১০ জুন ২০২১, ২৩:২৬

মিরপুর কলেজের অধ্যক্ষের দুর্নীতির তদন্ত করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

মিরপুর কলেজ  © ফাইল ছবি

দুর্নীতি, তহবিল তসরুপ, অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে মিরপুর কলেজের অধ্যক্ষ মো. গোলাম ওয়াদুদের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (১০ জুন) মিরপুর কলেজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছে মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) তদন্ত দল। এর আগে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ডিআইএ, দুদকসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক অধ্যক্ষসহ কয়েকজন শিক্ষক।  

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির (সাবেক) নাম ব্যবহার করে প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে আসছেন অধ্যক্ষ। 
 
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মো. গোলাম ওয়াদুদ বলেন, তদন্ত চলছে। অভিযোগের ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তাই কথা বলবেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডিআইএ তদন্ত দলের কর্মকর্তা ড. এনামুল হক বলেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম, অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত করে শিগগিরই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

শিক্ষকদের অভিযোগ, অধ্যক্ষের নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল অবৈধ। কলেজের আর্থিক উন্নয়ন, ক্রয়, শিক্ষক নিয়োগসহ এমন কোনো খাত নেই যেখানে অধ্যক্ষ দুর্নীতি করেননি। তার সীমাহীন দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অযোগ্যতার কারণে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক অধ্যক্ষ ইসহাক হোসেনকে অবসর দেখিয়ে গত ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে গভর্নিং বডির অনুমোদন ছাড়াই সিনিয়র আট শিক্ষককে ডিঙিয়ে তৎকালীন সভাপতি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন মো. গোলাম ওয়াদুদকে। 

এক্ষেত্রে বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরির রেগুলেশন ১৯৯৪ এর নীতিমালা ভঙ্গ করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগের পর সরকারি অংশের বাইরে কলেজের ফান্ড থেকে মাসে অর্ধ লক্ষাধিক টাকা বেতন নিতেন গোলাম ওয়াদুদ। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থেকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিও অনিয়ম করেই ২০১২ সালের ৫ মে গভর্নিং বডির সভায় বিবিধ হিসেবে অনুমোদন করা হয়।

অধ্যক্ষ গোলাম ওয়াদুদ উচ্চ আদালতের রায় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে কলেজ পরিচালনা করেছেন। ২০১২ সাল থেকে কলেজ পরিচালনা পর্ষদে শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত কোনো শিক্ষক প্রতিনিধি নেই বলেও অভিযোগ শিক্ষকদের।

গত বছরের ২৭ জুলাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোতে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে সংসদ সদস্যরা থাকতে পারবেন না মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। হাইকোর্টের রায়ের আলোকে এ সিদ্ধান্ত জানায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। একই বিজ্ঞপ্তিতে বিভাগ পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনারকে কলেজের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

কিন্তু এরপরও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারকে বাদ দিয়ে উচ্চ আদালতের রায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে অধ্যক্ষ সাবেক সভাপতির (সংসদ সদস্য) মাধ্যমে গত বছরের জুলাই ও আগস্টের বেতন স্বাক্ষর করান বলে অভিযোগ রয়েছে। 

গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়। কিন্তু অধ্যক্ষ গোলাম ওয়াদুদ সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন আটকে রাখেন। বিষয়টি অবহিত হলে গত নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কলেজ অধ্যক্ষ বরাবর চিঠি পাঠায়। চিঠিতে সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করে তিন দিনের মধ্যে বেতন পরিশোধের তাগিদ দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধ্যক্ষের ক্ষমতার যথেচ্ছ অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা ও হুমকি-ধমকিতে সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারিরা তটস্থ থাকেন। কিন্তু চাকরি হারানোর ভয়ে কেউ কোনো প্রতিবাদ করেন না। কলেজের সাবেক সভাপতি (সংসদ সদস্য) সম্প্রতি মারা যাওয়ার পর ভুক্তভোগী শিক্ষকরা এর প্রতিকার চেয়ে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেছেন।

মিরপুর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ইসহাক হোসেন বলেন, বর্তমান অধ্যক্ষের ধারাবাহিক অনিয়ম, দুর্নীতিতে কলেজটি প্রায় ধ্বংসের পথে। আমরা চাই সঠিক তদন্ত করে প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা হোক।