নারীরা ভয় পাবে কেন?
ছেলে-মেয়ে সবাইকে সমাজের যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে-বলে মনে করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন। সম্প্রতি তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ঘটে যাওয়া ছাত্রলীগের বর্বরোচিত অন্যায়ের ঘটনায় ন্যায়বিচার পেতে তিনি প্রতিবাদ করেছেন আপোষহীনভাবে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তার আহবান যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার, প্রতিরোধ এবং প্রতিবাদ করার। বিশেষ করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে নারীদের আরও বেশি সোচ্চার হতে হবে বলে মনে করেন ফুলপরী।
আজ বুধবার (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সমাজে নারীদের অধিকার ও চলমান প্রেক্ষাপট নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পেছনে না যাওয়ার পাশাপাশি তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করে নারী হিসেবে পিছিয়ে না যাওয়ার।
ফুলপরী বলেন, নারীদের অধিকার, অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ও সামনের দিকে অগ্রসর হওয়াই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রত্যয়। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেই হবে; নারীরা কেন ভয় পাবে? ভয় পেয়ে পেয়ে নারীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
নারীরা যদি ভয় পায় আর প্রতিবাদ না করে, তাহলে সারা জীবন হেয় প্রতিপন্ন হতে হবে বলে মনে করেন ফুলপরী খাতুন। তিনি বলেন, আমি যদি কথা না বলি, আমি যদি চুপ করে থাকতাম তাহলে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পাঁচ বছরে আমাকে আবারও অন্যায়ের শিকার হতে হওয়ার ঘটনা ঘটতো। আমি পুরোপুরি নিরাপদ নই, তবে আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। এটাতেই যদি মৃত্যু হয় তাহলে আমার কোন সমস্যা নাই। ছেলে হোক, মেয়ে হোক অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে-এমন প্রত্যাশার কথা দৃঢ়কন্ঠে ব্যক্ত করেন এই শিক্ষার্থী।
নারী সমাজের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত ও কবি সুফিয়া কামালের কথা উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, তারা সমাজ সংস্কারক, নারী সমাজকে আলো দেখিয়েছেন। মেয়েদের শিক্ষার বিষয়ে তাদের অসামান্য ভূমিকা রেখে নারী সমাজকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। সামনে এগিয়ে যেতে তারা অনুপ্রেরণা যোগায়, সাহস দেয় প্রতিবাদের-প্রতিরোধের।
প্রসঙ্গত, র্যাগিং এর নামে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ইবির দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে শাখা ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের হাতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থী ফুলপরী। এরপরে ঘটনাটি জানাজানি হলে নিন্দার ঝড় ওঠে দেশজুড়ে। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ঘটনায় চুপ থাকলেও পরে তারা এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করা হয়েছিল উচ্চ আদালতের নির্দেশে। তাতে সংশ্লিষ্ট ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতি পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন শাখা ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীরা।