৩০ মে ২০২৩, ২০:৪৩

সবজির খোসা থেকে রান্নার উপোযোগী বায়োগ্যাস ‍উদ্ভাবন

সবজির খোসা থেকে রান্নার উপোযোগী বায়োগ্যাস ‍উদ্ভাবন  © টিডিসি ফটো

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে জ্বালানী তেলের সংকটের মতো সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা আরেকবার মনে করিয়ে দেয়, নবায়নযোগ্য শক্তিই হলো ভবিষ্যৎ। অন্যতম এক নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হলো বায়োগ্যাস। আর এই বায়োগ্যাসের মূল উপাদান হলো মিথেন। এই মিথেনই আগুনকে জ্বলতে সাহায্য করে। এ কাজে সহায়তার অংশ হিসেবে সবজির খোসা থেকে রান্নার উপোযোগী বায়োগ্যাস ‍উদ্ভাবন করেছেন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়টির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী শোয়াইব জানান, আমাদের ফাইনাল ইয়ার থিসিস ছিলো আইইউটি ক্যাফেটেরিয়ার ফেলে দেয়া বিভিন্ন সবজির খোসা থেকে মিথেন উৎপাদন করা। যাতে করে পরবর্তীতে বড় আকারে একটি বায়োগ্যাস প্লান্ট বসিয়ে গ্যাস উৎপাদন করে রান্নার কাজে ব্যাবহার করা যায়।

‘‘এই প্রজেক্টটি একটি ফান্ডেড প্রজেক্ট। আইইউটি থেকে প্রায় ৩.৫ লাখ টাকা দেয়া হয় এই প্রজেক্টের জন্য। এই প্রজেক্টের পেছনে সময় লেগেছে ১.৫ বছরের ও বেশি।’’
 
এক্সপেরিমেন্টাল সেট আপ নিয়ে দলের সদস্যরা বলেন, আমরা ২৫টার মতো সেটআপ করি। সেখান থেকে বেশকিছু ভালো ফলাফল পেয়েছি। আমরা পেপে, কুমড়া, লাউয়ের খোসা থেকে গ্যাস উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। সাধারণত ৬০%-এর উপর মিথেন থাকলে সেটি দিয়ে আগুন জ্বালানো সম্ভব।

আরও পড়ুন: কাঁঠাল থেকে মুখরোচক জাম-চাটনি-চিপস উদ্ভাবন

তারা জানান, আমাদের বেশ কয়েকটি সেটআপ থেকে ৬০%-এর উপরে এবং একটি সেটাআপ থেকে ৯০%-এর মতো মিথেন পাওয়া গেছে। যেটি খুবই ভালো কোয়ালিটি বায়োগ্যাস এবং রিসার্চ পেপারেও এমন ফলাফল পাওয়া খুবই দুর্লভ।

এ প্রজেক্টে মেম্বার হিসেবে ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৮তম ব্যাচের শোয়াইব হাসান, মিনহাজুল আলম, আফসানা আক্তার, ইমতিয়াজ উদ্দিন। আর প্রজেক্ট সুপারভাইজার হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক ডক্টর হামিদুর রহমান।
 
ফ্লেম টেস্ট: মিথেনের কারণে আগুনের নিল শিখা দৃশ্যমান

এই বায়োগ্যাসকে কাজে লাগিয়ে যেমন আইইউটির ক্যাফেটেরিয়ার বর্জ্যকে জ্বালানীতে রুপান্তর করা সম্ভব, তেমনই বাসাবাড়ির রান্নাঘরেও মিনি বায়োগ্যাস প্লান্ট বসিয়ে জ্বালানী খরচ কমানো যেতে পারে। এমনকি এই বায়োগ্যাসকে বেশি আয়তনের স্টোরেজ ট্যাংকে জমিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনও সম্ভব।

প্রজেক্টের সুপারভাইজার অধ্যাপক ড. হামিদুর রহমান জানান, সারাবিশ্ব জ্বালানি ও জ্বালানি সম্পদের ঘাটতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। প্রচলিত জ্বালানি সম্পদের নির্দিষ্ট রিজার্ভ আছে। যা অদূর ভবিষ্যতে নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। অতএব, আমাদের শক্তির চাহিদা মেটানোর জন্য বিকল্প পথ খুঁজতে হবে।

অধ্যাপক হামিদুর রহমান বলেন, আমি নিজে এবং আমার স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর গবেষকদের সাথে নিয়ে খাদ্য বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদনের জন্য একটি সময় উপযোগী উদ্যোগ নিয়েছি। ল্যাবরেটরি স্কেলে একটি সফল গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। যা আইইউটির ভেতরে মাঝারি স্কেলের সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করার অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই প্রকল্পের ভবিষ্যত অনেক আশাব্যঞ্জক হবে।