দেশে করোনা পরীক্ষার কিট তৈরি নিয়ে সুখবর দিলেন ড. বিজন কুমার
করোনাভাইরাসের র্যাপিড টেস্ট কিট ‘গণস্বাস্থ্য র্যাপিড ডট ব্লট আবিস্কার’ করেছেন বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল। সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে তার গবেষণা দলের সঙ্গে রয়েছেন তিনি। কিট সরকারের হাতে তুলে দেয়ার আগ পর্যন্ত সেখানেই থাকবেন বলে জানান।
সার্স ভাইরাস পরীক্ষার কিটের পেটেন্ট ড. বিজন কুমারের নিজের। ২০০৩ সালে তিনি সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট এজেন্সিতে চাকুরি করার সময় এই কিট আবিস্কার করেন। ল্যাবরেটরিতে ভাইরাস তৈরি করে তা থেকেই টেস্টিং কিট তৈরি করা হয় তখন। ড. বিজন কুমার ডয়েচে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কথা বলেছেন।
ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘আজ-কালের মধ্যে কাঁচামাল এসে যাবে। সরকারের আন্তরিক সহায়তায় সব প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে এই কিট আমরা দিতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘ল্যাবরেটেরিতে তৈরি করোনা ভাইরাসের পার্টিকেল থেকে টেস্টিং কিট তৈরি হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে ওই মানের ল্যাবরেটরি না থাকায় সেটা এখানে সম্ভব হচ্ছে না। যুক্তরাজ্য থেকে কাঁচামাল আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এবার যে পার্টিকেল আনছি সেটা নিরাপদ, বয়োলোজিক্যাল হ্যাজার্ড ফ্রি৷’
ড. বিজন কুমার বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আরো অনেক দেশ কিট উৎপাদনের জন্য এই কাঁচামাল চায়, চাহিদা অনেক। তবে কাঁচামাল পাচ্ছি এটাই আশার কথা।’
কিট আবিষ্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০০৩ সালের সার্স ভাইরাস আর এখনকার কোভিড-১৯ (করোনা)-এর মিল আছে ৮০ ভাগ। ওটা ছিল সার্স করোনা ভাইরাস-১। আর এখনকারটা সার্স করোনা ভাইরাস-২। নাম দেয়া হয়েছে কোভিড। সিঙ্গাপুরে ল্যাবরেটরিতে ভাইরাসটি নিজে গ্রো করিয়ে কাছ থেকে দেখেছি, যেটা ভাবলে ভয় লাগে।’
ড. বিজন কুমার শীলের দাবি, ‘বিশ্বে করোনা টেস্টের কিট আরো আছে। কিন্তু আমাদেরটা তাদের চেয়ে আলাদা। আমাদের কিটের বৈশিষ্ট্য হলো, এটা কোনো পজেটিভ কেসকে বাদ দেবে না। এটাই মূল সাফল্য। কারণ পজেটিভ কেস বাদ পড়লে করোনা ছড়িয়ে পড়ে। অন্যান্য র্যাপিড কিটে ব্লাড দিয়ে করে। আমাদেরটা হলো ডট ব্লট।’
তিনি বলেন, রক্তের সিরাম থেকে করা হয় এটি। খুবই সেনসিটিভ এবং ১৫ মিনিটে ফল পাওয়া যাবে। তবে আমাদের ল্যাবরেটরি থাকলে ভাইরাসটা এখানের ল্যাবরেটরিতে গ্রো করে কাঁচামাল তৈরি করতে পারতাম, তাহলে অনেক আশাবাদী হতে পারতাম৷’
ড. বিজন কুমার শীলের বলেন, ‘এখন করোনার মূল সমস্যা হচ্ছে আতঙ্ক। সর্দি-কাশি হলেই মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। আমরা প্রাথমিকভাবে এক লাখ বা আরো বেশি তৈরি করব। ফলে মানুষ টেস্ট করাতে পারবে। এতে আতঙ্ক কেটে যাবে।’
তিনি জানান, ‘করোনা এখন পরিবেশে ‘অ্যাডাপ্টেশন’ পর্যায়ে আছে। তবে তাপমাত্রাও বাড়ছে। বেশি তাপমাত্রায় ভাইরাসটি বেশিক্ষণ টিকতে পারে না। আক্রান্ত কেউ কাছ থেকে হাঁচি বা কাশি না দিলে ছড়ায় না। তাই আশা করি, আমরা ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারব।’
তাঁর সঙ্গে করোনা র্যাপিড টেস্ট কিট তৈরিতে যুক্ত আছেন, ড. নিহাদ আদনান, ড. মোহাম্মদ রঈদ জমির উদ্দিন, ড. ফিরোজ আহমেদ এবং সিংগাপুরের এক গবেষক৷