০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:৪৪

উৎক্ষেপনের অপেক্ষায় দেশে তৈরী প্রথম রকেট

উৎক্ষেপনের অপেক্ষায় দেশে তৈরী প্রথম রকেট।  © সংগৃহীত

ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তরুণ শিক্ষার্থীদের একটি দল প্রথমবারের মত রকেট তৈরী করে দেশজুড়ে চমক সৃষ্টি করেছেন। দীর্ঘ গবেষণার পর রকেট তৈরীর প্রথম ধাপ সফলভাবে পার হলেও এখন দেশে তৈরী এই রকেট উৎক্ষেপনের অপেক্ষায় আছে শিক্ষার্থীরা। সরকারের সহযোগীতা ও অনুমতি মিললে উৎক্ষেপণ হবে দেশে তৈরী প্রথম কোন রকেট।

শিক্ষার্থীদের ওই দলনেতার নাম মো. নাহিয়ান আল রহমান ওরফে ওলি। তিনি ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ইলেক্টিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্টনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের (ইইই) শিক্ষার্থী। গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তার বাস।

প্রথম তৈরী রকেটের সঙ্গে তরুণ শিক্ষার্থীরা।

 

জানা যায়, ছোট বেলা থেকেই বিমান ও রকেট বানানোর নেশা ছিল নাহিয়ান আল রহমান ওলির। এরপর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হওয়ার পর সেই স্বপ্ন পূরণে উদ্যোগী হয় ওলি। ২০১২ সালে সহপাঠী বন্ধু নিয়ামুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করে রকেট বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য- উপাত্ত্ব সংগ্রহের কাজ।

আরও পড়ুন: আধুনিক ডিভাইস ব্যবহার শিশুদের বেশি আত্মকেন্দ্রিক বানাচ্ছে

এরপর তারা দেশ-বিদেশের পরিচিত বড় ভাই-বন্ধুদের কাছ থেকে রকেট সংক্রান্ত বই সংগ্রহ শুরু করে। এভাবে তারা প্রায় চার শতাধিক বই পড়াশোনা করে প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা শুরু করে। কিন্তু মাঝ পথে এসে টাকার অভাবে ছিটকে পড়ে তারা। এতেও দমে যাননি তারা। ২০১৯ সালে ফের ব্যক্তিগতভাবে টাকা সংগ্রহ করে ২০ জনের দল নিয়ে আলফা সায়েন্স ল্যাবের মাধ্যমে শুরু হয় রকেট তৈরির কাজ। এভাবেই ২০২১ সালের শেষ দিকে এসে তারা রকেট তৈরির কাজ সম্পন্ন করে।  

ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেক্টিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্টনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মো. আ. ওয়াহিদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, র্দীঘ প্রচেষ্টায় এই রকেট তৈরী করেছে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এই রকেট আকাশে উৎক্ষেপণ করতে হলে সরকারি বরাদ্দ ও অনুমতির প্রয়োজন।

তিনি আরও জানান, অধিদপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন সেখান থেকে অনুমতি পেলে সেই চিঠি যাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাই মূখ্য। তবে আমরা আশা করছি দেশের স্বার্থে সরকার এই তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াবে।  

নাহিয়ান আল রহমান ওরফে ওলি জানান, প্রাথমিকভাবে আমরা ৬ ফুট ও ১০ ফুট উচ্চতার দুটি করে প্রোটোটাইপ তৈরি করেছি। এর মধ্যে একটির নাম ধূমকেতু-ওয়ান। এর ফোর্স প্রায় দেড়শ নিউটন। ধূমকেতু-ওয়ানের রেঞ্জ প্রায় ২০ কিলোমিটার।  অপরটির নাম ধূমকেতু-টু’। এর ফোর্স ৪০০ নিউটন।  এটির রেঞ্জ প্রায় ৫০ কিলোমিটার।

আরও পড়ুন: বাংলা একাডেমির নতুন সভাপতি কথাসহিত্যিক সেলিনা হোসেন

ওলি আরও জানান, স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপে আছি। যেদিন সরকারের অনুমতি নিয়ে এই রকেট উৎক্ষেপণ করতে পারবো তখন এই স্বপ্ন সফলতা পাবে বলে আশা করছি। তবে স্বপ্ন শতভাগ স্বার্থক হবে যদি এই রকেট উৎক্ষেপণের পর সফলভাবে ভূ-পৃষ্ঠে নামাতে পারি। এজন্য সরকারের সহযোগীতা দরকার। সেই সঙ্গে বাংলার আকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আমরা এই স্বপ্নের পূর্ণতা দেখতে চাই।  

কলেজ সূত্র জানায়, এর আগেও আলফা সায়েন্স ল্যাবের এই শিক্ষার্থীদের এই টিম একাধিক রোবোটিক্স প্রজেক্টে সফল হয়েছে। এতে তারা ২০১৯ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত টেকফেস্ট নির্বাচনী পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়। পরে তারা ভারতের বিখ্যাত আই.আই.টিতে অনুষ্ঠিত টেকফেস্টে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। সেখানেও তারা শীর্ষ-৫ এ জায়গা করে সেমিফাইনালিস্ট হওয়ার গৌরব অর্জন করে।  

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলমগীর কবীর বলেন, রকেট তৈরীর বিষয়টি দেশের জন্য আশা জাগানিয়া একটি বার্তা। তবে এখন এটি সফল উৎক্ষেপণের জন্য সরকারের অনুমতি প্রয়োজন। খুব দ্রুত এ সংক্রান্ত চিঠি সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হবে। আশা করছি এর মধ্য দিয়ে দেশে আবিষ্কারের নতুন অধ্যায় সূচিত হবে।