শুধু ঢাবি নয়, পুরো ঢাকাবাসীকে সেবা দেবে ‘প্রয়োজনে আমরা’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলগুলোর আশে পাশে নেই কোন ঔষধের দোকান। তাই হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় ঔষধ ক্রয়ে বেশ বেগ পেতে হয়। বেশিরভাগ সময় তাদের ছুটতে হয় নীলক্ষেত কিংবা শাহবাগে। এসব শিক্ষার্থীর কষ্ট লাঘবে ক্যাম্পাস এলাকায় ২৪/৭ জরুরি ঔষধ পৌঁছে দিচ্ছে ই-মেডিসিন সেবা ‘প্রয়োজনে আমরা’। এটার উদ্যোক্তা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী। ফেসবুকে বা হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ (ক্ষুদে বার্তা) পাঠালেই মুহূর্তে হলে পৌঁছে যাচ্ছে প্রয়োজনীয় ওষুধ।
এই ই-মেডিসিন সেবার প্রতিষ্ঠাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠাতা মোঃ মাহিনুর ইসলাম। সাক্ষাৎকারে এটি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন, যাত্রা, চলমান কার্যক্রম এবং ভবিৎষত পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জোবায়ের হোসাইন সাকিব—
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ‘প্রয়োজনে আমরা’ এর পরিচয় সংক্ষেপে তুলে ধরুন?
মোঃ মাহিনুর ইসলাম: ‘প্রয়োজনে আমরা’ হচ্ছে ই-কমার্স ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। এটি একটা নতুন উদ্যোগ। আমরা অনলাইন মেডিসিন শপ ও ডেলিভারি সেবা দিয়ে থাকি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ‘প্রয়োজনে আমরা’ এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী?
মোঃ মাহিনুর ইসলাম: এটার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রথমত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর সকল ছাত্র-ছাত্রীকে অনলাইনে মেডিসিন সেবা দেওয়া। আমরা ছোট্ট করে এইটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করেছি। ভবিষ্যতে এর প্রসার হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের যে ভোগান্তি পোহাতে হয় মেডিসিন পেতে গেলে সেটার সমস্যার সমাধান নিয়ে কাজ করছি আমরা। একটা স্টুডেন্ট যে টাকা দিয়ে শাহবাগ যাবে আসবে, সেই টাকার অর্ধেক টাকা দিয়ে আমরা আমাদের সেবা দিয়ে থাকি। দেখা যায় যে শাহবাগ যাওয়া আসা-যাওয়াতে রিকশা ভাড়া ৪০ টাকা লেগে যায় সেই ক্ষেত্রে সেটা আর লাগবে না। সাথে থাকছে স্বস্তি। আমরা স্টুডেন্ট ক্লাস, এক্সাম, ল্যাব, টিউশনসহ বিভিন্ন কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকি, পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানিত শিক্ষকদের আমার সেবা দিয়ে থাকি।
আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের দৈন্দিন জীবনকে আরও বেশি সহজতর করে তোলা। রিলাক্স দেয়া সবাইকে। অসুস্থতায় যেন কাউকে এক্সট্রা প্রেসার নিতে না হয়, দুশ্চিন্তা না করতে হয় মেডিসিন নিয়ে। নাম মাত্র ডেলিভারি চার্জের মাধ্যমে আমরা এইটা দিয়ে থাকি। ভবিষ্যতে পুরো ঢাকা শহর নিয়ে আমাদের কাজ করা লক্ষ্য আছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ‘প্রয়োজনে আমরা’ যাত্রা শুরু হয় কীভাবে?
