ডায়াবেটিসের পূর্বাভাস দেবে এআই, বাংলাদেশি ২ বিজ্ঞানীর আবিষ্কার
স্বাস্থ্য খাতের স্টার্টআপ জেনোফ্যাক্স নতুন নতুন সব প্রযুক্তির মাধ্যমে নানা রোগের আক্রান্তের পূর্বাভাস ও সতর্কতা সমাধান নিয়ে এসেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইকে কাজে লাগিয়ে এমন প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন ২ বিজ্ঞানী।
মানুষের সুস্থতা নিশ্চিতের জন্য এএলইএইচ-এমডি নামের এই প্রযুক্তি তৈরি করেছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান জেনোফ্যাক্স। এটি কোনো ব্যক্তির অন্ত্রে থাকা অণুজীবের (মাইক্রোবায়োম) ওপর নজর রাখে এবং প্রাথমিক কিছু লক্ষণ দেখে রোগে আক্রান্তের পূর্বাভাষ দেয়।
দুই বাংলাদেশি বিজ্ঞানী জাহাঙ্গীর আলম ও ডা. আবেদ চৌধুরী জেনোফ্যাক্স প্রতিষ্ঠা করেন। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক জাহাঙ্গীর আলম ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন করেন। সে বছরই তিনি টেলেঅস নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন যা অভিনব প্রযুক্তিগত সমাধান দিয়ে থাকে।
জেনোফ্যাক্সের অপর প্রতিষ্ঠাতা স্বনামধন্য জিনপ্রযুক্তিবিদ, লেখক ও বিজ্ঞানী ডা. আবেদ চৌধুরী। প্রাণীবিজ্ঞান ও জিনতত্ত্বে তার রয়েছে ৪০ বছরের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতক আবেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ, ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং ফ্রান্সের একোল নর্মাল সুপেরিয়রের মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা ও গবেষণা করেছেন।
আরও পড়ুন: রাবি শিক্ষার্থীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মোমের বুলেট’
আমাদের অন্ত্রে লাখো অণুজীব বা মাইক্রোব বসবাস করে, যারা 'আন্ত্রিক মাইক্রোবায়োম' নামে পরিচিত। অণুজীবের সংখ্যায় অসামঞ্জস্য দেখা গেলে তা 'ডিসবায়োসিস' বলে গণ্য হয় যা স্থূলতা, ডায়াবেটিস, আইবিএস (ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম), আইবিডি (প্রদাহজনিত পাকস্থলীর রোগ) এর মতো জটিল রোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। জেনোফ্যাক্স এই ধারণাকে ব্যবহার করে বিপাক-সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াগুলোর পূর্বাভাষ তৈরি করে এবং মল-মূত্রের নমুনার ডিএনএ সিকুয়েন্সিং ও বিগ ডেটা বিশ্লেষণ করে রোগীদের ব্যক্তিগত পরামর্শ দিয়ে থাকে।
প্রথাগতভাবে, বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত রোগে আক্রান্ত হলে বা কোন উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য যান। কিছু টিকা নেওয়া ছাড়া রোগ প্রতিরোধে বা স্বাস্থ্য-সুরক্ষার বিষয়ে খুব একটা উদ্যোগ নেয় না।
জেনোফ্যাক্সের প্রতিষ্ঠাতারা জানান, তারা এই প্রথা ভাঙতে চান। জেনোফ্যাক্সের প্রযুক্তির বিশেষত্ব হল, এটি অন্ত্রের অণুজীব ও মানুষের বিপাকপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জাতিসত্ত্বা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের যোগসূত্র ঘটিয়েছে। যার ফলে এর অনুমান ও পূর্বাভাষ দেওয়ার সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারে করে করা কিছু প্রাথমিক গবেষণা থেকে অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের ডিসবাওসিসের সঙ্গে প্রোস্টেট ও অন্যান্য ক্যানসারের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া গেছে।
২০২৩ এর জুনে যাত্রা শুরুর পর, প্রতিষ্ঠানটি বেশ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ২১ সেপ্টেম্বর এক বিটুবি (বিজনেস টু বিজনেস) অংশীদার নিয়ে জেনোফ্যাক্স যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে নিজেদের প্রথম সেবা চালু করে। এছাড়া, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও নেদারল্যান্ড সরকারের সঙ্গেও প্রতিষ্ঠানটি অংশীদারিত্বের বিষয়ে আলোচনা করেছে। ২০২৯ সালের মধ্যে মার্কিন পুঁজিবাজার নাসডাকে নিবন্ধিত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে জেনোফ্যাক্স।