নোবিপ্রবির ল্যাবে ফিশ পাউডার তৈরি
ভোজনরসিক বাঙালির পাতে এবার যুক্ত হলো পুষ্টিমান সমৃদ্ধ মাছের পাউডার। মাছ ভাজা, মাছের মুড়িঘন্ট, ছোট মাছের চঢচরি সবই ছিল রসনা বিলাস বাঙ্গালীর নিত্য আহার। মাছকে পাউডার হিসেবে তৈরি করায় এবার সবাই সমান ভাগে মাছ খেতে পারবে। মাছের মাথা ও লেজ নিয়ে মনকষাকষির দিন বোধ হয় ফুরাতে এলো।
সম্প্রতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তৈরি করেছেন উচ্চ পুষ্ঠিমান সমৃদ্ধ মাছের পাউডার। খাদ্য নিরাপত্তার সব মানদন্ড বজায় রেখে পাউডারটি ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের ল্যাবে তৈরি করা হয়েছে। পরবর্তীতে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে বহুল ব্যবহৃত তরকারি যেমন- ডাল, আলু, কচু শাক, লাল শাক, বেগুন, শিম, লাউ, চাল কুমড়া, ফুল কপি, মুলা, কচুরমুরি, শিমের বিচি ও ভর্তা হিসেবে ফিশ পাউডার রান্না জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
আজ শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারী) লক্ষীপুরের চরআলেকজান্ডারে দিনব্যাপী মাঠ দিবস ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সুবিধাভোগী ৪০টি পরিবারের সদস্যরা ও স্থানীয়রা অংশগ্রহণ করেন।
নোবিপ্রবি বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম, প্রধান আলোচক হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পরিচালক ড. মো. মনিরুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি হিসেবে নোবিপ্রবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফারুক উদ্দিন, ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম হোসেন, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. মফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন রামগতি পৌরসভার মেয়র জনাব মেজবাহ উদ্দিন এবং নোয়াখালী সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার।
সভায় প্রধান অতিথি উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম বলেন, নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার সাফল্য অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি উক্ত গবেষণা কার্যক্রমকে আরো বেগবান ও জনগনের কাছে পৌছে দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ ছাড়া তিনি ফিশ পাউডারের স্বাদের পাশাপাশি এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় কতটুকু ভুমিকা রাখবে সেটি নিয়েও গবেষণা করার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, ফিশ পাউডার ব্যবহারের যে জনপ্রিয়তা আজকে আমরা লক্ষ্য করলাম তা আমাকে আশাবাদী করে তুলেছে। আগামী দিনে প্রজম্মের পুষ্টি চাহিদা রোধ ও উন্নত জাতি গঠনে মাছের তৈরি পুষ্টি পাউডার অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি। তিনি সবাইকে বলেন ৪০ বছর পর্যন্ত গরু খাবেন তারপর গরু যা খায় তা খাবেন এবং সাথে ফিস পাউডার খাবেন।
বক্তারা মাছের পাউডারের স্বতঃস্ফুর্ত ব্যবহারের ভুয়সী প্রশংসা করেন। সুবিধাভোগীদের একজন কিশোরী সোনিয়া আক্তার বলেন, আগে মাছের মাথা ও লেজ কে খাবে তা নিয়ে মনকষাকষি হতো কিন্তু পাউডারের খাবার অন্য খাবার থেকে সুস্বাদু ও সকলে সমান ভাগ পায়।
আরেকজন কিশোরীর মা রিনা বেগম বলেন, মাছের পুষ্টি পাউডার দিয়া রান্না খাবার আমাদের নতুন নতুন আইটেম যুক্ত করার সুযোগ করে দিয়েছে।
গবেষক দলের সদস্য ড. শহীদ সরোয়ার ও শুভ ভৌমিক বলেন ফিশ পাউডার নিরাপদ পুষ্টি গুনে অন্যান্য মাছের থেকে অনেক উন্নত। বিশ্বাস করি এটি কিশোরী এবং অন্যান্য সুবিধা বঞ্চিতদের সংকট সময়ে উপকারে আসবে।
প্রকল্পের গবেষণা সহযোগী আবদুল আজিজ ও সাইদুজ্জামান সাব্বির জানান, আমরা অংশগ্রহণকারী পরিবারের সমূহের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করেছি যা সত্যিই আশা ব্যঞ্জক।
প্রধান গবেষক ড. আবদুল্লাহ-আল মামুন ফিশ পাউডার স্থায়িত্বশীল ব্যবহারের আশাবাদী এবং সংশ্লিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করেন। অনুষ্ঠানে ৪০টি পরিবারের নারী ও কিশোরীরা ফিশ পাউডার দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবার ও খাবার তৈরির প্রযুক্তি প্রদর্শন করেন।
বাংলাদেশের তিনটি অঞ্চলে লক্ষীপুরের চর আলেকজান্ডার, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি ও খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ১২০টি পরিবারের ছয় শতাধিক সদস্যদের মধ্যে সাপ্তাহিক জনপ্রতি ৪০ গ্রাম হারে গত ১৬ সপ্তাহ ধরে এই পাউডার বিতরণ করা হয়। নারীর ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে অংশগ্রহণকারী গৃহের মহিলারা বিশেষ প্রণোদনা পেয়েছেন। গবেষণার প্রয়োজনে ২৪০ পরিবারের কিশোরী মেয়েদের রক্তের নমুনায় আয়রণ, জিংক, ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়েছে এবং ১৮ সপ্তাহ পর আগামী মার্চে পুনঃনমুনায়ন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট গবেষকরা জানিয়েছেন।