২০ মে ২০২৫, ২২:৩২

সমাবর্তন মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মী বললেন, ‘মানবতার পক্ষে লড়াই চলবে’

সমাবর্তন মঞ্চে ফিলিস্তিনি ছাত্র ও অধিকারকর্মী মোহসেন মাহদাভি  © সংগৃহীত

দুই সপ্তাহ আগেও তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কাস্টডিতে। কিন্তু মুক্তি পেয়ে গতকাল সোমবার (১৯ মে) নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি উদ্‌যাপন করলেন মুক্তি ও অর্জনের এক অনন্য মুহূর্ত। ফিলিস্তিনি ছাত্র ও অধিকারকর্মী মোহসেন মাহদাভি গ্র্যাজুয়েট হলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির স্কুল অব জেনারেল স্টাডিজ থেকে দর্শন বিষয়ে।

এদিন সমাবর্তন মঞ্চে হাঁটার সময় তার সহপাঠীরা উচ্ছ্বাসভরে করতালির মাধ্যমে স্বাগত জানায় তাকে। সমাবর্তন মঞ্চে আবেগঘন মুহূর্তে তিনি বললেন, ‘মানবতা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে আমাদের লড়াই চলবে।’ খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

৩৪ বছর বয়সী মাহদাভি মঞ্চে হাঁটার সময় তিনি কেফিয়েহ (ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যবাহী স্কার্ফ) পরিহিত ছিলেন। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি মঞ্চে উঠে চুমু ছুঁড়ে দেন ও নতজানু হয়ে সম্মান জানান। অনুষ্ঠান শেষে তিনি ক্যাম্পাসের বাইরে একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অংশ নেন, যেখানে তিনি তার এক সহপাঠী মাহমুদ খালিলের ছবি উঁচিয়ে ধরেন। যিনি এখনো ফেডারেল কাস্টডি আটক আছেন।

মাহদাভি বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন চেয়েছিল আমি যেন এই আনন্দ, এই অর্জনের অংশ না হতে পারি। তারা চেয়েছিল আমি কারাগারে থাকি, পড়াশোনা না করতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কথা বলার কারণেই আন্তর্জাতিক ছাত্রদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। প্রশাসন এমন একটি অস্পষ্ট আইন ব্যবহার করছে, যাতে পররাষ্ট্রনীতির হুমকি বিবেচনায় নাগরিকদের আইনি মর্যাদা বাতিল করা যায়।’

একজন বিচারক তার মুক্তি দেওয়ার সময় ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপকে ‘ম্যাকার্থিস্ট দমননীতি’র সঙ্গে তুলনা করেন।

কলম্বিয়ার উচ্চতর প্রশাসনের সমালোচনা করে মাহদাভি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি মেনে নিয়ে নিজের আত্মা বিক্রি করেছে। আমাদের কথা বলার স্বাধীনতাকে অবজ্ঞা করেছে।’

তিনি জানান, ‘শান্তি রক্ষা ও সংঘাত সমাধান’ নিয়ে কলম্বিয়ায় স্নাতকোত্তর পড়ার সুযোগ পেলেও অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধ হওয়ায় সেটি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

তবুও আশা ছাড়েননি মাহদাভি। ‘যখন আমি মঞ্চে উঠলাম, তখন উল্লাস ছিল মানবতা, ন্যায়বিচার আর সাম্যের জন্য। আমরা চালিয়ে যাব—ট্রাম্প প্রশাসন বা কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেউই আমাদের থামাতে পারবে না’ বলেন তিনি।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জনপ্রিয় মুখ মোহসেন মাহদাভি। এই ছাত্রনেতা ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন এবং দখলদার ইসরাইলের গণহত্যার সমালোচনা করেছিলেন।

যার কারণে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে তাকে গ্রেপ্তার করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। ট্রাম্প প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অভিযোগ না এনে তাকে দেশ থেকে বিতাড়নের আদেশ দিয়েছিলে। পরে আদালতের মাধ্যমে ছাড়া পান তিনি।