পাটে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া থেকে এন্টিবায়োটিক আবিস্কার

পাট ও এন্টিবায়োটিক
পাট ও এন্টিবায়োটিক  © প্রতীকী ছবি

পাটের মধ্যে বাস করা ব্যাকটেরিয়া থেকে নতুন এক এন্টিবায়োটিক আবিস্কার করলেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের অধ্যাপক হাসিনা খান, রিয়াজুল ইসলাম এবং জীন প্রকৌশল ও জৈব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আফতাব উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল গবেষক এই এন্টিবায়োটিক আবিস্কার করেন।

তারা নতুন এই এন্টিবায়োটিকের নাম দিয়েছেন ‘হোমিকরসিন’। শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে এটি কাজ করবে বলে প্রমাণ মিলেছে জানিয়েছেন এই গবেষকরা। বিশ্বখ্যাত ন্যাচার পাবলিসিং গ্রুপের ‘সাইন্টিফিক রিপোর্ট’ জার্নালে তাদের এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

পাট নিয়ে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের অধ্যাপক হাসিনা খান। পাটের জীবন রহস্য বের করতে গিয়ে তিনি এর বিভিন্ন অংশে নানারকম অনুজীবের সন্ধান পান। এসব অনুজীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট জানতে একই বিভাগের অধ্যাপক রিয়াজুল ইসলামকে সাথে নিয়ে শুরু করেন নতুন গবেষণা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সাল থেকে পাটের ব্যাকটেরিয়া নিয়ে আমরা কাজ করি। তবে এই এন্টিবায়োটিক নিয়ে কাজ শুরু করেছি গত তিন বছর ধরে। প্রথমে আমরা এই ব্যাকটেরিয়াটাকে আবিস্কার করি এবং এরপরে এর জীবনরহস্য আবিস্কার করি যেটাকে জেনম সিকুয়েন্স বলা হয়। পাটের তন্তুর খাঁজে খাঁজে ৫০টিরও বেশি অণুজীব বা ব্যাকটেরিয়া বাস করে। এসব ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে স্টেফাইলো কক্কাস হোমিনিস নামের একটি ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। যা তার শরীর থেকে এমন কিছু তৈরি করে যাতে আবার অন্য ব্যাকটেরিয়ারা মারা যায়। যে মাইক্রোঅরগানিজমসগুলো পাচ্ছি সেগুলোকে আমরা আইসোলেট করি। আইসোলেট করতে গিয়ে দেখলাম যে একটা ব্যাকটেরিয়া যেটা খুব ভালো এন্টিম্যাক্রোভ্যাল এক্টিভিটি দেখাচ্ছে। এটা দেখে আমরা তার কম্পাউন্ড দেখার চেষ্টা করি। তার জেনোমের মধ্যে এই এন্টিবায়োটিকটা তৈরী করার ফুল ইনফরমেশন আছে। তখন হোল জেনম সিকুয়েন্স করি এটা এবং এনালাইসিস করে দেখলাম যে খুব সুন্দরভাবে কিছু অনলাইন টুল আছে যেগুলো ইউজ করে যে এন্টিবায়োটিকগুলো তৈরী করে সে এন্টিবায়োটিকে পুরো জিন ক্লাস্টারটা আমরা এখানে খুঁজে পেলাম। এবং এটাকে আলাদা করতে আমাদের প্রায় দেড় বছর সময় চলে যায়। সাইন্স ল্যাবরেটরির সহযোগিতায় পরবর্তিতে আমরা এটাকে আলাদা করতে সক্ষম হই।

তিনি বলেন, ব্যাকটেরিয়াটা চিহ্নিত করার পর জাপানের টোকিও ইউনিভার্সিটি এবং যুক্তরাজ্যের একজন প্রফেসরের সহযোগিতা নিয়ে এই এন্টিবায়োটিকের ডিটেইলস স্ট্রাকচার বের করি। আমরা দেখতে পাই এই স্ট্রাকচার নিয়ে কেউ কখনো রিপোর্ট করেনি এবং স্ট্রাকচারের এন্টিবায়োটিকের ইফিসিয়েন্সি অনেক বেটার।

কবে নাগাদ এই এন্টিবায়োটিক হাতে পাওয়া যাবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে নতুন ড্রাগের ডিসকভারি করা। কিন্তু এই ড্রাগ মানুষের হাতে পৌঁছানোর দায়িত্ব ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানী এবং সরকারের। এখানে অনেক ফান্ডিং এর একটা ব্যাপার আছে। নরমালি যেকোন একটা এন্টিবায়োটিক মার্কেটে আনতে গেলে ৫ বছরের বেশি সময় লাগে। পরবর্তি আমাদের আরও অনেক ধাপ বাকি আছে যা করতে অনেক সময় লেগে যাবে। এরসাথে জড়িত হচ্ছে গভমেন্ট বা ফার্মাসিউটিক্যালস থেকে কি পরিমাণ ফান্ডিং দেয় সেটার উপর নির্ভর করে আসলে এটা মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। নাহলে এটা ডিফিকাল্ট হবে।

আরও দেখুন: ঢাবি অধ্যাপকদের গবেষণায় বিশ্ব পেল পাট থেকে নতুন এক এন্টিবায়োটিক

 ‘হোমিকরসিন’ নামের এই এন্টিবায়োটিকের মোট পাঁচটি ধরণ পেয়েছেন তারা। যা এন্টিবায়োটিকের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উম্মোচন করবে। যেখানে লেখা থাকবে বাংলাদেশের নাম।


সর্বশেষ সংবাদ