রোগাক্রান্ত গাছের চিকিৎসায় ‘গাছ ডাক্তার’
গাছের ডাক্তার! বিষয়টা শুনে হয়তো অনেকে অবাক হয়ে যাবেন। সাধারণত সবাই তো মানুষের ডাক্তার কিংবা পশুর ডাক্তার কথার সাথে পরিচিত। আমাদের দেশে গাছের ডাক্তার একটি নতুন শব্দ মোটামুটি। গাছের ডাক্তার হচ্ছেন তারাই যারা মানুষ ডাক্তারদের মতো গাছের খুটি-নাটি থেকে শুরু করে গাছের পরিচর্যা, রোগ-বালাই, বপন ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখেন। আর এ রকম একজন গাছের ডাক্তার দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী কৃষিবিদ মো. নাজমুল হাসান।
দেশে মানুষ কিংবা পশু-পাখির অসুখ হলে আমরা সচরাচর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই। ছুটে যাই হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে। মানুষ-পশু পাখির জন্য এদেশে হাসপাতাল, ক্লিনিক গড়ে উঠলেও গাছ-গাছালির রোগব্যাধি নিরাময়ের জন্য নেই কোন হাসপাতাল কিংবা গাছের ডাক্তার। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নাজমুলদের গবেষণা লব্ধ জ্ঞান থেকে গাছের পরিচর্যায় কাজ করে যাচ্ছে তাদের টিম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু তরুণ উদ্যমী শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্লান্টস ডক্টর বা গাছের ডাক্তার নামে গড়ে তুলেছেন একটি অনলাইন প্লাটফর্ম। গাছের ডাক্তার নামে ফেসবুক পেজ, গ্রুপ, ইউটিউব চ্যানেল ও ওয়েবসাইট তৈরি করে সকলের মাঝে ‘কৃষি তথ্যের ফেরিওয়ালা’ হিসাবে হয়ে উঠেছেন বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে ছাঁদ বাগানীদের কাছে পেয়েছেন ব্যাপক জনপ্রিয়তা। গাছ সম্পর্কিত যেকোন সমস্যা নিয়ে ফেসবুক গ্রুপ বা পেজে পোস্ট দিলেই মিলছে সমাধান তাদের নিজেদের থেকে।
ইউটিউবে ‘প্লান্টস ডক্টর বা গাছের ডাক্তার’ নামে চ্যানেল খুলে সেখানে কৃষি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যের ভিডিও আপলোড করে দিচ্ছেন বিভিন্ন গাছের পরিচর্যা, রোগ-বালাই নিরাময়সহ নানা সমস্যার সমাধান। ভুট্টা, ধান, আলু, গম, বেগুন, শিম, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ রোগ বালাই বিষয়ে ভিডিওর মাধ্যমে তারা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
এছাড়া দিনাজপুরের আম, লিচু, কাঁঠাল পেয়ারা নারিকেলসহ যেসব ফলের ব্যাপক উৎপাদন হয় সেসব ফলের রোপণ পরিচর্যা ও বিভিন্ন রোগবালাইয়ের ব্যাপারেও তারা ভিডিওর মাধ্যমে সহায়তার ব্যবস্থা করে থাকেন তারা।
প্লান্ট ডক্টরসের প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হোসেন জানান, বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। দেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে এখন স্মার্টফোন। আজকাল কমবেশি সবাই ইন্টারনেট, ফেসবুক ব্যবহার করছে। কেউ যদি আমাদের গ্রুপে বা পেজে মেসেজ দিয়ে কোন বিষয়ে সমাধান চায়, আমরা তার বিনামূল্যে সমাধান দেয়ার চেষ্টা করি।
তিনি বলেন, আমরা সকল কৃষককে টার্গেট করে ভিডিও কনটেন্ট তৈরির কাজ অব্যাহত রেখেছি। প্রতিটি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে এসব তথ্য আরো ব্যাপকভাবে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেয়া হলে আমি মনে করি ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যাবে। এতে করে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। কৃষকের সচেতনতা বাড়াতে পারলে তার উৎপাদন মুখী শ্রম বিনিয়োগ করতে সহজ হবে।