২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:৪০

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাডের দুর্ঘটনা এড়াতে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীর মনিটরিং প্রযুক্তি উদ্ভাবন

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থী ইরান সরদার ও তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তি   © সংগৃহীত ও সম্পাদিত

সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে এক পথচারীর মৃত্যুর ঘটনাটি সাধারণ মানুষের মনে নিরাপত্তা শঙ্কা তৈরি করেছে। সেই শঙ্কা থেকেই মেট্রোরেল অবকাঠামোর সম্ভাব্য ঝুঁকি আগে থেকেই শনাক্ত করতে এবং বড় দুর্ঘটনার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বার্তা দিতে সক্ষম ‘মেট্রোরেল বিয়ারিং প্যাড সেফটি মনিটরিং সিস্টেম’ নামে একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইরান সরদার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (সিআইএস) বিভাগে পড়াশোনা করছেন।

জানা যায়, ২৬ অক্টোবর দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ফার্মগেটে মেট্রোরেলের ৪৩৩ নম্বর পিলার থেকে একটি বিয়ারিং প্যাড পড়ে পথচারী আবুল কালাম আজাদ (৩৫) ঘটনাস্থলেই মারা যান। এর আগে ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর একই এলাকার ৪৩০ নম্বর পিলার থেকেও একটি প্যাড পড়ে মেট্রোরেল চলাচল প্রায় ১১ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। দুর্ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করলে বিষয়টি দেখতে ইরান সরদার ফার্মগেটে যান। তখনই তার মনে হয় যে, শুধু ভিডিও নজরদারি নয়, ঝুঁকি বা দুর্ঘটনার আগাম সতর্কবার্তার জন্য আরও কার্যকরী প্রযুক্তি প্রয়োজন। এই ভাবনা থেকে টানা ১২ দিনের প্রচেষ্টায় তিনি তৈরি করেন ‘মেট্রোরেল বিয়ারিং প্যাড সেফটি মনিটরিং সিস্টেম’। এই প্রযুক্তি বিয়ারিং প্যাডের নড়াচড়া আগেভাগেই বা ত্রুটি শনাক্ত করে সতর্কবার্তা দিতে পারে।

এ বিষয়ে ইরান সরদার জানান, তার তৈরি সিস্টেমটি বিয়ারিং প্যাডে সেন্সর লাগিয়ে তাৎক্ষণিক নজরদারি করবে। যেকোনো কম্পন বা কাঠামোগত বিচ্যুতি সেন্সর সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত করবে। কোন পিলারের প্যাড সরে গেছে তা মনিটরে দেখাবে। একই সঙ্গে অ্যালার্ম বাজবে এবং কন্ট্রোল রুমে সতর্কবার্তা যাবে। এতে দুর্ঘটনা ঘটার আগেই ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যদি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করে, তবে তিনি প্রযুক্তিটিকে মেট্রোরেলে ব্যবহারযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মেট্রোরেলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সক্ষমতা আরও বাড়বে এবং সাধারণ পথচারীরাও নিরাপদে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারবে।’

আরও পড়ুন: বেরোবির হলে ‘ম্যানার শেখানো’র নামে র‍্যাগিং, হাসপাতালে শিক্ষার্থী

ইরান সরদার বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম সরদার ও গৃহিণী মমতাজ বেগমের তিন ছেলের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। তিনি ২০২১ সালে গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০২৩ সালে মাহিলাড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বর্তমানে তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (সিআইএস) বিভাগে প্রথম বর্ষে পড়ছেন। 

২০১৭ সালে রোবট সোফিয়াকে দেখে ইরানের রোবটিক্সে আগ্রহ জন্মায়। পরে ২০২২ সালের ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় নিজের তৈরি রোবট ‘করোনা সেবক’ দিয়ে বরিশাল বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। এছাড়া অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে তিনি ‘রিবা’ ও ‘অগ্নি’ নামে দুইটি যন্ত্র তৈরি করেন, যা তখন সারাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

তার এসব আধুনিক উদ্ভাবনে কৃষক-গৃহিণী বাবা-মায়ের অনুভূতি প্রসঙ্গে জানিয়ে ইরান সরদার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পিতা–মাতার সহায়তায় জীবনে এগিয়ে চলা। তবে উনারা মাঝে মাঝে বলেন, এসব করতে গেলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে। নিজের হাতখরচের টাকা বা ব্যক্তিগত টাকা দিয়ে এসব করছি, সামনে ভালো কিছু করার জন্য তো কারও, বিশেষত সরকারি সহায়তা পাচ্ছি না। তবে কাজগুলো দেখলে উনারা খুশি হন। এগুলো ভালো লাগে, তাই এগিয়ে যাচ্ছি।

দেশ প্রযুক্তিতে পিছিয়ে রয়েছে দাবি করে ইরান বলেন, আমাদের দেশের যারা উদ্ভাবক কিংবা গবেষক আছেন, তারা নিজ অর্থায়নে কাজ করেন। গবেষণায় সরকারি তেমন সহায়তা পাওয়া যায় না। এজন্যই আমাদের দেশ প্রযুক্তিতে পিছিয়ে রয়েছে।

ইরান সরদারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, বাংলাদেশের রোবোটিক্স খাতকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরা এবং দেশের যেসব সমস্যার এখনও কার্যকর সমাধান হয়নি, সেগুলো প্রযুক্তির মাধ্যমে কীভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা এবং সমাধানের চেষ্টা করা তার লক্ষ্য।