বাজারে পণ্যের ঘাটতি নেই, অতিরিক্ত দাম নিলে অভিযোগ করুন
পবিত্র রমজান এবং আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম, কালোবাজারি, মজুদ, দামের অসঙ্গতি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার তদারকি, অভিযান পরিচালনাসহ নানান কার্যক্রম পরিচালনা করছে সরকারের জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজান ঘিরে যেন অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা নিতে না পারেন সেজন্য কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকারি এই সংস্থাটি। তারপরও হঠাৎ করেই নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার ৷ সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরছেন— রাকিবুল হাসান তামিম
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কোন বিষয়টি সামনে রেখে তদারকি করা হচ্ছে?
মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার: আমরা পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে কেউ যেন অতিরিক্ত দাম রাখতে না পারে সে বিষয়টি তদারকি করছি। পাইকারি ও খুচরা বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা দেখেছি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রমজান কেন্দ্রিক যে সকল পণ্য রয়েছে সেগুলোর দাম কমেছে এবং বাজারে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু মাছ আর মুরগির ক্ষেত্রে। তবে কোনো ক্ষেত্রেই খুচরা ব্যবসায়ীরা সাধারণ ভোক্তাদের কাছে যেন পাইকারি দাম থেকে শতকরা ১০ শতাংশের বেশি লাভ না করেন সে বিষয়টি মার্কেট কমিটির মাধ্যমে নিশ্চিত করা হচ্ছে। অসঙ্গতি পেলেই তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখন পর্যন্ত কি ধরণের অসঙ্গতি আপনারা দেখতে পেয়েছেন?
মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার: আমরা দেখেছি ঢাকা মহানগরীর ভেতরে ব্যবসায়ীরা হুট করেই রোজার আগে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে ফেলেন বা দাম বাড়িয়ে ফেলার প্রবণতা অনেকের মধ্যেই রয়েছে। এধরণের কাজগুলো যেন কেউ করতে না পারে সেজন্য আমাদের টিমগুলো পাইকারি ও খুচরা বাজারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকবে। যাতে সেখানে কেউ অনিয়ম করতে না পারে। খুচরা বাজারে তেল, চিনি সরকারি মূল্যে বিক্রি করতে হবে। কোথাও যদি ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত টাকা নেয় তাহলে ভোক্তাদের অনুরোধ করবো যেন তাঁরা অভিযোগ জানান। কেননা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরকার নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আপনারা অবশ্যই (ভোক্তারা) অভিযোগ করবেন। সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কারও বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। আইনের ব্যত্যয় হলে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্ট মার্কেট কমিটির কোন দায়বদ্ধতা রয়েছে কিনা?
মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার: যেখানেই ভোক্তার অধিকার সেখানেই সম্পূর্ণ দায়িত্ব ব্যবসায়ী এবং বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দের ওপর বর্তায়। সেজন্য আমাদের এবারের বাজার মনিটরিং এর মডেল পরিবর্তন করা হয়েছে। এবার বাজার কমিটির সাথের সংশিষ্টদেরও আমরা দায়বদ্ধতার মধ্যে আনার চেষ্টা করছি। আপনারা জানেন প্রত্যেকটি বাজার কমিটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অঙ্গীভূত সংস্থা। প্রত্যেক দোকানে দোকানে ঘুরে বাজার তদারকি করার সুযোগ সরকারের নেই। সেখানে সংশ্লিষ্ট বাজার কমিটি, সমিতি বা সুপারশপ ও শপিং মল গুলোরও কিছু দায়িত্ব আছে। যেখানেই ভোক্তার অধিকার সেখানেই ব্যবসায়ীদের ওপর অনেক দায়িত্ব রয়েছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাজারে কোন পণ্যের ঘাটতি পেয়েছেন কি?
মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার: ভোক্তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। বাজারে সব পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক ও প্রচুর। কোন পণ্যের ঘাটতি নেই। রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি (যেমন ছোলা, ডাল) সেগুলোর দামও কিছুটা কমেছে। পাশাপাশি আগামী কয়েকদিনে বাজার আরও সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে বলে আমরা মনে করছি। আবার অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ভোক্তাদের অতিরিক্ত পণ্য কেনার বা মজুদ করে রাখার প্রবণতাও দাম বাড়ার পেছনে দায়ী। একদিনে অনেক বেশী কিনতে হবে কিন্তু এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমরা ভোক্তাদের বারবার অনুরোধ করছি। একমাসের পণ্য একদিনে কেনার কোন প্রয়োজন নেই। এজন্য আমরা ভোক্তাদের সহনশীল আচরণ করার জন্য অনুরোধ করছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সারাদেশের মাঠ প্রশাসনে আপনাদেতর এই কার্যক্রম কিভাবে পরিচালনা করছেন?
মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যেন, মজুদদারি যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে যেন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এবং আমরাও সেই নির্দেশনা সামনে রেখেই সারাদেশের জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, বিএসটিআই, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সকল সংস্থার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এরপরও পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্রতা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আমরা ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করবো যেন ,তাঁরা পণ্যে ছাড় দিয়ে একটা আপনার একটা নজির স্থাপন করতে পারে। তবে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কেউ যদি ব্যবসা পরিচালনা করেন আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ওই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিব। এভাবে দিনের পর দিন অনিয়ম চলতে পারেনা।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইফতার বাজারে ভেজাল ও পঁচাবাসী খাবার প্রতিরোধে কি ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে?
মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার: আমরা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতাদের সাথে নিয়ে বৈঠক করেছি। সেখানে আমরা তাদেরকে জানিয়েছি যে ইফতার সামগ্রীতে যদি কারো কাছে ভেজাল পাওয়া যায় সে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে। একেবারে ঈদ পর্যন্ত। আরেকটি বিষয় হল মেয়াদোত্তীর্ণ কোন প্রোডাক্ট দিয়ে কোন পণ্য যেন তৈরি করা না হয় সে বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে। আর সকল দোকান মালিক বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বলবো মূল্য তালিকা টানিয়ে রাখার বিষয়টি মানতে হবে। কেননা এখানে আইনগতভাবে তাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর পাশাপাশি পাকা রশিদ যাকে মুদ্রিত ভাউচার বলা হয় সেটিও রাখতে হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যে সকল পণ্যের দাম রোজার প্রথমে কিছুটা কমেছে সেগুলো ঈদকে সামনে রেখে আবার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা?
মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার: আমরা মাঠে কাজ করে এবং মন্ত্রণালয়ের তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছি যে,দেশে এবার প্রত্যেকটা পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কোন ঘাটতি নেই। পাশাপাশি সাপ্লাই চেইন যেন ঠিক থাকে সেটিও মনিটরিং করা হচ্ছে। কেননা অনেক সময় সাপ্লাই চেইনে কারসাজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফায়দা লুটে নেন। সে বিষয়টি আমরা একেবারেই নিবিড় তদারকি করছি। সবাইকে একটি বিষয় জানাতে চাচ্ছি জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ৫৬ টিম একটানা ঈদের আগের দিন পর্যন্ত বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। যাতে কেউ অনৈতিকভাবে ফায়দা লুটতে না পারে। আমাদের একটি কথা হলো আমরা যেন কেউ বাজারে হুমড়ি খেয়ে না পরি। তাহলে সংকট তৈরি হবে না সাপ্লাই চেইন এর এই পর্যায়ে তা যদি ঠিক থাকে তাহলে বাজার মূল্যবৃদ্ধি কোন কারণ নেই। এই হল আমাদের সার্বিক বাজারের পরিস্থিতি। সব সময় আমরা সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করছি যে কোন প্রয়োজনে ভোক্তারা আমাদের পাশে পাবেন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও অনেক ধন্যবাদ।