ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের সময়কাল বদলে যেতে পারে, রাবি অধ্যাপকের গবেষণা
একক প্রজাতি হিসেবে ইলিশ দেশের সর্বোচ্চ উৎপাদনশীল মাছ। দেশে ইলিশের উৎপাদন ধরে রাখতে প্রতি বছর ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। সারা বছর কম-বেশি প্রজনন হয়ে থাকলেও অক্টোবরের পূর্ণিমা হচ্ছে ইলিশের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম।
এ সময়ে মা ইলিশগুলো ডিম ছাড়ার জন্য সাগর থেকে নদীতে আসে। তবে গত বেশ কয়েক বছর নিষিদ্ধ সময়কাল শেষ হওয়ার পরও নদীতে পাওয়া গেছে মা-ইলিশ। এতে করে পাওয়া যাচ্ছে না ইলিশ ধরা বন্ধ রাখার পূর্ণাঙ্গ সুফল।
তাই ‘ইলিশের সঠিক প্রজনন মৌসুম নির্ধারণ’ এবং সে অনুযায়ী ইলিশ ধরার ‘নিষিদ্ধ সময়কাল পুনর্বিন্যাসে’ কাজ করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রারি) ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক মো. ইয়ামিন হোসেন। মৎস্য ইনস্টিউটের একটি প্রকল্পের অধীনে কাজ করছেন তিনি।
সম্প্রতি স্কোপাস এর জরিপে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এখন পর্যন্ত সেরা ৫০ জন গবেষকের তালিকায় প্রথমে থেকে সেরা গবেষকের স্বীকৃতি পেয়েছেন ফিশারিজ বিভাগের এ অধ্যাপক । তার প্রত্যাশা ‘পুনর্বিন্যস্ত এ নিষিদ্ধ সময়কাল’ দেশের ইলিশ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করবে।
অধ্যাপক ইয়ামিন বলেন, অন্যান্য অনেক মাছের মতোই ইলিশও প্রজননের ক্ষেত্রে লুনার সাইকেল অনুসরণ করে। সরকার পূর্ণিমার দিনকে কেন্দ্র করে ইলিশ ধরার নিষিদ্ধ সময়কাল নির্ধারণ করে। এ বছরও ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। তবে এ বছর মেঘনায় ইলিশ প্রবেশ করেছে ১৭ অক্টোবরের পর এবং পদ্মায় ইলিশ প্রবেশ করেছে ১৯ অক্টোবরের পর।
এজন্য এবার নিষিদ্ধ সময়কাল শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পরেও নদীগুলোতে মা-ইলিশ পাওয়া যেতে পারে। নিষিদ্ধ সময়কাল নির্ধারণে কিছু অসংগতি থাকায় এ রকম ঘটনা গত বেশ কয়েক বছর ধরেই ঘটে আসছে। এ কারণে আমরা ইলিশ ধরা বন্ধ রাখার পূর্ণ সুফল পাচ্ছি না- যোগ করেন তিনি।
দেশে মোট মাছ উৎপাদনের ১২.০৯ শতাংশের যোগান দেয় ইলিশ। ২০১৯-২০ সালে দেশের মোট ইলিশ উৎপাদন ছিল ৫.৩৩ লাখ টন। এ গবেষণা আসছে দিনে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করতে পারে ইলিশ উৎপাদনে।
গবেষণার অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা গত ৪ বছর যাবত ইলিশের সঠিক প্রজনন মৌসুম নির্ধারণে তথ্য সংগ্রহ করছি। আশা করছি আগামী বছরের জুনে আমরা গবেষণা কার্যক্রম শেষ করতে পারব এবং এ ইলিশ ধরা বন্ধ রাখার সময়কালটুকু যথাযথভাবে পুনর্বিন্যাস করতে পারবো।”
এছাড়াও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সমৃদ্ধকরণ এবং দেশের বাওরগুলোতে পুরনো দেশী মাছ ফিরিয়ে আনাসহ চারটি গবেষণা প্রকল্পে কাজ করছেন তিনি।
বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক সম্পদ সমৃদ্ধকরণের লক্ষ্যে সমুদ্রে মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময়কালটির কার্যকারিতা যাচাই এবং সমুদ্রে জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত না করে কী পরিমাণ ধরা যায় তা নির্ধারণের লক্ষ্যে গবেষণা চলছে। এতে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক।
২০১৫ সাল থেকে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে মাছের প্রজনন মৌসুমের সুরক্ষায় ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন মাছ শিকার নিষিদ্ধ। গবেষণায় ভিন্ন চিত্র উঠে এলে বদলে যেতে পারে এ সময়কালও।