শেখা, শেখানো ও গবেষণার ইচ্ছা থেকেই শিক্ষকতায় এসেছি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন একই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সালমা আক্তার উর্মি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম হয়েছিলেন। কুবিতে শিক্ষা জীবনের নানান দিক এবং শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে সম্প্রতি তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার কথাগুলো শুনেছেন—মো. মানছুর আলম অন্তর
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পড়াশোনা শেষে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। আপনাকে অভিনন্দন। কেমন আছেন?
সালমা আক্তার উর্মি: ভালো আছি। আপনাকে ধন্যবাদ।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নৃবিজ্ঞানের সঙ্গে পথচলার শুরুটা জানতে চাই
সালমা আক্তার উর্মি: নৃবিজ্ঞান বিভাগে একপ্রকার নৃবিজ্ঞান সম্পর্কে না জেনেই আমার পথচলা শুরু। শুরুতে নানা রকম প্রশ্ন ও ভুল ধারণা নিয়ে আমাকে চলতে হয়েছে। যেমন: নৃবিজ্ঞানে কি পড়ায়? নৃবিজ্ঞান পড়লে কি হবে? আরও কত কি!
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নৃবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে তো বৈচিত্রময় ক্যারিয়ারের সুযোগ ছিল। কিন্তু শিক্ষকতাই কেন?
সালমা আক্তার উর্মি: বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে প্রথম বর্ষ থেকেই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করি। স্কুল জীবন থেকেই পড়ার প্রতি একটা ঝোঁক ছিল আমার এবং নিজেকে প্রথম সারিতে দেখতে চাইতাম সব সময়ই। সেটাই শিক্ষক হতে আমাকে সহায়তা করেছে।
পাশাপাশি নৃবিজ্ঞানে পড়ে গবেষণার প্রতি আমার অনেক আগ্রহ জন্মায়। সে আগ্রহ থেকেই মাস্টার্স ফাইনাল এক্সাম দিয়ে মাস্টার্স ফাইনাল ভাইভা এবং থিসিস সাবমিশনের আগেই ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ (ব্র্যাক জেপিজি এসপিএইচ), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করি এবং সেখানে প্রায় আড়াই বছর বিভিন্ন প্রকল্পে গবেষণার কাজ করি।
আরও পড়ুন: আবাসন সুবিধা নেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৬ ভাগ শিক্ষার্থীর
পরবর্তীতে, আইসিডিডিআর,বিতেও গবেষণার কাজ করি। এক কথায় যদি বলি, শেখা, শেখানো ও গবেষণার প্রতি ইচ্ছা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় আসা। আর শুরু থেকেই শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে ছিল বলে অন্য কোন সরকারি চাকরির পরীক্ষায়ও কখনো অংশগ্রহণ করিনি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এক সময় এই বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন; এখন শিক্ষক। এই অনুভূতিটা কেমন
সালমা আক্তার উর্মি: নিজ বিভাগের শিক্ষকতা করার সুযোগ সবাই পায় না। আমি অনেক গর্বিত নিজ বিভাগের শিক্ষক হতে পেরে। যেহেতু আমি এই বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলাম তাই বিভাগের দুর্বলতাগুলোও আমি জানি। যেখানে আমি মনে করি কাজ করতে পারব।
সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় হলো আমাকে যারা পড়িয়েছেন আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা, যাদের দ্বারা প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত হয়েছি তাদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষক হওয়ার যাত্রাটা কেমন ছিল, কীভাবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন?
সালমা আক্তার উর্মি: শিক্ষক হওয়ার জার্নিটা শুরু হয়েছে আমার অনার্স প্রথম বর্ষ থেকেই। প্রথম বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে যখন আমার ব্যাচে আমি ফার্স্ট হয়েছিলাম তখন থেকেই আমার আত্মবিশ্বাস বাড়তে শুরু করে। যার ফলশ্রুতিতে, অনার্স মাস্টার্সে উভয় পরীক্ষাতেই ৩.৬০ এবং ৩.৭৫ পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করি। যেটা ছিল আমার প্রথম প্রস্তুতি অ্যাকাডেমিশিয়ান হওয়ার।
এরপর শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই একাডেমিক জীবনের পরবর্তী সময়টায় গবেষণার কাজে নিজেকে যুক্ত করি। বিভিন্ন বিষয়ে রিসার্চ আর্টিকেল পাবলিকেশনের কাজ করি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে এখন পর্যন্ত আমার পাঁচটি পাবলিকেশন আছে। এভাবেই নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়ার জন্য প্রস্তুত করেছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার এই পথচলায় কার কাছ থেকে বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছেন? এ সম্পর্কে কোন স্মৃতি রয়েছে কি
সালমা আক্তার উর্মি: বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের তেমন কোনো স্মৃতি মনে পড়ছে না এই মূহুর্তে। তবে কিছু মানুষের সফলতা দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। বিশেষ করে আমাদের আগের ব্যাচের সিনিয়র আপুর শিক্ষক হওয়াটা আমার জন্য একটা অনেক বড় অনুপ্রেরণা ছিল। মনে হতো, চেষ্টা করলে আমার পক্ষেও সম্ভব।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার শিক্ষা জীবন থেকে এই পথে আসার পেছনে কোন মানুষগুলোর অবদান সবচেয়ে বেশি?
সালমা আক্তার উর্মি: আমার আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল আমার মায়ের। ছোটবেলা থেকেই আমার মা আমাকে বিভিন্নভাবে অনুপ্রাণিত করতেন।
এছাড়াও আমার পরিবারের সবাই আমাকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন। আমি যা করতে চেয়েছি আমার পরিবার আমাকে সেটাই করতে দিয়েছে। কখনো তাদের ইচ্ছে আমার উপর চাপিয়ে দেয়নি। এর বাইরে স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি এমন কিছু শিক্ষক পেয়েছি যারা আমাকে সবসময় গাইড করেছেন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষক হিসেবে আপনার বিভাগ এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে কোথায় দেখতে চান?
সালমা আক্তার উর্মি: শিক্ষক হিসেবে আমি আমার বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করতে পারবে—এমন একটা অবস্থানে দেখতে চাই। আমার বিভাগের প্রতিটা শিক্ষার্থী যেন নিজ যোগ্যতায় দেশে এবং দেশের বাইরে সব সেক্টরে নিজেদের যুক্ত করতে পারে—আমি সেটাই চাই।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বলে যে আমরা তথাকথিত দেশের অন্যান্য বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে কোনভাবেই পিছিয়ে নেই সেটা আমাদেরকে আমাদের কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। নিজেদেরকে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকিয়ে রাখতে হলে বিভাগের পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের দক্ষ করে তুলতে হবে। আর এভাবেই আমরা এগিয়ে যাব।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিভাগের নবীনদের প্রতি আপনার যদি কোনো পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা থাকে...
সালমা আক্তার উর্মি: যারা এই বিভাগে নবীন তাদের প্রতি আমার দিকনির্দেশনা থাকবে তারা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোতে যুক্ত করে। এছাড়াও জব সেক্টরে যাওয়ার জন্য নিজেদের যোগ্য করে তুলে। এক্ষেত্রে স্কিল বাড়ানোর বিকল্প নেই পাশাপাশি নৃবিজ্ঞানে পড়ে চাকরি পাওয়া যায় না এই ধরনের ডিসকোর্স (ভুল ধারণা) থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
সালমা আক্তার উর্মি: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্যেও রইলো শুভকামনা।