সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে স্বস্তি, ক্লাসে ফিরতে চান এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা
করোনার প্রভাবে অনেকটা এলোমেলো হয়ে গেছে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই তৈরি হয়েছে লার্নিং গ্যাপ। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এসএসসি ও এইচএসসির সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে শিক্ষার্থীদের মনে এক ধরনের স্বস্তি লক্ষ্য করা গেছে। তবে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর মাঝে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও।
যেসব শিক্ষার্থীরা ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দেবে তারা নবম ও একাদশ শ্রেণীতে মাত্র আড়াই মাসের মতো ক্লাস করেছেন বলে জানা গেছে। তারা এও বলেছেন, এখন যত দ্রুত সম্ভব ক্লাসে ফিরতে চান। এ জন্য দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি তাদের।
তবে এসব শিক্ষার্থীকে অনলাইন ক্লাস ও এসাইনমেন্টের উপর মূল্যায়ন করে পরের ক্লাসে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতে পারেনি বলে জানিয়েছেন একাধিক বেসরকারী সংস্থা। এ বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এইচএসসি পরিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। দিনের পর দিন হতাশা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা। সারাক্ষণ মাথায় ঘোরে আমরাও কি অটোপাস পাবো। কীভাবে আমাদের পরীক্ষা হবে। অবশেষে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এইচএসসি সিলেবাসকে সংক্ষিপ্ত করেছে। এটা আমাদের উদ্বেগ কমিয়েছে। এখন আমরা গোছালোভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে সক্ষম হব। আশা রাখি অতিদ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত হবে। আমরা পরীক্ষায় বসতে পারবো।
জাফরপুর সিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থী সারমিন সুলতানা বলেন, দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যালয় বন্ধ থাকার ফলে একদিকে যেমন পড়ালেখা ব্যাহত হয়েছে অপরদিকে শিক্ষর্থীদের মাঝে বেড়েছে দুশ্চিন্তা। তবে এখন সিলেবাস ছোট করায় আমরা কিছুটা হলেও চিন্তামুক্ত। সিলেবাস কমানোর পাশাপাশি যদি সপ্তাহে কম করে ২/৩ দিন ক্লাসে যাওয়ার সুযোগ করা যেত তাহলে হয়তো আমরা বেশি উপকৃত হতাম।
তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী সাকিব হোসেন ইমন বলেন, দীর্ঘদিন ক্লাস পড়াশুনার বাইরে আমরা। একাদশ শ্রেণীতে খুব বেশিদিন ক্লাস করার সুযোগ হয়নি। ইন্টারনেটের দুর্বল নেটওয়ার্ক দিয়ে অনলাইন ক্লাস ও সেভাবে করতে পারছি না। হতশার সাগরে নিমজ্জিত ছিলাম। তবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস হাতে পেয়ে কিছুটা হলেও সস্তির নিঃশ্বাস পেয়েছি। এবার পরীক্ষার জন্য রুটিন অনুযায়ী প্রস্তুতি পারব।
খুলনা জিলা স্কু্লের এসএসসি পরীক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস হাতে পেয়েছি। পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হবে। তবে ক্লাসে ফিরতে চাই। দীর্ঘদিন ক্লাসের বাইরে আমরা। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার আহবান জানাই।
স্কুল-কলেজ খোলার তারিখ পেছাতে পারে, ইঙ্গিত জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর
কাজী আলাউদ্দিন ডিগ্রী কলেজের ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক রামপ্রসাদ ঘোষ বলেন, ‘এসএসসি এইচএসসির সিলেবাস ১০০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে ৭০ শতাংশ করা হয়েছে। আমি মনে করি সিলেবাস ৫০ শতাংশ সংক্ষিপ্ত করা উচিত ছিল। তাহলে শিক্ষার্থীরা তাদের সিলেবাসের বিষয়গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারত। এ অবস্থায় অধিক ক্লাস নিয়ে সিলেবাস শেষ করতে হবে। কিন্তু দুর্বল নেটওয়ার্ক দিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস নিয়ে সিলেবাস শেষ করা সম্ভব নয়। আর শেষ করলেও শিক্ষার্থীরা বুঝতে ব্যর্থ হবে।’
পাইকগাছা হাইস্কুলের গণিত বিভাগের শিক্ষক এস এম রিফাত দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সিলেবাসে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে এটি ভালো উদ্যোগ। তবে নিয়মিত অনলাইনে ক্লাস নিয়ে সিলেবাস শেষ করতে হবে এবং ক্লাসে উপস্থিত হওয়ার তাগিদ দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। না হলে লার্নিং গ্যাপে পড়বে শিক্ষার্থীরা। অনলাইনে ক্লাস বাংলাদেশী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য অনূকূলে নয়। তাই স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের দ্রুত ক্লাসে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে।’
এদিকে, গত ২৬ মে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, ২০২১ সালে এসএসএসি পরীক্ষার্থীরা ৬০ দিন এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ৮৪ দিন ক্লাসের পর পরীক্ষায় অংশ নেবে। ২০২২ সালের পরীক্ষার্থীরা যথাক্রমে ১৫০ দিন ও ১৮০ দিন ক্লাস করবে। তারপর পরীক্ষায় অংশ নেবে।