মোঃ মাহিনুর ইসলাম: এটা প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন আমার মাথায় প্রথম আসে। আমি নিজে খুব চেষ্টা করতাম পড়াশোনার পাশাপাশি নতুন ভাবে কিছু একটা করার। তার জন্য সবার সাথে কথা বলতাম,বুদ্ধি নিতাম। রাস্তায় হাটতাম আর আর চারদিকে দেখতাম যে আমার একদিন কিছু একটা হবে। সাইনবোর্ড থাকবে রাস্তার পাশে একদিন। ক্রিয়েটিভ বই পড়তাম, ভিডিও দেখতাম, এভাবেই এই চিন্তা আসে। ভার্সিটিতে ২য় বর্ষে থাকা অবস্থায় আমি চেষ্টা করেছিলাম শুরু করার কিন্তু পারিনি। আমাকে যারা হেল্প করবে বলেছিল তাদের থেকে আমি আশানুরুপ সাহায্য পাই নাই। তাই এর শুরু করতে পারি নাই। সবাই অনুৎসাহিত করার জন্য আমি থেমে গেছিলাম। পরে আমি তাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন করে ছোট ভাইবোন, বন্ধুদের নিয়ে আবার শুরু করি। উদ্যোগটা আমার নিজের। আমি আমার ছোটভাই, বোনদের বলেছিলাম আমাকে যেন সাহায্যে করে, এবং তারা আমাকে সাহায্য করে।
আমার শুরুতে দুইটা স্টেপ ছিল। একটা ছিল করোনাভাইরাসের আগে। আর দ্বিতীয়টা ছিল করোনাভাইরাসের পরে। প্রথম যখন আমি শুরু করি, আমার সাথে যারা ছিল সবাই আসতে আসতে কেটে পড়ে। তারা কাজের ইন্সপাইরেশন হারিয়ে ফেলে। কারণ, ডেলিভেরি আসে না। আমিও থেমে যাই। আমার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। আরও ছিল টাকা-পয়সার সমস্যা।
তারপর করোনাভাইরাসের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যায়। এই বন্ধে আমি বিভিন্ন কর্পোরেট সেক্টরে কাজ করার সুযোগ পাই। এই কাজ করে আমার অভিজ্ঞতা হয়। Public Dealing, Customer approach, How to manage customers,Public speaking, Product presentation, Streets marketing, How To manage a team, এই অভিজ্ঞতাগুলো নিয়ে আমি আবারো নতুন করে শুরু করি এবং এর সাথে আমার হাতে কিছু টাকা আসে। আমি পুনরায় নতুন করে ক্রিয়েটিভ ছেলে মেয়ে খুঁজতে থাকি। এইভাবে আমার যাত্রা আবার শুরু হয়। আমার প্রথম শুরুটা ছিল ৬ মে ২০২০ সাল এবং দ্বিতীয় শুরু ছিল ২১ মার্চ ২০২১ সাল।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনারা ডেলিভারি চার্জ কীভাবে নির্ধারণ করে থাকেন?
মোঃ মাহিনুর ইসলাম: আমরা ডেলিভারি চার্জ নেই দুইভাবে। আমাদের চার্জ নির্ভর করে মেডিসিন এর মূল্যর উপর। মেডিসিন এর দাম যদি হয়ে থাকে ৫০ টাকার নিচে সেক্ষেত্রে আমরা ডেলিভারি চার্জ রাখি ১০ টাকা। আর মেডিসিন এর মূল্য যদি হয় ৫০ টাকা এর বেশি সেক্ষেত্রে আমাদের ডেলিভারি চার্জ ২০ টাকা।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার অনুপ্রেরণা কী ছিল এবং আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
মোঃ মাহিনুর ইসলাম: আমি সর্বদা স্বপ্ন দেখি নতুন কিছু করার, স্বপ্ন দেখি নিজে নতুন কিছু করার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে আমার পূর্বসূরি বড় ভাইয়াদের দেখে আমিও চেষ্টা করি এমন একটা কিছু করার। আমি বিশেষ করে আয়মান সাদিক ভাইয়াকে দেখে অনুপ্রেরণা পেতাম। আমি অনেক প্রতিষ্ঠাতা, উদ্যোক্তাদের জীবনীগ্রন্থ পড়তাম। তাদের গল্প শুনতাম এবং নিজে ভাবতাম কীভাবে আমি নিজে কিছু একটা করতে পারব। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই আয়মান সাদিকের 'টেম মিনিট স্কুল ', রাসেল ভাইয়ের ই-ভ্যালি', এন আর বি সি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতারদের মধ্যে অন্যতম একজন হচ্ছে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই।
আমি উনাদের থেকে অনুপ্রেরণা পেতাম। আমি নিজেও স্বপ্ন দেখতাম এবং আমি নিজে চেষ্টা করতাম। "Do Something Different." আমি প্রথমে ক্যাম্পাসে খাতা কলমের ডেলিভারি নিয়ে ভাবছিলাম। পরে সবার সাথে কথা বলার পর সেটা ভেস্তে যায়। কিন্তু আমার ভাবনা থেমে যায় না। আমি ভাবতে থাকি। তার পর আমার মাথায় মেডিসিন এর ডেলিভারি নিয়ে কাজ করার চিন্তা আসে এবং এইটা নিয়ে কাজ শুরু করি ভালো ফিডব্যাকও পাই এবং এখন পর্যন্ত আমার এক বছরে তিন হাজার শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে আমরা সেবা দিতে পেরেছি।
আমি মনে করি এটা একটা সেবামূলক কাজ। সেই জায়গা থেকেই আমি কাজ করে যাচ্ছি। স্মার্ট একটা সেবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের আমরা দিতে পারছি। সামনে পুরো ঢাকাবাসীকে আমরা এই সেবা দিতে চাই। আল্লাহ ভরসা।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মোঃ মাহিনুর ইসলাম: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল।