের উল্লাস সবার মাঝে বিচরণ করানো এটা প্রতিটি মানুষের নৈতিক দায়িত্ব এবং দরিদ্রদের প্রাপ্য অধিকার। আর ঈদ মানে শুধু নিজে পরিবার নিয়ে আনন্দে মেতে উঠা না বরং পাড়াপ্রতিবেশির খোঁজ খবর নিয়ে সবার সাথে আনন্দটাকে ভাগাভাগি করে নেওয়ার মধ্যেই ঈদের স্বার্থকতা।

হুমাইরা খানম জেরীন
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ

আপনজনের সাথে হোক ইদ আনন্দ

ঈদুল ফিতর ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মিয় উৎসবের একটি। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সিয়াম সাধনার পরে পরিবার, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে এইদিনটিকে ধর্মিও কর্তব্য পালনসহ খুব আনন্দের সাথে উদযাপন করে থাকে। সমস্ত ব্যস্ততা ও কষ্টের দিন গুলোকে ভুলিয়ে দিতে যেন ঈদের দিন আসে। এক মাস সিয়াম সাধনার পরে যখন ঈদুল ফিতর আসে, তা যেন আনন্দের বন্যা নিয়ে আসে। এই আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে সবাই সকল কাজ ফেলে ছুটে আসা নিজ বাড়িতে। সমস্ত আনন্দকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি নিতে ভালো লাগে। একটা ইচ্ছে থাকে ভালো সময় কাটাবো পরিবারের সঙ্গে। আমার এবারের ঈদের দিনের আনন্দ একটু বেশি, কারণ আমার নিজের গুছানো টাকায় এই বারে বাবা ও ভাই এর জন্য পাঞ্জাবি কিনেছি। সবাই একই রকমের পোশাকে ঈদ করবো। এক সঙ্গে নামাজ আদায় করবো এবার ঈদের আনন্দ আমার কাছে একটু বেশি। দিনশেষে সবার জীবনে ঈদ খুশী আনন্দ বয়ে নিয়ে আসুক, আমাদের এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে পরোপকারী হওয়ার শিক্ষা দিক সেই কামনাই থাকবে।

সুজন হোসেন
ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী কলেজ

ঈদ উৎসব যেনো সাম্যর হয়

পবিত্র মাহে রমজানের সংযমের পর আমরা পাই কাঙ্খিত ঈদ উৎসব। ঈদ মানে কেবল উল্লাসে গা ভাসানো নয়। সাম্যর এই উৎসবে আমরা বৈষম্য না করি। ঈদ সকলের জন্য আনন্দের হয় না। যেমন এ বছরে রমজানে অর্থাৎ ঈদের আগেই ঢাকার বঙ্গবাজার সহ বিভিন্ন স্থানে আমরা দেখেছি অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা ও  বিপর্যয়। যার ফলে অনেকেই নিঃস্ব এবং তাদের পরিবার পরিজন সহ  আগত ঈদ যেনো বিষাদে পরিণত হয়েছে । তাই জাতির এ ক্রান্তি লগ্নে  মুসলিম ভাতৃত্বের সমতা বজায় রাখতে  সকলের প্রতি আমরা স্ব স্ব অবস্থান অনুযায়ী  সহানুভূতিশীল  হব।  শ্রেণী পেশা, ধনী- গরীব, দুঃখী, নির্বিশেষে সকলকে কাছে টেনে নেবো। পরিবার, পরিজন, শুভাকাঙ্খী, সকলের খোঁজ খবর নেবো।বর্তমানে আমাদের সমাজে এমন বহু পরিবার ও মানুষজন  আমাদের আশেপাশে  আছে যারা মুখ ফুটে সম্মানের ভয়ে চক্ষুলজ্জায় সংকোচে, অভাবের  কথা বলতে পারেন না নিজ নৈতিকতা  ও সহানুভূতিশীল অবস্থান  থেকে তাদেরকে সাহায্য করবো।   তা হতে পারে কারো ঈদ বাজার, কারো নতুন ঈদ পোশাক, এই ছোট্ট ছোট্ট ভালো কাজগুলোই অপর মুসলিম ভাইয়ের ঠোঁটের আনন্দের কারণ হবে এবং এই কাজগুলোই ঈদ আনন্দের তৃপ্তি বাড়িয়ে দিবে। তাছাড়াও পরিতৃপ্ত হবে অন্তরআত্না সহীহভাবে যাকাতুল ফিতর আদায়ের মাধ্যমে। ফরজ এ রুকন পালনে আমরা যেনো গাফেল না হই। বাঁকা চাঁদের ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে পড়বে সাম্যর মাধ্যমে। স্ব স্ব অবস্থা থেকে সাধ্য অনুযায়ী প্রতিবেশী, পরিজন সকলের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো। ঈর্ষা বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে, আমরাও  সমস্বরে গেয়ে উঠবো,
"তোরে মারল ছুঁড়ে, জীবন জুড়ে ইট-পাথর যারা
সেই পাথর দিয়ে তোলরে গড়ে প্রেমের-ই মসজিদ
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুঁশির ঈদ
আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমাণী তাগিদ"

মোছাঃ জেরিন ফেরদৌস,
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ

সৌহার্দ্য ও সমতায় হোক আনন্দ

বছর ঘুরে আবারও একটি ঈদুল ফিতরের সুবাস মাখতে যাচ্ছি আমরা। দীর্ঘ  এক মাস আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সিয়াম সাধনা করার পর যখন মুসল্লি ঈদের দিন গোসল করে পাটভাঙা জামাকাপড় পরে গায়ে আতর মেখে দুটো ফিরনী সেমাই মুখে দিয়ে নামাজের  উদ্দেশ্য যাত্রা করে তখন মুসল্লির তৃপ্তিমাখা ও স্নিগ্ধ অভিব্যক্তি দেখলে আসলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। ইসলামে ফরজ হচ্ছে ঈদের নামাজের আগে গরীব দুঃখীদের তাদের হক ফেতরা ও যাকাত বুঝিয়ে দেওয়া। ফলে কোন মুসলিমের  ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হওয়ার সুযোগ থাকে না।  ফলে ধনী গরীব  প্রত্যেকের ঘর চাঁদরাতের চাঁদের আলোর মতো ঈদ আনন্দে ঝলমল করে। তবে আমাদের দেশে একটি অতি কমন দৃশ্য দেখা যায় যে বিভিন্ন সংস্থা ও সরকারের প্রতিনিধিরা গরীব দুঃখীদের জন্য বরাদ্দকৃত যাকাত ফেতরার টাকা গাপিশ করে গরীব দুঃখীদের তাদের হক থেকে বঞ্চিত করে যা খুবই দুঃসহ চিত্র। আসুন আমার এসব দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সচেতন হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলি যেন এরা গরীবের হক না মারতে পারে আর ধনী গরীব নির্বিশেষে সবাই ঈদের আনন্দ ফজিলত উপভোগের মাধ্যমে সমাজে সৌহার্দ্য ও সমতা বজায় রাখতে পারে।

জাবিন তাসনীম খান
ইংরেজি বিভাগ, রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ

বাঁকা চাঁদের রঙ্গিন ঈদ

ঈদ নিয়ে ছোট বেলা থেকেই আমার মধ্যে এক অন্য ধরনের আনন্দ বিরাজ করে। নীল আকাশে ইদের বাঁকা চাঁদ হাসি দেখার অপেক্ষা করা।  ঈদের আগে কেনাকাটা করা,আত্মীয়দের বাড়ি বেড়াতে যাওয়া,বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো, নানান রকমের খাবার খাওয়া সব কিছু অভাব পূরণ হয়। ঈদের দিনে পাড়ার আসহায় ছেলেটাও একটি নতুন পাঞ্জাবী পড়ে সকালের সেমাই খাওয়ার  মাধ্যমে ঈদের পূরো আনন্দ গ্রহন করে। আমার কাছে ঈদের সবচেয়ে  আনন্দ মূহুর্তটা এখানে। আর ঈদের নামাজ শেষে সকল শ্রেনী বৈষম্য দূরে ঠেলে প্রতিটি মুসলমানের কোলাকুলি পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর মহূর্ত।

রায়হান প্রাং
ব্যবস্থাপনা বিভাগ, রাজশাহী কলেজ

ঈদের আনন্দ হোক সবার

ঈদ মানে হলো আনন্দ, খুশির দিন। এক মাস সিয়াম সাধন এর পর মুসলমানের আনন্দ, খুশির দিন নিয়ে আসে ঈদুল ফিতর। সারা বছরে মুসলমানরা অপেক্ষায় থাকে তাদের প্রাণের উৎসব ঈদুল ফিতর আর ঈদুল-আযহার। এক মাস সিয়াম সাধনার পর যখন ঈদুল ফিতর আসে তা যেন আনন্দের বন্যা নিয়ে আসে । কিন্তু  ইতোমধ্যে বঙ্গ বাজারে ঘটে যাওয়া অগ্নিকান্ডে ঈদের আনন্দ যেন  আমার কাছে  বর্ণহীন ফ্যাকাসে মনে হচ্ছে,  আমি আমার সাধ্য অনুযায়ি ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতা করতে চেষ্টা করেছি এবং সবার উচিত ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়িয়ে  ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার । আমার কাছে ঈদ হলো আপনজনের ঘরে ফেরার গল্প, সকলের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করার গল্প ।  সমস্ত ব্যস্ততা, ক্লান্তি আর বাকি দিনগুলোর কষ্টের কথা ভুলিয়ে দিতেই যেন উদয় হয় ঈদের দিন । ঈদের আগের রাতে বাড়িতে মেয়েদের হাত মেহেদী দিয়ে রাঙানোর ধুম পরে যায়। সকাল বেলা নতুন পাঞ্জাবি পরে পরিবারের সাথে ঈদগাহে গিয়ে নামাজ পড়তে যাওয়ার আনন্দ অন্য রকম। নামাজ পরা শেষে পরিবারের সবার কাছ থেকে সালামি নেয়া টা অন্যরকম আনন্দের। আর এই আনন্দের মুহুর্তগুলোর মতো যেন আমাদের বাকি দিনগুলোও আনন্দের হয়ে ওঠে এই প্রত্যাশা থাকবে।

সোনিয়া আক্তার
বাংলা বিভাগ, রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