বিজ্ঞান মেলায় চার বন্ধুর ‘ফায়ার অটোমেশন’ আবিষ্কার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত হয় বিজ্ঞান মেলা। এতে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেশ কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
বিজ্ঞান মেলায় চবির ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ মাহি, ওমর শিকদার রাফি, ইউশা শামীম খান ও ফায়াজ নাবিদ হাসান চার বন্ধুর নতুন একটি আবিষ্কার অনেকের নজর কেড়েছিল। যার নাম ছিলো ‘ফায়ার অটোমেশন সিস্টেম’।
মূলত সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ভয়াবহতা ও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই এই প্রকল্পটি তৈরী করেছেন তারা। এতে দেখানো হয়েছে কিভাবে স্বল্প খরচের মধ্যে বড় বড় অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারে একটা প্রতিষ্ঠান কিংবা একটা ঘর। এই পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্যাস লিকেজের সংকেত পৌঁছে যাবে ঘরের মালিকের নিকট। পাশাপাশি গ্যাস লিকিজের পর ছড়িয়ে যাওয়া গ্যাসকে কক্ষ থেকে বের করতে সহযোগিতা করবে এই প্রোজেক্টটি। এছাড়া বড় প্রতিষ্ঠানগুলো একটু বেশি টাকা খরচ করলেই অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গেই পুরো ভবনের সকল দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে।
যেভাবে এই প্রকল্পটি কাজ করবে:
প্রথমেই গ্যাস সিলিন্ডারের সঙ্গে একটি (এলপিজি গ্যাস ডিটেক্টর) সেন্সর সংযুক্ত করতে হবে। যা সিলিন্ডার থেকে মোটামুটি নিরাপদ দূরত্বে বসানো হবে। এই সেন্সরটি মিথেন, প্রোপেন, বিউটেন ও ইথানল এই ৪ ধরনের গ্যাস সনাক্ত করতে পারবে। যেই গ্যাসগুলো বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যবহার হচ্ছে। এরপর ঘরের আরেকটু নিরাপদ স্থানে আরডিএনও নামক একটি ছোট্ট যন্ত্র বসাতে হবে। যেই যন্ত্রে সেন্সর থেকে যেকোনো ধরনের সংকেত গ্রহণ করে সঙ্গে সঙ্গেই টিভির ডিসপ্লে কিংবা ডিজিটাল ঘড়িতে সংকেত পৌঁছানোর সিস্টেমটা সেট করে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আরডিএনও যন্ত্রটির সঙ্গে তার সংযোগ করে টিভিতে লাইন দেওয়া যাবে।
ফলে সংকেতটা টিভিতে দেখতে পাওয়া যাবে। আর যদি ব্লুটুথ সিস্টেম থাকে টিভিতে। তাহলে আর তার সংযুক্ত করতে হবে না। এছাড়া ডিজিটাল ঘড়ি কিংবা ডিসপ্লেতে দেখাবে এমন যেকোনো কিছুতেও সংযোগ দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি একটি এলার্ম লাগালে রুমে কেউ না থাকলেও এলার্মের আওয়াজ শুনে গ্যাস লিকেজের বিষয়টি ঘরের মানুষ নিশ্চিত হতে পারবে।
তবে বিপদের আশঙ্কা বেশি থাকলে আগের সেন্সরটির পাশাপাশি একটি ফ্লেইম সেন্সর সংযুক্ত করলে বায়ু নিষ্কাশন পাখাটি গ্যাস লিকেজের সংকেত পাওয়া মাত্রই স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্বাভাবিকের তুলনায় জোরে চলবে। ফলে দ্রুত গ্যাসগুলো রুম থেকে বের হয়ে যাবে।
এছাড়া বড় ফ্যাক্টরি কিংবা হাসপাতাল গুলোতে ফ্লেইম সেন্সর এবং মোটর সিস্টেম তথা সার্বো নামক যন্ত্রটি সংযুক্ত করে আরডিএনও ব্যবহারের এর মাধ্যমে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই ভবনের সকল দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে। এক্ষেত্রে খরচের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি হবে। তবে আরডিএনও যন্ত্রটিতে নির্দিষ্ট এই প্রোগ্রামগুলো সেট করতে হবে আলাদাভাবে। এক্ষেত্রে প্রোজেক্টটি যদি কোনো বড় কোম্পানি কিংবা প্রতিষ্ঠান হাতে নিয়ে থাকে। তাহলে আরডিএনও যন্ত্রটিতে স্বল্প খরচেই এই প্রোগ্রামটি যুক্ত করে দিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন প্রোজেক্টির উদ্যোক্তারা।
ওমর শিকদার রাফি বলেন, আমি এবং আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ মাহি ক্লাস ফাইভ থেকেই বিভিন্ন লাইট, মোটর এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করতাম। তখন ইউটিউবে দেখে যে যন্ত্রপাতি লাগবে মনে হতো সেগুলো কিনে রাখতাম। এরপর নিজেরাই ছোটোখাটো প্রজেক্ট করতাম। সপ্তম শ্রেণীতে পড়াকালীন আমাদের স্কুলে বিজ্ঞান মেলা হবে জানতে পেরে আমরা দু'জনেই সেখানে নাম দিয়েছিলাম।
এরপর আরও কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আমাদের প্রথম প্রজেক্ট ‘Atoumatic Trouble protected railway station and train’ তৈরী করেছিলাম। এই প্রজেক্ট নিয়ে আমরা স্কুলে ২য় স্থান অর্জন করি। এটা ছিলো আমাদের প্রথম অনুপ্রেরণার জায়গা। এরপর আমরা বিভিন্ন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমাদের দ্বিতীয় প্রোজেক্টটি ছিলো ‘smart city’ নামক একটি প্রোজেক্ট। সেটাতেও সফলতা পেয়েছিলাম।
সর্বশেষ গত ২৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া বিজ্ঞান মেলায় ‘ফায়ার অটোমেশন’ প্রোজেক্টটি উপস্থাপন করি আমরা। আমাদের প্রজেক্টটার মূল বিষয় ছিলো নিরাপত্তা। যেকেউ চাইলে এই প্রোজেক্টকে কাজে লাগিয়ে স্বল্প খরচে নিজের ঘর কিংবা ফ্যাক্টরির নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে।
নিজেদের স্বপ্ন নিয়ে তারা বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত যতগুলো প্রোজেক্ট তৈরী করেছি এগুলোর কোনো স্পন্সর পাইনি। নিজেদের হাত খরচের টাকা দিয়েই এসব প্রোজেক্ট তৈরী করেছি। আমরা স্বপ্ন দেখি জনগণের নিরাপত্তার জন্য একটা সময় কেউ না কেউ এগিয়ে আসবে। আর বড় কোনো প্রতিষ্ঠান যদি চায় খুব সহজেই মানুষের কাছে এসব সেবা পৌঁছে দিতে পারবে। আমরা ভবিষ্যতে স্পন্সর পেলে আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে এদেশের মানুষের উপকার করতে চাই।